০৭:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুনে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
  • / ১০২৮৫ বার দেখা হয়েছে

দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে ধীরগতি ও কর্মসংস্থানের অভাবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর প্রভাবে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়লেও ব্যাংকখাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি জুনে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৭.৭৭ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৭৩ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালের জুনে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.২৫ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল ২০২৪ সালের আগস্টে, ৭.০২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত মূল্যস্ফীতি কমলে আমানত বাড়ে। কিন্তু সম্প্রতি বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। ফলে মানুষের আয় বাড়ছে না, যা সরাসরি তাদের সঞ্চয়ক্ষমতাকে সীমিত করছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৫৫ শতাংশে। এর আগে টানা তিন মাস কমার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, জুনে নেমে এসেছিল ৮.৪৮ শতাংশে। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এই হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

ঋণ প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬.৪০ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি বছর এটি দ্বিতীয়বারের মতো ৭ শতাংশের নিচে নেমেছে। ব্যাংকারদের মতে, বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান তৈরি হয় না, যা আমানত প্রবৃদ্ধিকেও প্রভাবিত করছে।

আরও পড়ুন: একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৯৩৬১ কোটি

নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে এখন সঞ্চয় করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় অনেকেই আগের সঞ্চয় ভেঙে খরচ মেটাচ্ছেন। এর সঙ্গে ব্যাংকখাতের প্রতি আস্থাহীনতাও যোগ হয়েছে। ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর টাকার সংকটের খবরে আমানতকারীরা আরও শঙ্কিত হচ্ছেন।

২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুর্বল ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন, তারল্য সহায়তা ও বেনামি ঋণ বন্ধের মতো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিলেও আস্থাহীনতা পুরোপুরি কাটেনি।

একই সময়ে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থও বেড়েছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২.০২ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকখাতের প্রতি অনাস্থা ও মূল্যস্ফীতির চাপ এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

জুনে আমানতের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে

আপডেট: ০৪:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে ধীরগতি ও কর্মসংস্থানের অভাবে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এর প্রভাবে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়লেও ব্যাংকখাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি জুনে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৭.৭৭ শতাংশ বেশি। গত মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৭৩ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালের জুনে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.২৫ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী। গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল ২০২৪ সালের আগস্টে, ৭.০২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও সিনিয়র ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত মূল্যস্ফীতি কমলে আমানত বাড়ে। কিন্তু সম্প্রতি বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। ফলে মানুষের আয় বাড়ছে না, যা সরাসরি তাদের সঞ্চয়ক্ষমতাকে সীমিত করছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ফলে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৫৫ শতাংশে। এর আগে টানা তিন মাস কমার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, জুনে নেমে এসেছিল ৮.৪৮ শতাংশে। তবে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এই হার ছিল ১১.৬৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন অর্থবছরে (২০২৫-২৬) মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

ঋণ প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬.৪০ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি বছর এটি দ্বিতীয়বারের মতো ৭ শতাংশের নিচে নেমেছে। ব্যাংকারদের মতে, বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান তৈরি হয় না, যা আমানত প্রবৃদ্ধিকেও প্রভাবিত করছে।

আরও পড়ুন: একনেকে ১১ প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় ৯৩৬১ কোটি

নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে এখন সঞ্চয় করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় অনেকেই আগের সঞ্চয় ভেঙে খরচ মেটাচ্ছেন। এর সঙ্গে ব্যাংকখাতের প্রতি আস্থাহীনতাও যোগ হয়েছে। ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর টাকার সংকটের খবরে আমানতকারীরা আরও শঙ্কিত হচ্ছেন।

২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দুর্বল ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন, তারল্য সহায়তা ও বেনামি ঋণ বন্ধের মতো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিলেও আস্থাহীনতা পুরোপুরি কাটেনি।

একই সময়ে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদ অর্থও বেড়েছে। ২০২৫ সালের জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা নগদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২.০২ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকখাতের প্রতি অনাস্থা ও মূল্যস্ফীতির চাপ এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

ঢাকা/এসএইচ