১০:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এস আলম‌-বেক্সিমকোর কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেব না: গভর্নর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:২৫:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১০৪৪৪ বার দেখা হয়েছে

এস আলম‌-বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ। প্রকৃত মালিক থাকুক কিংবা না থাকুক প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থায়ই এগু‌লো বন্ধ হতে দেব না। আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, এস আলম‌-বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক কর্মী কর্মরত আছেন। উৎপাদনের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে, তাদের সাথে ব্যাংকেরও সম্পর্ক রয়েছে। এগুলোতো বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। কাজেই, আমাদেরকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কিন্তু আলাদা। যাতে ফান্ড ডাইভারশন না হয়। এটা আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে আমরা মরতে দেব না। প্রতিষ্ঠান মারা খুব সহজ কিন্তু গড়ে তোলা অনেক কঠিন। এবং অনেক সময়ের ব্যাপার। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দেশ উপকৃত হয় জাতি উপকৃত হয়।

ইমোশন দিয়ে দেশ চালানো যায় না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, তাড়াহুড়া বা ইমোশন অল্প সময়ের জন্য মানুষকে উত্তেজিত করে। কিন্তু ইমোশন দিয়ে দেশ চালালে সেটা ভালো হয় না। আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। পাশাপাশি সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি বলেন, সবার আমানতের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সবার আমানত ফেরত দেওয়া। এজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা হবে। তবে সেটা বাচ্চা নয়, ললিপপ চাইল, আর দিয়ে দিলাম। এ রকম হবে না। সব হিসাব-নিকাশ করে টাকা দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে আমাদের ব্যাংকের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ২৩০০ কোটি টাকার ঋণাত্মক কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন দুই হাজার কোটি টাকাতে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা আরো কমবে। গত তিন মাসে আমরা ৪৯৭২ কোটি টাকার নতুন আমানত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে ২৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের আমানতের পরিমাণ অনেক গুণ বাড়বে আশা করি।

আরও পড়ুন: গ্রাহকদের স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে: গভর্নর

লুটপাট হওয়া টাকা আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চারটা আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা নিয়োগ করেছি। তাদের কাজ হলো সার্বিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। তদন্ত শেষ হলে মূলত আমরা অ্যাকশনে যাবো। ক্ষতি নিরূপণসহ ব্যাংকের টাকা আদায় প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

আগামী জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ভাগ সম্পন্ন হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এস আলমের শেয়ার বিক্রির জন্য শিগগিরই আদালতে মামলা করা হবে। এরপর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের  (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে এস আলমের মালিকানার মধ্য থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, শিগগিরই ভিসা পেলে আমরা সৌদি যাবো। সেখানে ইসলামি ব্যাংকে আল রাজি ও  ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ আগের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সৌদি যাবো। তাদের বিনিয়োগ আবারও ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা গ্রাহক এবং বিদেশি গ্যারেন্টার ব্যাংকগুলোর আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমরা এস আলমের উৎপাদনরত কোম্পানির এলসিও করছি। এস আলমের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু তার কোম্পানির সিএফ ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় আমাদের। ঋণ আদায় সব রকম প্রচেষ্টায় চলছে।

এস আলমের কোম্পানির ৬০ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে বকেয়া হয়ে গেছে। আগামী মাসে আরও ১৮০ মিলিয়ন ডলার ওভারডিউ হবে। গ্রুপটিরে এলসির বিপরীতে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এই দায়ের অর্ধেক সমন্বয় করা হবে তার নামে-বেনামে থাকা শেয়ার থেকে। বর্তমানে তার শেয়ার রয়েছে ১৬০০ কোটি। যার বর্তমান শেয়ারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বাকি ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু হবে। আল-রাজি, আইএফসিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

এস আলম‌-বেক্সিমকোর কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেব না: গভর্নর

আপডেট: ০৬:২৫:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

এস আলম‌-বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ। প্রকৃত মালিক থাকুক কিংবা না থাকুক প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থায়ই এগু‌লো বন্ধ হতে দেব না। আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তিনি বলেন, এস আলম‌-বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক কর্মী কর্মরত আছেন। উৎপাদনের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে, তাদের সাথে ব্যাংকেরও সম্পর্ক রয়েছে। এগুলোতো বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। কাজেই, আমাদেরকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কিন্তু আলাদা। যাতে ফান্ড ডাইভারশন না হয়। এটা আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে আমরা মরতে দেব না। প্রতিষ্ঠান মারা খুব সহজ কিন্তু গড়ে তোলা অনেক কঠিন। এবং অনেক সময়ের ব্যাপার। প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দেশ উপকৃত হয় জাতি উপকৃত হয়।

ইমোশন দিয়ে দেশ চালানো যায় না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, তাড়াহুড়া বা ইমোশন অল্প সময়ের জন্য মানুষকে উত্তেজিত করে। কিন্তু ইমোশন দিয়ে দেশ চালালে সেটা ভালো হয় না। আমাকে বাস্তববাদী হতে হবে। পাশাপাশি সঠিক নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে।

তিনি বলেন, সবার আমানতের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আমাদের প্রধান লক্ষ্য সবার আমানত ফেরত দেওয়া। এজন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করা হবে। তবে সেটা বাচ্চা নয়, ললিপপ চাইল, আর দিয়ে দিলাম। এ রকম হবে না। সব হিসাব-নিকাশ করে টাকা দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।

তিনি বলেন, গত তিন মাসে আমাদের ব্যাংকের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ২৩০০ কোটি টাকার ঋণাত্মক কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন দুই হাজার কোটি টাকাতে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা আরো কমবে। গত তিন মাসে আমরা ৪৯৭২ কোটি টাকার নতুন আমানত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন করে ২৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের আমানতের পরিমাণ অনেক গুণ বাড়বে আশা করি।

আরও পড়ুন: গ্রাহকদের স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে: গভর্নর

লুটপাট হওয়া টাকা আদায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে চারটা আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা নিয়োগ করেছি। তাদের কাজ হলো সার্বিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। তদন্ত শেষ হলে মূলত আমরা অ্যাকশনে যাবো। ক্ষতি নিরূপণসহ ব্যাংকের টাকা আদায় প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

আগামী জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ভাগ সম্পন্ন হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এস আলমের শেয়ার বিক্রির জন্য শিগগিরই আদালতে মামলা করা হবে। এরপর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের  (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে এস আলমের মালিকানার মধ্য থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, শিগগিরই ভিসা পেলে আমরা সৌদি যাবো। সেখানে ইসলামি ব্যাংকে আল রাজি ও  ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ আগের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সৌদি যাবো। তাদের বিনিয়োগ আবারও ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা গ্রাহক এবং বিদেশি গ্যারেন্টার ব্যাংকগুলোর আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমরা এস আলমের উৎপাদনরত কোম্পানির এলসিও করছি। এস আলমের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু তার কোম্পানির সিএফ ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় আমাদের। ঋণ আদায় সব রকম প্রচেষ্টায় চলছে।

এস আলমের কোম্পানির ৬০ মিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে বকেয়া হয়ে গেছে। আগামী মাসে আরও ১৮০ মিলিয়ন ডলার ওভারডিউ হবে। গ্রুপটিরে এলসির বিপরীতে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো দায় পরিশোধ করা হয়েছে। এই দায়ের অর্ধেক সমন্বয় করা হবে তার নামে-বেনামে থাকা শেয়ার থেকে। বর্তমানে তার শেয়ার রয়েছে ১৬০০ কোটি। যার বর্তমান শেয়ারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া বাকি ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু হবে। আল-রাজি, আইএফসিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এখানে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।

ঢাকা/এসএইচ