ইউনাইটেড এয়ারের আগের পর্ষদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি

- আপডেট: ০৫:৩৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
- / ১০৬২৪ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজারে ওভ্যার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারের আগের পর্ষদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) কমিশনের ৮৬২ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির চেয়ারম্যান আধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিএসইসি জানায়, ইউনাইটেড এয়ারের কার্যক্রমের ওপর সংগঠিত অনুসন্ধান পরবর্তী দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তদন্ত কেমিটির সুপারিশ মোতাবেক কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
প্রসঙ্গত, ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ২০১২-২১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ বছেরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অর্ডিন্যান্স নং xvii) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সালের ১৫নং আইন) এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন হতে বন্ধ থাকা এবং পরিত্যক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১ লক্ষ ৬০ হাজার প্রান্তিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত প্রায় ৭৯৩ কোটি টাকা সুরক্ষিত করার স্বার্থে এবং এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি।।
নতুন পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৪ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং বেবিচকের সাথে আলোচনার জন্য ওই বছরের ১০ মার্চ পত্র প্রদান করেন। পরবর্তিতে ১৮ মে এয়ারলাইনটি পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে একখানা বাণিজ্যিক পরিকল্পনার প্রতিবেদন বেবিচক এ জমা প্রদান করা হয়। এ লক্ষ্যে নতুন পর্ষদে সঙ্গে বেবিচকের ১১ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার ২ ও ৩ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বকেয়া পাওনা টাকার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির পর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) জন্য আবেদন করতে পারবে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়লো
বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বকেয়া মোট পাওনা ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১ টাকা ৯৯ পয়সা। এর মধ্যে মূল পাওনা- ৫৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৩ টাকা ১৩ পয়সা। বাদবাকি টাকার মধ্যে রয়েছে ভ্যাট- ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৪৫ টাকা, আয়কর- ২ লাখ ১২ হাজার ২০ টাকা ৬৯ পয়সা এবং সারচার্জ (বাৎসরিক ৭২ শতাংশ হারে)- ২৯২ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার ৩ টাকা ১৭ পয়সা।
এদিকে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দেওয়া ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। একইসঙ্গে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানিটির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়ী বলে মনে কমিশন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের বছরের ১২ জানুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
আরও পড়ুন: বিএমএসএল ন্যাশনাল হাউজিং ফান্ডের খসড়া প্রসপেক্টাস অনুমোদন
আরও জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা মওকুফের আবেদন জানিয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। একইসঙ্গে কোম্পানিটির এ আবেদনের বিষয়ে সুপারিশ করেছে বিএসইসি। কোম্পানিটির কাছে ওই পাওনা টাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। এ অবস্থায় কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার কারণ, বন্ধ হওয়ার পেছনে কারা জড়িত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কমিশনের আজকের সভায় ইউনাইটেড এয়ারের পূর্ববর্তী পরিচালনা পর্ষদের (Board of Directors) কার্যক্রমের উপর সংগঠিত অনুসন্ধান পরবর্তী দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ঢাকা/এসএ