শ্রমিক আন্দোলনে বন্ধ স্বাধীন গার্মেন্টস, আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যারের অচলাবস্থা
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৬১ কোটি টাকার পাওনা আদায়ে অনিশ্চয়তা! (পর্ব-৩)

- আপডেট: ০৯:৫০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ১০২৫৪ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহু কোম্পানি এখন ‘কমন ম্যানেজমেন্ট’ বা ‘রিলেটেড পার্টি’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক চিত্র সাজানোর প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে। নিয়ম মেনে তৈরি আর্থিক প্রতিবেদনগুলোর ভেতর লুকিয়ে থাকে এমন কিছু তথ্য, যা দেখতে স্বাভাবিক হলেও বাস্তবে আর্থিক অনিশ্চয়তা বা স্বজনপ্রীতিনির্ভর ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো অনেক সময় নিজেদের লাভজনক দেখাতে পারে। যদিও প্রকৃতপক্ষে তাদের নগদ প্রবাহ ও আর্থিক স্থিতি অনেক দুর্বল থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের (৩০ জুন ২০২৪ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৫) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমনই একটি পরিস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে এমন কিছু অস্বাভাবিক রিলেটেড পার্টি লেনদেন দেখা যাচ্ছে, যা ফ্যাব্রিকেটেড বা অতিরঞ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকার পাশাপাশি রিলেটেড পার্টি বা কমন ম্যানেজম্যান্টের কাছ থেকে পাওনা আদায়েরও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষন শুরু করে ‘বিজনেস জার্নাল’-এর অনুসন্ধানী দল। কোম্পানিটির ২০২৩-২৪ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের প্রান্তিক প্রতিবেদনের চুল-চেড়া বিশ্লেষনে বেরিয়ে আসে কাগুজে মুনাফার প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি তারল্য সঙ্কট, অনিয়ন্ত্রিত পাওনা ও এর আদায়ে ধীরগতি/অনিশ্চয়তা, ডিভিডেন্ডের অযৌক্তিকতা ও আর্থিক অসঙ্গতিসহ বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটি নিয়ে বিজনেস জার্নালের করা সাত পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশিত হলো।
কোম্পানিটির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের ৩৩ নং নোটে তথ্যানুযায়ী, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের কমন ম্যানেজমেন্টভুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল অংকের অর্থ বকেয়া দেখিয়েছে। এর মধ্যে স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেডের কাছে ৪৭ কোটি ৩১ লাখ ২৪ হাজার ২০৫ টাকা, এবং আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেডের কাছে ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা পাওনা রয়েছে। অর্থ্যাৎ, মোট ৬১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৮ টাকা সংশ্লিষ্ট পার্টির কাছে আটকে আছে। কিন্তু এই পাওনা আদায়ের জন্য কোনো সুদ, সময়সীমা (ক্রেডিট পিরিয়ড), সিকিউরিটি বা বোর্ড/অডিট কমিটির অনুমোদনের তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক হিসাবমান IAS 24 (Related Party Disclosures) ও IFRS 7 (Financial Instruments: Disclosures) অনুযায়ী এই তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক। ফলে, এখানে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে এবং লেনদেনগুলোর প্রকৃত স্বরূপ নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, যার কাছ থেকে ৪৭ কোটি টাকার বেশি পাওনা দেখানো হয়েছে, সেটি গত ২০ মার্চ ২০২৫ তারিখে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। শ্রমিকরা কয়েক মাস ধরে বেতন, ছুটি ভাতা ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়। সূত্রমতে, প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, এবং শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেটানোর সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
এছাড়া ২-৩ দিন আগেও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছেন। জানা গেছে, মহানগরীর বাসন থানাধীন কলম্বিয়া এলাকায় আলিফ ক্যাজুয়াল লিমিটেড নামের কারখানায় প্রায় ৮০০ শ্রমিক কর্মরত। শ্রমিকদের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। তারা কোন তারিখ ঘোষণা করছিল না। একপর্যায়ে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে জিএমপির বাসন থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের প্রথমে বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়। পরে লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয় পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে গত ২৮ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর এবং ৬ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কারখানাটি বন্ধ রাখে। ছুটি শেষে কারখানা খুললেও বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছায় এবং শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি গড়ে ওঠে। বকেয়া বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে এলেও মালিকপক্ষ শুধু আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষের কয়েকজনকে কারখানার ভেতরে অবরুদ্ধও করে রাখেন।
সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীন গার্মেন্টস ও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার থেকে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের পাওনা অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা এখন অত্যন্ত ক্ষীণ। আর যদি স্বাধীন গার্মেন্টস ও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যারের কাছ থেকে এই ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পাওনা আদায় না হয়, তাহলে এর পরিণতি হবে বহুমাত্রিক ও দীর্ঘমেয়াদি। প্রথমত, কোম্পানির নেট অ্যাসেট ভ্যালুতে (এনএভি) বড় ধরনের পতন ঘটবে। বর্তমানে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের প্রতিবেদনে প্রতি শেয়ার এনএভি দেখিয়েছে ২৩.৯৫ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যদি এই পাওনা অর্থ আদায়যোগ্য না হয়, তবে সেই অর্থকে ‘bad debt’ হিসেবে বাদ দিতে হবে, ফলে কোম্পানির প্রকৃত এনএভি কমে ১৫-১৬ টাকার নিচে নেমে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) ওপর। বর্তমানে প্রতি শেয়ার আয় ২.২৬ টাকা দেখানো হলেও, অনাদায়ী পাওনা বাদ দিলে তা অর্ধেকে নেমে আসবে। এর মানে কোম্পানির ঘোষিত মুনাফা কাগজে থাকলেও নগদ অর্থপ্রবাহে (cash flow) তার প্রতিফলন নেই।
তৃতীয়ত, এই পাওনা আদায় না হলে কোম্পানির নগদ প্রবাহ বা তারল্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। প্রতিবেদনের ৩১ নং নোটে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার (NOCFPS) ০.৫৮ টাকা থেকে কমে ০.৩৬ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থ্যাৎ, নগদ প্রবাহ আগেই দুর্বল; এখন যদি এই ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আটকে থাকে, তাহলে কোম্পানির দৈনন্দিন উৎপাদন, কাঁচামাল ক্রয়, এমনকি ব্যাংক দায় পরিশোধেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
চতুর্থত, কোম্পানির আর্থিক অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়বে শেয়ারবাজারে। অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিবেদন দেখে ধারণা করেন- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লাভজনক অবস্থায় আছে, কিন্তু বাস্তবে এই অনিশ্চিত পাওনা কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য দুর্বল করে তুলছে। যদি বিনিয়োগকারীরা এই বিষয়টি উপলব্ধি করেন, তাহলে শেয়ারের দাম হঠাৎ কমে যেতে পারে, যার ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এমন পরিস্থিতিতে আরও প্রশ্ন ওঠে- এই লেনদেনগুলো কি বাস্তব, নাকি শুধুই কাগজে-কলমে হিসাবের খেলা? কেন কোম্পানি এই বিপুল অংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে সুদ, সময়সীমা বা সিকিউরিটির কোনো বিবরণ প্রকাশ করেনি? কেন বোর্ড অনুমোদনের তথ্য অনুপস্থিত? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোম্পানি প্রকাশ্যে দেয়নি, যা বিষয়টিকে আরও অস্পষ্ট করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: লাভোলো’র মুনাফা উড়ছে কাগজে, নগদ ডুবছে বাস্তবে!
এসব বিষয়ে জানতে বিজনেস জার্নালের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব মাহফুজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলেও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের টিঅ্যান্ডটি বা ল্যান্ডফোনে কথা বলেও কারও সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি এটি ‘ফ্যাব্রিকেটেড আর্থিক উপস্থাপনার সম্ভাবনা’-এর একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হয়, তবে কোম্পানি ইচ্ছাকৃতভাবে রিলেটেড পার্টির মাধ্যমে কৃত্রিম লেনদেন দেখিয়ে নিজেদের আর্থিক অবস্থাকে উন্নত দেখিয়েছে। এর মাধ্যমে শেয়ারমূল্য বাড়ানো সম্ভব হয়, এবং পরে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী সেই সুযোগে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিতে পারে। আন্তর্জাতিক আর্থিক অডিট ভাষায় একে বলা হয় ‘Earnings Manipulation through Related Party Receivables’- যেখানে পাওনা অর্থকে সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়, যদিও তা আদায়যোগ্য নয়।
আরও পড়ুন: বেষ্ট হোল্ডিংসের আর্থিক প্রতিবেদনে অস্পষ্টতা: বিভ্রান্তিতে বিনিয়োগকারীরা!
তারা বলছেন, এই অবস্থায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত হবে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের এই লেনদেনগুলো পর্যালোচনা করা এবং প্রয়োজনে ফরেনসিক অডিট পরিচালনা করা। কমিশনকে যাচাই করতে হবে- বোর্ড অনুমোদনের কপি আছে কি না, লেনদেনের প্রকৃত সময়সীমা ও শর্ত কি, এবং স্বাধীন গার্মেন্টস বন্ধ হওয়া এবং আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যারে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চলমান অচলাবস্থায় এ পাওনা আদায়ের সম্ভাবনা কতোটা রয়েছে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘রিলেটেড পার্টির কাছে পাওনা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু যখন সেই পক্ষ ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, তখন সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবেই ধরা হয়। যদি স্বাধীন গার্মেন্টস ও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার থেকে এই পাওনা আদায় না হয়, তাহলে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের নেট অ্যাসেট ভ্যালু কমে যেতে পারে ২০-২৫ শতাংশেরও বেশি। এর প্রভাব সরাসরি পড়বে বাজারদরে।’
আরও পড়ুন: আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের রপ্তানি প্রণোদনা উধাও: ফুলে ফেঁপে উঠছে ‘রিসিভ্যাবলস’
অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, স্বাধীন গার্মেন্টস ও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার থেকে পাওনা আদায় অনিশ্চিত থাকলে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাবে। তারা মনে করছেন, কোম্পানিটি যদি দ্রুত এই অর্থ ফেরতের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয় বা স্বচ্ছ ব্যাখ্যা না দেয়, তাহলে এটি শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতার নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। তারা আরও বলেন, এই রিপোর্টে সব কিছু ঠিকঠাক দেখানো হয়েছে, যেন কোম্পানির কোনো সমস্যা নেই। অথচ ৬১ কোটি টাকার বেশি বিপুল অঙ্কের এ টাকা আদায় অনিশ্চিত। এটা ‘ফ্যাব্রিকেটেড রিপোর্ট’-এর আভাস দিচ্ছে। এমনটা হলে ছোট বিনিয়োগকারীরা আবারও প্রতারিত হবে। বিএসইসির এখনই তদন্তে নামা উচিত বলেও তারা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: লাভেলো আইসক্রিম: ৬৯ বছর অপেক্ষার ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা!
শাহাদাত হোসাইন নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘স্বাধীন গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার খবর জানার পর আমরা ভেবেছিলাম, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ হয়তো তাদের পাওনা সুরক্ষিত রেখেছে। তার মধ্যে যোগ হয়েছে বকেয়া বেতনের দাবিতে আলিফ ক্যাজুয়ালের অচলাবস্থা। কিন্তু প্রতিবেদনে কোথাও কোনো সিকিউরিটি, সুদ বা বোর্ড অনুমোদনের তথ্য নেই। এর মানে এই লেনদেন পুরোপুরি অনিরাপদ। এখন যদি এই টাকা ফেরত না আসে, তাহলে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের প্রকৃত মূল্য অর্ধেকে নেমে যাবে।’
আরও পড়ুন: আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ: কাগুজে মুনাফার আড়ালে নগদ প্রবাহের সংকট!
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাধীন গার্মেন্টস ও আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যার থেকে ৬১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পাওনা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়লে কোম্পানির মুনাফা, সম্পদ, নগদ প্রবাহ ও শেয়ারমূল্য- সবকিছুই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে। এ পরিস্থিতি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকট নয়, বরং এটি শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিনিয়োগকারীর আস্থার জন্য এক বড় পরীক্ষা। যদি এই ধরনের লেনদেন ও প্রতিবেদনের অস্পষ্টতা রোধ করা না যায়, তবে পুঁজিবাজারে ‘কমন ম্যানেজমেন্ট’-এর ছায়াতলে এমন সম্ভাব্য কারচুপি বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে- আর তার দায়ভার পড়বে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধেই। (চলবে…)
বিজনেসজার্নাল/ঢাকা/এইচকে