০১:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

আট ইস্যুতে ‘প্যানিকড’ বিনিয়োগকারীরা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২
  • / ১০৩৪৭ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

এইচ কে জনি: পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। চলমান বাজার পরিস্থিতিতে বড় এবং ব্যক্তিশ্রেনীর বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে সরে এসেছেন। পরিণতিতে স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা প্যানিকড হয়ে হাতে থাকা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।

একাধিক বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মুলত আট কারণে বাজারে ধারাবাহিক দরপতন হচ্ছে। সেগুলো হলো- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা-সমালোচনা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নেয়া লোডশেডিংয়ের পদক্ষেপ, সব খাতেই মূল্যস্ফীতির রেকর্ড উত্থান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে আসা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং সর্বোপরি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিশেষ করে সারাদেশে এলাকা ভিত্তিক লোড শেডিং ঘোষণা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। লোডশেডিং ঘোষণার দিন বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। পতনের ধারাবাহিকতা মঙ্গলবারও (১৯ জুলাই) অব্যাহত ছিল। এদিন সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেনও। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন সাড়ে ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩.৭১ পয়েন্ট বা ১.০২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৫৩.১৭ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১১.৫৭ পয়েন্ট বা ০.৮৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২.৫৯ পয়েন্ট বা ১.০১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৮.০৫ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২১৩.২৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। ডিএসইর আজকের লেনদেন এক বছর তিন মাস ১৪ দিন বা ৩০৯ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ২৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

ডিএসইতে আজ ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১টির বা ৫.৫০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৪৪টির বা ৯০.০৫ শতাংশের এবং ১৭টির বা ৪.৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২১৪.১২ পয়েন্ট বা ১.১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ০৬৬.৮১ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ২৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর। আজ সিএসইতে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে পরপর দুই দিন বড় ধসই বলে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে সরকারের পদক্ষেপ এতে আরও ঘি ঢেলেছে।

গতকাল প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের সবগুলো কোম্পানি দর হারায়। তবে আজকেও খাতগুলোর দুই-একটি করে কোম্পানির দর বেড়েছে।

ছোট খাতগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, সিরামিকস, টেলিকমিউনিকেশনস, কাগজ ও আনুষঙ্গিক, পাট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে গতকালের মতোই শতভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে।

জানা যায়, ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ডলার সংকটের সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক বছরে সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করার পর রিজার্ভ নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও এই মুহূর্তে লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে। অর্থাৎ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে পণ্য কিনে আনতে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুঁজিবাজার ধসের কারণ হলো রিটেইল বেসড মার্কেট। মানুষ প্যানিকড হয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, মানি মার্কেট হার্ট হয়েছে। সাপ্লাই কম। তার ওপর মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ কমে গেছে। রিজার্ভের যে অঙ্কের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিদ্যুতের ব্যাপারে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেটাও মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এই বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে প্যানিক সেল বাড়িয়েছে। আর এসব কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেল প্রেসার বাড়িয়েছে।

ঢাকা/এইচকে

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

আট ইস্যুতে ‘প্যানিকড’ বিনিয়োগকারীরা

আপডেট: ০৬:৪৩:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২

এইচ কে জনি: পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। চলমান বাজার পরিস্থিতিতে বড় এবং ব্যক্তিশ্রেনীর বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে সরে এসেছেন। পরিণতিতে স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা প্যানিকড হয়ে হাতে থাকা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন।

একাধিক বাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, মুলত আট কারণে বাজারে ধারাবাহিক দরপতন হচ্ছে। সেগুলো হলো- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা-সমালোচনা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নেয়া লোডশেডিংয়ের পদক্ষেপ, সব খাতেই মূল্যস্ফীতির রেকর্ড উত্থান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কমে আসা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং সর্বোপরি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বিশেষ করে সারাদেশে এলাকা ভিত্তিক লোড শেডিং ঘোষণা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। লোডশেডিং ঘোষণার দিন বড় পতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। পতনের ধারাবাহিকতা মঙ্গলবারও (১৯ জুলাই) অব্যাহত ছিল। এদিন সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেনও। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন সাড়ে ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩.৭১ পয়েন্ট বা ১.০২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৫৩.১৭ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১১.৫৭ পয়েন্ট বা ০.৮৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২.৫৯ পয়েন্ট বা ১.০১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৮.০৫ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২১৩.২৩ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। ডিএসইর আজকের লেনদেন এক বছর তিন মাস ১৪ দিন বা ৩০৯ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ২৩৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।

ডিএসইতে আজ ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১টির বা ৫.৫০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৪৪টির বা ৯০.০৫ শতাংশের এবং ১৭টির বা ৪.৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২১৪.১২ পয়েন্ট বা ১.১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ০৬৬.৮১ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৯টির, কমেছে ২৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির দর। আজ সিএসইতে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে পরপর দুই দিন বড় ধসই বলে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে সরকারের পদক্ষেপ এতে আরও ঘি ঢেলেছে।

গতকাল প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিমা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের সবগুলো কোম্পানি দর হারায়। তবে আজকেও খাতগুলোর দুই-একটি করে কোম্পানির দর বেড়েছে।

ছোট খাতগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, সিরামিকস, টেলিকমিউনিকেশনস, কাগজ ও আনুষঙ্গিক, পাট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে গতকালের মতোই শতভাগ কোম্পানির দরপতন হয়েছে।

জানা যায়, ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দেশে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ডলার সংকটের সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক বছরে সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করার পর রিজার্ভ নেমে গেছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নানা পদক্ষেপে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমলেও এই মুহূর্তে লেনদেনের ভারসাম্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে। অর্থাৎ রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে যে আয় হয়, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে পণ্য কিনে আনতে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুঁজিবাজার ধসের কারণ হলো রিটেইল বেসড মার্কেট। মানুষ প্যানিকড হয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের মতে, মানি মার্কেট হার্ট হয়েছে। সাপ্লাই কম। তার ওপর মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভ কমে গেছে। রিজার্ভের যে অঙ্কের কথা বলা হচ্ছে, সেটা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিদ্যুতের ব্যাপারে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেটাও মানুষ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এই বিষয়গুলো সমন্বিতভাবে প্যানিক সেল বাড়িয়েছে। আর এসব কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেল প্রেসার বাড়িয়েছে।

ঢাকা/এইচকে