০২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

উষ্ণতার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২৩: ইইউ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৪৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪১৫৮ বার দেখা হয়েছে

সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ উষ্ণতা অনুভূত হয়েছে, বিগত এক লাখ বছরের মধ্যে এমন উষ্ণতম বছর দেখেনি পৃথিবী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সিথ্রিএস) পরিচালক কার্লো বুয়নটেম্পো মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তার মতে, ২০২৩ সালের প্রতিটি মাসই উষ্ণ ছিল তবে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে উষ্ণতার হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে কার্লো বুয়নটেম্পো বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ুর নিরিখে ২০২৩ সাল ছিল ব্যাতিক্রমী বছর। এমনকি আমাদের জানামতে বিগত সময়ে আমরা যেসব উষ্ণ বছর পার করেছি— সেদিক থেকেও ২০২৩ সাল ছিল আলাদা ক্যাটাগরির। কারণ আমাদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ১ লাখ বছরের মধ্যে এই প্রথম এত উষ্ণ একটি বছর দেখেছে পৃথিবী।’

বিশ্বে প্রথম দাপ্তরিকভাবে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের রেকর্ড রাখার সংস্কৃতি শুরু হয় ১৮৫০ সাল থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ১৮৫০ সালের তুলনায় বর্তমানে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২০১৫ প্যারিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্র। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ‘প্যারিস চুক্তি’ নামে পরিচিত সেই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি: যুক্তরাজ্য

সেই লক্ষ্য থেকে বিশ্ব এখনও বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু সিথ্রিএসের মতে, ২০২৩ সাল যে পরিমাণ উষ্ণ ছিল, তাতে সামনের বছরগুলোতে এই লক্ষ্য ধরে লাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের অধ্যাপক বৈশ্বিক উষ্ণতার লাগামহীন বৃদ্ধি বন্ধ করতে কার্বন নিঃসরণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ উদ্যোগ নিয়েছে, কাজও করছে; তবে বর্তমানে যে গতিতে এই কাজটি হচ্ছে— তাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের লাগামহীন বৃদ্ধি কোনোভাবেই থামানো সম্ভব নয়। বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্য যদি বজায় রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কাজের ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনীতি ও আমাদের মানসিকতা— উভয়েরই পরিবর্তন প্রয়োজন।’

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেনসহ বিভিন্ন গ্রীনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া। এসব গ্যাস মূলত সূর্য থেকে আসা তাপ পৃথিবীর পরিবেশ ও বায়ুমন্ডলে আটকে রাখে।

সিথ্রিএস জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে। ইউরোপের প্রধান এই জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, শিল্পযুগ বা যন্ত্রসভ্যতার আগের বছরগুলোতে প্রতিদিন গড়ে যে তাপমাত্রা ছিল, তার তুলনায় ২০২৩ সালের প্রতিদিনের তাপমাত্রা ছিল ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি।

এবং এ বছরের নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো সেই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এছাড়া ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০২৩ সালেই প্রথমবারের মতো গড় তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ১৭ সেলসিয়াস।

তবে ২০২৩ সালের তাপমাত্রা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির লক্ষণ কি না— সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিথ্রিএস।

‘২০২৩ সাল কি কেবলই একটি ব্যাতিক্রমী উষ্ণ বছর, না কি কোনো বড় বিপর্যয়ের আগমনী বার্তা— সে সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও বড় পরিসরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রয়োজন,’ রয়টার্সকে বলেছেন সিথ্রিএসের উপ পরিচালক সামান্থা বার্গেস।

ঢাকা/এসএইচ

ট্যাগঃ

শেয়ার করুন

x

উষ্ণতার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে ২০২৩: ইইউ

আপডেট: ১০:৪৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ উষ্ণতা অনুভূত হয়েছে, বিগত এক লাখ বছরের মধ্যে এমন উষ্ণতম বছর দেখেনি পৃথিবী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের (সিথ্রিএস) পরিচালক কার্লো বুয়নটেম্পো মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তার মতে, ২০২৩ সালের প্রতিটি মাসই উষ্ণ ছিল তবে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে উষ্ণতার হার ছিল সবচেয়ে বেশি।

রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে কার্লো বুয়নটেম্পো বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ুর নিরিখে ২০২৩ সাল ছিল ব্যাতিক্রমী বছর। এমনকি আমাদের জানামতে বিগত সময়ে আমরা যেসব উষ্ণ বছর পার করেছি— সেদিক থেকেও ২০২৩ সাল ছিল আলাদা ক্যাটাগরির। কারণ আমাদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ১ লাখ বছরের মধ্যে এই প্রথম এত উষ্ণ একটি বছর দেখেছে পৃথিবী।’

বিশ্বে প্রথম দাপ্তরিকভাবে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের রেকর্ড রাখার সংস্কৃতি শুরু হয় ১৮৫০ সাল থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শীর্ষ জলবায়ু বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, ১৮৫০ সালের তুলনায় বর্তমানে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

২০১৫ প্যারিসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্র। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ‘প্যারিস চুক্তি’ নামে পরিচিত সেই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি: যুক্তরাজ্য

সেই লক্ষ্য থেকে বিশ্ব এখনও বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু সিথ্রিএসের মতে, ২০২৩ সাল যে পরিমাণ উষ্ণ ছিল, তাতে সামনের বছরগুলোতে এই লক্ষ্য ধরে লাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের অধ্যাপক বৈশ্বিক উষ্ণতার লাগামহীন বৃদ্ধি বন্ধ করতে কার্বন নিঃসরণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়েছেন।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ উদ্যোগ নিয়েছে, কাজও করছে; তবে বর্তমানে যে গতিতে এই কাজটি হচ্ছে— তাতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের লাগামহীন বৃদ্ধি কোনোভাবেই থামানো সম্ভব নয়। বিশ্বের জলবায়ুর ভারসাম্য যদি বজায় রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি দেশকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং কাজের ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনীতি ও আমাদের মানসিকতা— উভয়েরই পরিবর্তন প্রয়োজন।’

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেনসহ বিভিন্ন গ্রীনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া। এসব গ্যাস মূলত সূর্য থেকে আসা তাপ পৃথিবীর পরিবেশ ও বায়ুমন্ডলে আটকে রাখে।

সিথ্রিএস জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে। ইউরোপের প্রধান এই জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, শিল্পযুগ বা যন্ত্রসভ্যতার আগের বছরগুলোতে প্রতিদিন গড়ে যে তাপমাত্রা ছিল, তার তুলনায় ২০২৩ সালের প্রতিদিনের তাপমাত্রা ছিল ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি।

এবং এ বছরের নভেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো সেই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এছাড়া ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০২৩ সালেই প্রথমবারের মতো গড় তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ১৭ সেলসিয়াস।

তবে ২০২৩ সালের তাপমাত্রা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির লক্ষণ কি না— সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিথ্রিএস।

‘২০২৩ সাল কি কেবলই একটি ব্যাতিক্রমী উষ্ণ বছর, না কি কোনো বড় বিপর্যয়ের আগমনী বার্তা— সে সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও বড় পরিসরে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রয়োজন,’ রয়টার্সকে বলেছেন সিথ্রিএসের উপ পরিচালক সামান্থা বার্গেস।

ঢাকা/এসএইচ