০১:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নাকচ করে প্রতিরোধের নির্দেশ দেয় শামিন

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
  • / ১০২৮৫ বার দেখা হয়েছে

জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের পর আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয় পাহাড়ে তাদের আশ্রয়দাতা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান নাথান বম। কিন্তু হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ আত্মসমর্পণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল ‘শারক্বিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা শামীন মাহফুজ ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান জানান, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকেই শামিন মাহফুজ অত্যন্ত মেধাবী ছিল। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করে, এরপর রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাকে ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর অন্য একটি কলেজে ভর্তি হয়েও সে মেধার পরিচয় দেয়। এইচএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে সপ্তম স্থান অর্জন করে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শামিন মাহফুজ তার বড় ভাইয়ের ছেলের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে যায়। যে সংগঠনটি পরে আনসার আল ইনলাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৭ সাল থেকেই শামিন মাহফুজ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রহমানীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসে। সে সময় আরেকটি বিদেশি চরিত্র বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে আভির্ভূত হয় বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই, সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা শামিন মাহফুজের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবো।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঢাবিতে পড়াকালীন সময়েই শামিন মাহফুজ পাহাড়ে ক্যাম্পের পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী সে পাহাড়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। এরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে এনরোলমেন্ট হয়। পাহাড়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ছিল তার গবেষণার বিষয়। ইচ্ছা করেই সে এই বিষয়টি নেয়, যাতে পাহাড়ে যেতে পারে এবং সেখানে নিরাপদ আস্তানা তৈরি করতে পারে।’

আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঈদের ছুটি ঘোষণা

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শামিন মাহফুজকে ২০১১ সালে বিজিবি গ্রেফতার করেছিল। জেল থেকে বেরিয়ে একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। ২০১৪ সালে ডিবি আবারও তাকে গ্রেফতার করে, এরপর সে কাশিমপুর কারাগারে ছিল। সেখানে থাকাকালীন সে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রথম পরিকল্পনা করে। সেখানে থাকা অবস্থায় আটক হুজি এবং জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসে শামিন মাহফুজ। তখন রক্সিও জেলখানায় ছিল। সে সময় কারাগারে থাকা জঙ্গি নেতারা জানতো যে— শামিন মাহফুজ এবং রক্সি আগেই জেল থেকে বের হবে। তাই তাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি এবং ২০১৮ সালে শামিন মাহফুজ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। এরপর থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু তখনও সংগঠনের নাম ঠিক করা হয়নি। তবে তারা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকে। রক্সি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং শামিন মাহফুজ পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১৯ সালে রক্সিকে সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।’

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘ঢাবিতে থাকাকালীন সময় থেকেই শামিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কুকি চিনের প্রধান নাথান বম। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নাথান বমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে সে। তখনই নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে গেছে শামিন। ২০১৯ সালে নাথান বমকে জঙ্গি সংগঠন তৈরির কথাটি জানায় এবং সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতের জন্য তাকে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব দেয় সে।

২০২০ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বসে কুকি চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠন শারক্বিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয়। আমরা শামিনের কাছ থেকে হাতে লেখা দুই পৃষ্ঠার স্মারকটি উদ্ধার করতে পেরেছি। সেখানে কুকি চিন কর্তৃক জঙ্গি সংগঠনটিকে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। তখন থেকেই কুকি চিনের আওতায় তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে সিলেট থেকে ৬ তরুণ নিখোঁজ হয়। এপ্রিলে প্রথম ১২ জনকে নিয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। কুকি চিনের ক্যাম্পের পাশেই কেডিসি নামে জঙ্গিদের ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ৩০ জনের বেশি তরুণ নিখোঁজ হয়। তখনই আমরা এ সংগঠনের তৎপরতার বিষয়ে অবগত হই।’

রক্সি গ্রেফতারের পর মূল ব্যক্তি হিসেবে তমালকে আমির হিসেবে নিয়োগ দেয় শামিন মাহফুজ। ২০২২ সালে সুরা কমিটি গঠন করে বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। তাদের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যারা কাজ করে, তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।’ তবে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।

সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার শামিন মাহফুজের স্ত্রী নাজনীন আগে ছিল আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় ইজাজ মারা যায়। তার আগে ইজাজ যখন পাকিস্তান চলে যায়, তখন সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করে শামিন। তার স্ত্রী নাজনীনও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য হিসেবে নারীদের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিল।

ঢাকা/এসএম

শেয়ার করুন

x

আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নাকচ করে প্রতিরোধের নির্দেশ দেয় শামিন

আপডেট: ০৫:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩

জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের পর আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেয় পাহাড়ে তাদের আশ্রয়দাতা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান নাথান বম। কিন্তু হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ আত্মসমর্পণের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল ‘শারক্বিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা শামীন মাহফুজ ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান জানান, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকেই শামিন মাহফুজ অত্যন্ত মেধাবী ছিল। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জন করে, এরপর রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাকে ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর অন্য একটি কলেজে ভর্তি হয়েও সে মেধার পরিচয় দেয়। এইচএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে সপ্তম স্থান অর্জন করে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শামিন মাহফুজ তার বড় ভাইয়ের ছেলের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে যায়। যে সংগঠনটি পরে আনসার আল ইনলাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৭ সাল থেকেই শামিন মাহফুজ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রহমানীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসে। সে সময় আরেকটি বিদেশি চরিত্র বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে আভির্ভূত হয় বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই, সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা শামিন মাহফুজের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবো।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ঢাবিতে পড়াকালীন সময়েই শামিন মাহফুজ পাহাড়ে ক্যাম্পের পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী সে পাহাড়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। এরমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে এনরোলমেন্ট হয়। পাহাড়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী ছিল তার গবেষণার বিষয়। ইচ্ছা করেই সে এই বিষয়টি নেয়, যাতে পাহাড়ে যেতে পারে এবং সেখানে নিরাপদ আস্তানা তৈরি করতে পারে।’

আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঈদের ছুটি ঘোষণা

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শামিন মাহফুজকে ২০১১ সালে বিজিবি গ্রেফতার করেছিল। জেল থেকে বেরিয়ে একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। ২০১৪ সালে ডিবি আবারও তাকে গ্রেফতার করে, এরপর সে কাশিমপুর কারাগারে ছিল। সেখানে থাকাকালীন সে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রথম পরিকল্পনা করে। সেখানে থাকা অবস্থায় আটক হুজি এবং জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসে শামিন মাহফুজ। তখন রক্সিও জেলখানায় ছিল। সে সময় কারাগারে থাকা জঙ্গি নেতারা জানতো যে— শামিন মাহফুজ এবং রক্সি আগেই জেল থেকে বের হবে। তাই তাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি এবং ২০১৮ সালে শামিন মাহফুজ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। এরপর থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু তখনও সংগঠনের নাম ঠিক করা হয়নি। তবে তারা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকে। রক্সি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং শামিন মাহফুজ পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১৯ সালে রক্সিকে সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।’

সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘ঢাবিতে থাকাকালীন সময় থেকেই শামিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কুকি চিনের প্রধান নাথান বম। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই নাথান বমের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে সে। তখনই নাথান বমের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে গেছে শামিন। ২০১৯ সালে নাথান বমকে জঙ্গি সংগঠন তৈরির কথাটি জানায় এবং সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতের জন্য তাকে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব দেয় সে।

২০২০ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে বসে কুকি চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠন শারক্বিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয়। আমরা শামিনের কাছ থেকে হাতে লেখা দুই পৃষ্ঠার স্মারকটি উদ্ধার করতে পেরেছি। সেখানে কুকি চিন কর্তৃক জঙ্গি সংগঠনটিকে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ ছিল। তখন থেকেই কুকি চিনের আওতায় তাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালে সিলেট থেকে ৬ তরুণ নিখোঁজ হয়। এপ্রিলে প্রথম ১২ জনকে নিয়ে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। কুকি চিনের ক্যাম্পের পাশেই কেডিসি নামে জঙ্গিদের ক্যাম্পটি পরিচালিত হয়। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বসেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ৩০ জনের বেশি তরুণ নিখোঁজ হয়। তখনই আমরা এ সংগঠনের তৎপরতার বিষয়ে অবগত হই।’

রক্সি গ্রেফতারের পর মূল ব্যক্তি হিসেবে তমালকে আমির হিসেবে নিয়োগ দেয় শামিন মাহফুজ। ২০২২ সালে সুরা কমিটি গঠন করে বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। তাদের মতে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যারা কাজ করে, তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল।’ তবে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকবে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।

সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার শামিন মাহফুজের স্ত্রী নাজনীন আগে ছিল আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় ইজাজ মারা যায়। তার আগে ইজাজ যখন পাকিস্তান চলে যায়, তখন সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করে শামিন। তার স্ত্রী নাজনীনও জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্য হিসেবে নারীদের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিল।

ঢাকা/এসএম