০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

‘আর্থিক জালিয়াতি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন’

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৫০:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০২৪০ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকালে বিএসইসির মাল্টি পারপাস হলে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, বিএসইসির কর্মকর্তাবৃন্দ, পুঁজিবাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ কর্কমর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম International Organization of Securities Commissions (IOSCO) এর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ পালন করে আসছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি কমিশনার মোঃ আলী আকবর। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মত আয়োজিত এই ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ এর এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য হলো ‘Technology and Digital Finance, Artificial Intelligence, and Fraud and Scam Prevention’ যার মধ্যে থেকে বিএসইসি Fraud & Scam Prevention থিমকে বেছে নিয়েছে। IOSCO-র নেতৃত্বে পরিচালিত এই বিশ্বব্যাপী উদ্যোগটি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা জোরদার, আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে, আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাকে আমাদের লক্ষ্যের ভিত্তি হিসেবে দেখি। জালিয়াতি প্রতিরোধ কেবল একটি নিয়ন্ত্রক মূলক কাজ নয় – এটি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা। বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।কিন্তু কেবল শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। আমাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতিও গড়ে তুলতে হবে। জালিয়াতি প্রতিরোধ একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়; এটি একটি যৌথ কর্তব্য।”

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য (Key Note Presentation) উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার এবং আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ। প্রেজেন্টেশনটিতে প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রধান ধরণ বা প্রকারসমূহ, জালিয়াতি সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের বিএসইসির ভিত্তিসমূহ, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, কঠোর বাজার নজরদারি ও সনাক্তকরণ, এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন, উত্তরণ বা উন্নতির জন্য সুপারিশ এবং বিনিয়োগকারীর অন্তর্দৃষ্টি (Investor Insights) ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রেজেন্টেশনে প্রতারণা ও জালিয়াতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (CRO) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। প্যানেল আলোচনায় IOSCO ঘোষিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ ২০২৫ এর প্রধান বার্তাগুলো তুলে ধরা হয় এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন ও দক্ষ বিনিয়োগকারীতে পরিণত করার নিমিত্তে বিএসইসি ও পুঁজিবাজার  সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এসময় কিভাবে প্রতারণা এবং জালিয়াতি রোধ করা যায়, কি ধরণের জালিয়াতি বেশি ঘটছে ও সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়সমূহ এবং বিনিয়োগকারী বা ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, “‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত(amalgamate) করে একটি আইন করা উচিত। একইসাথে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন রুলসকে সহজবোধ্য করে একটি জায়গাতে আনা উচিত। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস পাবে।” তিনি আরো বলেন, “দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কাজ করছে এবং সমস্ত সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত রুলসকে এক জায়গায় আনতেও কাজ চলছে। অনিয়ম ও জালিয়াতি রূখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেই বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্পতম সময়ে বিগত সময়ের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছিল। উক্ত কমিটির পেশকৃত ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে কমিশন ইতোমধ্যে ৭ টি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” আদালতে রিট চলমান থাকায় ও স্থগিতাদেশ থাকায় কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি) প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তথা এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন সম্পন্ন করা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে সরকার ও বিজ্ঞ আদালতসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি ও সহায়তা কামনা করেন তিনি। এছাড়াও দেশের পুঁজিবাজারের কাঠামোগত ও টেকসই সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিতে বিএসইসি কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপক এর ভূমিকা ও দায়িত্বকে আরো সুসংহত করা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য কমিশন কাজ করছে বলে জানান তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ রূখতে বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সকল ব্রোকারদের অসংশোধনযোগ্য সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় এনেছে। তিনি দেশের পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন এবং উন্নত পুঁজিবাজার গড়তে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন।

তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা এবং বিনিয়োগে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তাদের জন্য একটি প্রতারণামুক্ত আধুনিক ও সুরক্ষিত পুঁজিবাজার গড়ার উপর জোর দেন তিনি। দেশে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা আরো ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আগামী ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে DSE, CSE, DBA ও CDBL এর উদ্যোগে ‘Empowering Investors through Emerging Technology & Digital Finance’ শীর্ষক প্রোগ্রাম এবং আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে BICM এর উদ্যোগে ‘Financial Statement Analysis and Its Relevance in Machine Learning-based Stock Price Prediction’ শীর্ষক প্রোগ্রাম আয়োজিত হবে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

‘আর্থিক জালিয়াতি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন’

আপডেট: ১০:৫০:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকালে বিএসইসির মাল্টি পারপাস হলে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, বিএসইসির কর্মকর্তাবৃন্দ, পুঁজিবাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ কর্কমর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম International Organization of Securities Commissions (IOSCO) এর সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ পালন করে আসছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি কমিশনার মোঃ আলী আকবর। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মত আয়োজিত এই ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ এর এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য হলো ‘Technology and Digital Finance, Artificial Intelligence, and Fraud and Scam Prevention’ যার মধ্যে থেকে বিএসইসি Fraud & Scam Prevention থিমকে বেছে নিয়েছে। IOSCO-র নেতৃত্বে পরিচালিত এই বিশ্বব্যাপী উদ্যোগটি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা জোরদার, আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে, আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষাকে আমাদের লক্ষ্যের ভিত্তি হিসেবে দেখি। জালিয়াতি প্রতিরোধ কেবল একটি নিয়ন্ত্রক মূলক কাজ নয় – এটি একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা। বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের শিক্ষিত এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।কিন্তু কেবল শিক্ষাই যথেষ্ট নয়। আমাদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতিও গড়ে তুলতে হবে। জালিয়াতি প্রতিরোধ একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়; এটি একটি যৌথ কর্তব্য।”

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য (Key Note Presentation) উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার এবং আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ। প্রেজেন্টেশনটিতে প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রধান ধরণ বা প্রকারসমূহ, জালিয়াতি সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের বিএসইসির ভিত্তিসমূহ, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, কঠোর বাজার নজরদারি ও সনাক্তকরণ, এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন, উত্তরণ বা উন্নতির জন্য সুপারিশ এবং বিনিয়োগকারীর অন্তর্দৃষ্টি (Investor Insights) ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রেজেন্টেশনে প্রতারণা ও জালিয়াতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) এর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (CRO) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। প্যানেল আলোচনায় IOSCO ঘোষিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ ২০২৫ এর প্রধান বার্তাগুলো তুলে ধরা হয় এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন ও দক্ষ বিনিয়োগকারীতে পরিণত করার নিমিত্তে বিএসইসি ও পুঁজিবাজার  সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এসময় কিভাবে প্রতারণা এবং জালিয়াতি রোধ করা যায়, কি ধরণের জালিয়াতি বেশি ঘটছে ও সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়সমূহ এবং বিনিয়োগকারী বা ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, “‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত(amalgamate) করে একটি আইন করা উচিত। একইসাথে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন রুলসকে সহজবোধ্য করে একটি জায়গাতে আনা উচিত। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস পাবে।” তিনি আরো বলেন, “দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কাজ করছে এবং সমস্ত সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত রুলসকে এক জায়গায় আনতেও কাজ চলছে। অনিয়ম ও জালিয়াতি রূখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেই বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্পতম সময়ে বিগত সময়ের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছিল। উক্ত কমিটির পেশকৃত ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে কমিশন ইতোমধ্যে ৭ টি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” আদালতে রিট চলমান থাকায় ও স্থগিতাদেশ থাকায় কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি) প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তথা এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন সম্পন্ন করা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক্ষেত্রে সরকার ও বিজ্ঞ আদালতসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি ও সহায়তা কামনা করেন তিনি। এছাড়াও দেশের পুঁজিবাজারের কাঠামোগত ও টেকসই সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিতে বিএসইসি কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপক এর ভূমিকা ও দায়িত্বকে আরো সুসংহত করা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য কমিশন কাজ করছে বলে জানান তিনি। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ রূখতে বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সকল ব্রোকারদের অসংশোধনযোগ্য সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় এনেছে। তিনি দেশের পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন এবং উন্নত পুঁজিবাজার গড়তে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন।

তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা এবং বিনিয়োগে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তাদের জন্য একটি প্রতারণামুক্ত আধুনিক ও সুরক্ষিত পুঁজিবাজার গড়ার উপর জোর দেন তিনি। দেশে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা আরো ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে আগামী ৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে DSE, CSE, DBA ও CDBL এর উদ্যোগে ‘Empowering Investors through Emerging Technology & Digital Finance’ শীর্ষক প্রোগ্রাম এবং আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে BICM এর উদ্যোগে ‘Financial Statement Analysis and Its Relevance in Machine Learning-based Stock Price Prediction’ শীর্ষক প্রোগ্রাম আয়োজিত হবে।

ঢাকা/এসএইচ