০১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করে বিলুপ্ত হলো এনবিআর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ১০৩২৯ বার দেখা হয়েছে

কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জন্ম নিয়েছে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ। বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সোমবার (১২ মে) রাতে জারি করা অধ্যাদেশে শুধুমাত্র রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলোতে অ্যাডমিন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।

সরকারি এই গেজেট জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডারেরর প্রায় ডজন খানেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে গনমাধ্যম।

তারা জানিয়েছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কিছুই রাখা হয়নি। এ বিষয়ে এনবিআর ভবনে পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। সেখানে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরিবীক্ষণ করবে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ অ্যাডমিন ক্যাডার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ এবং কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। অর্থাৎ ‘পরিবীক্ষণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘মূল্যায়ন’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ অ্যাডমিন ক্যাডারের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। এই জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত হয়ে তার জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে।

এর আগে সোমবার এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে দিনভর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে বিক্ষোভ করেছে পাঁচ শতাধিক আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‍এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম।

আরও পড়ুন: একীভূত হচ্ছে মৃতপ্রায় ১১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ধাপে ধাপে প্রায় ৯ঘণ্টা বৈঠক শেষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল তিনটা থেকে এনবিআরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির পালনের ঘোষণা দেন তারা। এ সময় অংশীজনের মতামত ছাড়া অধ্যাদেশের খসড়া পাস করায় নিন্দা জানানো হয়েছে। অধ্যাদেশে কি উল্লেখ করা হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরইমধ্যে রাতে জারি করা হলো নতুন এই অধ্যাদেশ।

এর আগে অস্তিত্ব সংকট উপলব্ধি করে দুই সংগঠনের অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ জরুরি সভার (ইজিএম) আয়োজন করেছে। সেখান থেকে অবিলম্বে এই খসড়া বাতিল ও এনবিআর বিলুপ্ত না করার দাবি জানানো হয়েছে। অংশীজন হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন। রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ থাকলেও খসড়া অধ্যাদেশের অনুমোদনের পর থেকে রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। কাজে মনোযোগ নেই রাজস্ব আদায়কারী কর্মকর্তাদের।

মঙ্গলবার আন্দোলনের প্রথম দিনে পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এনবিআর সূত্র বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এখন বাকি তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় করতে হবে দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ মুহুর্তে কর্মবিরতির দিকে গেলে বড় রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়তে পারে সরকার।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করে বিলুপ্ত হলো এনবিআর

আপডেট: ১১:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জন্ম নিয়েছে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ। বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতামত উপেক্ষা করেই বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সোমবার (১২ মে) রাতে জারি করা অধ্যাদেশে শুধুমাত্র রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলোতে অ্যাডমিন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।

সরকারি এই গেজেট জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডারেরর প্রায় ডজন খানেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে গনমাধ্যম।

তারা জানিয়েছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কিছুই রাখা হয়নি। এ বিষয়ে এনবিআর ভবনে পূর্ব নির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। সেখানে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ ও কর আদায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ পরিবীক্ষণ করবে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ অ্যাডমিন ক্যাডার ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ এবং কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে। অর্থাৎ ‘পরিবীক্ষণ’ শব্দের পরিবর্তে ‘মূল্যায়ন’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আর রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ অ্যাডমিন ক্যাডারের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। এই জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত হয়ে তার জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে।

এর আগে সোমবার এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে দিনভর আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে বিক্ষোভ করেছে পাঁচ শতাধিক আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল, কাস্টমস হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক করেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‍এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম।

আরও পড়ুন: একীভূত হচ্ছে মৃতপ্রায় ১১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ধাপে ধাপে প্রায় ৯ঘণ্টা বৈঠক শেষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এই প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল তিনটা থেকে এনবিআরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির পালনের ঘোষণা দেন তারা। এ সময় অংশীজনের মতামত ছাড়া অধ্যাদেশের খসড়া পাস করায় নিন্দা জানানো হয়েছে। অধ্যাদেশে কি উল্লেখ করা হয়েছে তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরইমধ্যে রাতে জারি করা হলো নতুন এই অধ্যাদেশ।

এর আগে অস্তিত্ব সংকট উপলব্ধি করে দুই সংগঠনের অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ জরুরি সভার (ইজিএম) আয়োজন করেছে। সেখান থেকে অবিলম্বে এই খসড়া বাতিল ও এনবিআর বিলুপ্ত না করার দাবি জানানো হয়েছে। অংশীজন হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন। রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ থাকলেও খসড়া অধ্যাদেশের অনুমোদনের পর থেকে রাজস্ব আদায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। কাজে মনোযোগ নেই রাজস্ব আদায়কারী কর্মকর্তাদের।

মঙ্গলবার আন্দোলনের প্রথম দিনে পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এনবিআর সূত্র বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। এখন বাকি তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় করতে হবে দুই হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ মুহুর্তে কর্মবিরতির দিকে গেলে বড় রাজস্ব ক্ষতির মুখে পড়তে পারে সরকার।

ঢাকা/এসএইচ