০৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ঘোষণার পরও ডিভিডেন্ড দেয়নি ১৭ কোম্পানি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০৪১৩ বার দেখা হয়েছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে প্রস্তাবিত ডিভিডেন্ড বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আট মাস পরও তালিকাভুক্ত ১৭টি কোম্পানি ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি।

ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত এপ্রিলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকও হয়েছিল। সেই বৈঠকের পাঁচ মাস পার হলেও ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি কোম্পানিগুলো। ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায় মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমন ঘটেছে।

জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনের কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার সেটেলমেন্টে একদিন সময় বেশি প্রয়োজন হয়। ‘জেড’ ক্যাটাগরি ব্যতীত অন্যান্য ক্যাটাগরির শেয়ার টি+২ তে সেটেল হয় অর্থাৎ শেয়ার কেনার পর তৃতীয় দিনে সেটি বিক্রয়যোগ্য হবে। কিন্তু ‘জেড’ ক্যাটাগারির শেয়ার বিক্রয়যোগ্য হবে চতুর্থ দিনে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমনের ফলে মূলত বিনিয়োগকারীদের ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির কর্মকর্তারাও এটি স্বীকার করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছেন, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এরপর সেটি সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ফলে ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিতরণ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানির পরিচালকরা দায়ী। তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

নির্ধারিত সময়ে ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থতার জন্য সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা বিতরণ করেনি সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এনফোর্সমেন্টের অংশ হিসাবে কোম্পানির পরিচালকদের শুনানিতে ডাকা হবে এরপর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই প্রধান বোর্ডে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানি কোন ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি। এরমধ্যে লুব-রেফ (বাংলাদেশ), আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, সাইফ পাওয়ার টেক, আমরা টেকনোলজিস ও ফরচুন সুজ মাত্র ১ শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। অন্যদিকে ওরিয়ন ফার্মা ও আমরা নেটওয়ার্কস ১০ শতাংশ এবং এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এসএস স্টিলস ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েও তা কার্যকর করেনি। তবে আংশিক ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে দুটি কোম্পানি। এর মধ্যে আফতাব অটো মোবাইলস ঘোষিত লভ্যাংশের ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বিতরণ করেছে। এ কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এডভেন্ট ফার্মা ১ শতাংশ ঘোষিত লভ্যাংশের ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ বিতরণ করেছে।

অন্যদিকে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত বিডি পেইন্টস ১২ শতাংশ, ওরাইজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ৫ শতাংশ, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও কোনো অর্থ দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। হিমাদ্রি লিমিটেড ঘোষিত লভ্যাংশের ৭৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বেঙ্গল বিস্কিটস ৬২ দশমিক ১৩ শতাংশ ও মাস্টারফিড এগ্রোটেক ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ অর্থ বিতরণ করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড বিতরণের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠির জবাবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পক্ষ থেকে পাঠানো তথ্য এবং ডিএসইর ওয়েবসাইটের সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে ডিভিডেন্ড বিতরণের এমন চিত্রই উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের জুনে এসব কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয়েছে।

এদিকে তালিকাভুক্ত আরো চারটি কোম্পানি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে, আরএকে সিরামিকস, সি পার্ল, নাভানা সিএনজি ও জেনেক্স ইনফোসিস।

আরএকে সিরামিকসের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড নির্ধারিত সময়ে বিতরণ করা হয়। কিন্তু এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে আরব আমিরাতে হোল্ডিং কোম্পানির ডিভিডেন্ড বিতরণ করা যায়নি। আন্দোলনের পর সে লভ্যাংশও পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

ঘোষণার পরও ডিভিডেন্ড দেয়নি ১৭ কোম্পানি

আপডেট: ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে প্রস্তাবিত ডিভিডেন্ড বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আট মাস পরও তালিকাভুক্ত ১৭টি কোম্পানি ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি।

ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত এপ্রিলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকও হয়েছিল। সেই বৈঠকের পাঁচ মাস পার হলেও ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি কোম্পানিগুলো। ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায় মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমন ঘটেছে।

জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনের কারণে এসব কোম্পানির শেয়ার সেটেলমেন্টে একদিন সময় বেশি প্রয়োজন হয়। ‘জেড’ ক্যাটাগরি ব্যতীত অন্যান্য ক্যাটাগরির শেয়ার টি+২ তে সেটেল হয় অর্থাৎ শেয়ার কেনার পর তৃতীয় দিনে সেটি বিক্রয়যোগ্য হবে। কিন্তু ‘জেড’ ক্যাটাগারির শেয়ার বিক্রয়যোগ্য হবে চতুর্থ দিনে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমনের ফলে মূলত বিনিয়োগকারীদের ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির কর্মকর্তারাও এটি স্বীকার করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলছেন, কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এরপর সেটি সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ফলে ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিতরণ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানির পরিচালকরা দায়ী। তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

নির্ধারিত সময়ে ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থতার জন্য সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা বিতরণ করেনি সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এনফোর্সমেন্টের অংশ হিসাবে কোম্পানির পরিচালকদের শুনানিতে ডাকা হবে এরপর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসই প্রধান বোর্ডে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির মধ্যে ১০টি কোম্পানি কোন ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি। এরমধ্যে লুব-রেফ (বাংলাদেশ), আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, সাইফ পাওয়ার টেক, আমরা টেকনোলজিস ও ফরচুন সুজ মাত্র ১ শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। অন্যদিকে ওরিয়ন ফার্মা ও আমরা নেটওয়ার্কস ১০ শতাংশ এবং এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এসএস স্টিলস ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা দিয়েও তা কার্যকর করেনি। তবে আংশিক ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে দুটি কোম্পানি। এর মধ্যে আফতাব অটো মোবাইলস ঘোষিত লভ্যাংশের ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বিতরণ করেছে। এ কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এডভেন্ট ফার্মা ১ শতাংশ ঘোষিত লভ্যাংশের ৪০ দশমিক ২১ শতাংশ বিতরণ করেছে।

অন্যদিকে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত বিডি পেইন্টস ১২ শতাংশ, ওরাইজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ৫ শতাংশ, মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ৪ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও কোনো অর্থ দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। হিমাদ্রি লিমিটেড ঘোষিত লভ্যাংশের ৭৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বেঙ্গল বিস্কিটস ৬২ দশমিক ১৩ শতাংশ ও মাস্টারফিড এগ্রোটেক ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ অর্থ বিতরণ করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসইর কাছে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড বিতরণের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠির জবাবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডিএসইর পক্ষ থেকে পাঠানো তথ্য এবং ডিএসইর ওয়েবসাইটের সবশেষ তথ্য বিশ্লেষণে ডিভিডেন্ড বিতরণের এমন চিত্রই উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের জুনে এসব কোম্পানির হিসাব বছর শেষ হয়েছে।

এদিকে তালিকাভুক্ত আরো চারটি কোম্পানি নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর ডিভিডেন্ড বিতরণ করেছে। কোম্পানি তিনটি হচ্ছে, আরএকে সিরামিকস, সি পার্ল, নাভানা সিএনজি ও জেনেক্স ইনফোসিস।

আরএকে সিরামিকসের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড নির্ধারিত সময়ে বিতরণ করা হয়। কিন্তু এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে আরব আমিরাতে হোল্ডিং কোম্পানির ডিভিডেন্ড বিতরণ করা যায়নি। আন্দোলনের পর সে লভ্যাংশও পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা/এসএইচ