০১:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকের এক শাখাতেই এস আলমের ৬৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ!

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১০৫৭৫ বার দেখা হয়েছে

চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় বির্তকিত এস আলম গ্রুপের ঋণ নিয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি, যদিও আইন অনুযায়ী ব্যাংকটির দেশের সব শাখা মিলিয়ে একটি কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার সর্বোচ্চ সীমা দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের। ২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে এবং ‘জোরজবরদস্তি করে’ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বিপুল অঙ্কের ঋণের তথ্য সামনে এল।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খাতুনগঞ্জ ছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের। ২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে এবং ‘জোরজবরদস্তি করে’ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বিপুল অঙ্কের ঋণের তথ্য সামনে এল।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি কার্যালয়ে আসছেন না, ফোন করলেও সাড়া দিচ্ছেন না। এসএমএস দিলেও তার সাড়া মেলেনি।

ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসেন, জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ এফসিএস, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আকিজ উদ্দিন, কাজী রেজাউল করিম, কামাল হোসেন, মোহাম্মদ সাব্বির অফিস করছেন না, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না তাদেরকে।

সরকার পতনের পর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কায়সার আলী।

ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। তাতে নিয়ম মোতাবেক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ফান্ডেড ঋণ নিতে পারবে। কারণ ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফান্ডেড ঋণ নেয়া যায়। একক গ্রুপ হিসেবে ননফান্ডেড ঋণ নেয়ার সীমা ছিল আরও ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মূলধনের ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন: সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ চার এমপির ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট!

ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড মিলিয়ে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক থেকে মোট ঋণ পেতে পারত সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। কিন্তু এই মুহূর্তে কেবল খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এস আলম গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে আলাদা কোম্পানি ধরে এই ঋণ দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাদের এই ছাড় দিয়েছে, যদিও এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রুপের সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়েই এই ঋণসীমার হিসাব হবে।

ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট- বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ রকম কর্মকাণ্ডই তো বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে দুর্বল করেছে। এমন ঘটনা যদি আর না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক জামাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নতুনভাবে এ ব্যাংকটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ শাখা থেকে অনেক ঋণ বের হয়ে গেছে, যা ঋণ নেয়ার সীমা অতিক্রম করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে কাজ করবে। আমি দায়িত্ব নেব রোববার, দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সীমার অতিরিক্ত ঋণ অনুমোদনে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের চেয়ে বেশি দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের। ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংক খাত থেকে টাকা বের করে নিয়েছে গ্রুপটি। তাতে পুরো ব্যাংক খাত ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকে যা দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন করা হবে। সব কিছু বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে একটু সময় লাগবে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

ইসলামী ব্যাংকের এক শাখাতেই এস আলমের ৬৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ!

আপডেট: ০১:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় বির্তকিত এস আলম গ্রুপের ঋণ নিয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি, যদিও আইন অনুযায়ী ব্যাংকটির দেশের সব শাখা মিলিয়ে একটি কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার সর্বোচ্চ সীমা দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের। ২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে এবং ‘জোরজবরদস্তি করে’ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বিপুল অঙ্কের ঋণের তথ্য সামনে এল।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

খাতুনগঞ্জ ছাড়াও দেশের অন্যান্য জায়গায় ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আরও কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে এস আলম গ্রুপের। ২০১৭ সালে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে এবং ‘জোরজবরদস্তি করে’ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই বিপুল অঙ্কের ঋণের তথ্য সামনে এল।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি কার্যালয়ে আসছেন না, ফোন করলেও সাড়া দিচ্ছেন না। এসএমএস দিলেও তার সাড়া মেলেনি।

ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসেন, জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ এফসিএস, উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আকিজ উদ্দিন, কাজী রেজাউল করিম, কামাল হোসেন, মোহাম্মদ সাব্বির অফিস করছেন না, ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না তাদেরকে।

সরকার পতনের পর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কায়সার আলী।

ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। তাতে নিয়ম মোতাবেক এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ফান্ডেড ঋণ নিতে পারবে। কারণ ব্যাংকের মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফান্ডেড ঋণ নেয়া যায়। একক গ্রুপ হিসেবে ননফান্ডেড ঋণ নেয়ার সীমা ছিল আরও ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মূলধনের ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন: সাবেক অর্থমন্ত্রীসহ চার এমপির ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট!

ফান্ডেড ও নন ফান্ডেড মিলিয়ে গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংক থেকে মোট ঋণ পেতে পারত সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। কিন্তু এই মুহূর্তে কেবল খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এস আলম গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে আলাদা কোম্পানি ধরে এই ঋণ দেয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাদের এই ছাড় দিয়েছে, যদিও এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রুপের সবগুলো প্রতিষ্ঠান মিলিয়েই এই ঋণসীমার হিসাব হবে।

ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট- বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ রকম কর্মকাণ্ডই তো বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে দুর্বল করেছে। এমন ঘটনা যদি আর না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক জামাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, নতুনভাবে এ ব্যাংকটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ শাখা থেকে অনেক ঋণ বের হয়ে গেছে, যা ঋণ নেয়ার সীমা অতিক্রম করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে কাজ করবে। আমি দায়িত্ব নেব রোববার, দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সীমার অতিরিক্ত ঋণ অনুমোদনে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের চেয়ে বেশি দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের। ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যাংক খাত থেকে টাকা বের করে নিয়েছে গ্রুপটি। তাতে পুরো ব্যাংক খাত ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামী ব্যাংকে যা দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদন করা হবে। সব কিছু বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে একটু সময় লাগবে।

ঢাকা/এসএইচ