০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪

টাকার মান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৩৫:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২
  • / ১০৩৫৭ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান নিরূপণের পদ্ধতি বাজারের হাতে ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে আইএমএফ। সূত্র জানায়, আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকা সফর করছে। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সুপারিশ করেছে।

দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করতে সরকার আইএমএফের কাছে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। ওই সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। ১২ জুলাই প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক, ১৪ জুলাই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ১৭ থেকে ২১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। আগামী ২২ জুলাই প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ত্যাগ করবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকেই আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে। ওই মাসেই আমদানি ব্যয় এক লাফে ৬৪ শতাংশ বেড়ে যায়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ার গতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ, এলসি খোলার হার বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ওই হারে রপ্তানি আয় বাড়েনি। একই সঙ্গে কমছে রেমিট্যান্স। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে গেছে, বেড়ে গেছে ব্যয়। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৭৬২ কোটি ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। প্রথমে বেড়েছে এক পয়সা, দুই পয়সা, পাঁচ পয়সা করে। গত মে থেকে বেড়েছে ২০, ৩০, ৫০, ৮০ পয়সা করে। এক দফায় সর্বোচ্চ দুই টাকা ৩৫ পয়সা বেড়েছে।

আইএমএফের চাপে ২০০৩ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে ভাসমান করে বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। কিন্তু শুরু থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উপকরণ ব্যবহার করে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। এখনো নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইএমএফ বারবারই আপত্তি করে আসছে। বিষয়টি আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বুধবারের আলোচনায় জোরালোভাবেই বিষয়টি তুলে ধরেছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর নিয়ম মানার সুবিধার্থেই বাজার থেকে ডলার কেনে বা বিক্রি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়ে এর দাম বেশি কমে যাবে। আবার সংকটের সময় না ছাড়লে বেশি বেড়ে যাবে। এতে ডলার অস্থির হয়ে যাবে। তখন ডলারের প্রতি ব্যবহারকারীদের আস্থা কমে যাবে। বাজার স্বাভাবিক রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে। শুধু বাংলাদেশ নয়, যেসব দেশে মুদ্রার বিনিময় হারে ভাসমান পদ্ধতি চালু আছে ওইসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিয়মিত বাজার থেকে ডলার কেনে বা বিক্রি করে। এর মধ্যে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বাজারে ডলার কেনাবেচা করছে।

রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকে আইএমএফের আপত্তির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব করে থাকে দুটি পদ্ধতিতে। একটি গ্রস বা খসড়া হিসাব। অপরটি রিয়্যাল বা প্রকৃত হিসাব। প্রকৃত হিসাবে রিজার্ভ থেকে ব্যবহার করা অর্থ রিজার্ভের হিসাবে ব্যবহার করা হয় না।

আইএমএফ বৈঠকে বলেছে, রিজার্ভের অর্থ থেকে সাড়ে সাত কোটি ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ দেওয়া হয়। ওই তহবিল এখনো রিজার্ভেই দেখানো হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বেশি দেখাচ্ছে।

তারা বলেছে, দুটি হিসাব যৌক্তিক নয়। প্রকৃত হিসাবই দেখাতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক খসড়া হিসাবটি প্রকাশ করে। প্রকৃত হিসাবটি প্রকাশ করে না। এটিও প্রকাশ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভ তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংরক্ষণ করে। এটি প্রকাশ্যে আনার যৌক্তিকতা নেই। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

টাকার মান ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ

আপডেট: ১১:৩৫:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান নিরূপণের পদ্ধতি বাজারের হাতে ছাড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে আইএমএফ। সূত্র জানায়, আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকা সফর করছে। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সুপারিশ করেছে।

দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করতে সরকার আইএমএফের কাছে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে। ওই সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। ১২ জুলাই প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক, ১৪ জুলাই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ১৭ থেকে ২১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। আগামী ২২ জুলাই প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ত্যাগ করবে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকেই আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে। ওই মাসেই আমদানি ব্যয় এক লাফে ৬৪ শতাংশ বেড়ে যায়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আমদানি ব্যয় বাড়তে থাকে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে আমদানি ব্যয় বাড়ার গতি কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ, এলসি খোলার হার বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ওই হারে রপ্তানি আয় বাড়েনি। একই সঙ্গে কমছে রেমিট্যান্স। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে গেছে, বেড়ে গেছে ব্যয়। ফলে প্রতি মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি ডলার ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৭৬২ কোটি ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। প্রথমে বেড়েছে এক পয়সা, দুই পয়সা, পাঁচ পয়সা করে। গত মে থেকে বেড়েছে ২০, ৩০, ৫০, ৮০ পয়সা করে। এক দফায় সর্বোচ্চ দুই টাকা ৩৫ পয়সা বেড়েছে।

আইএমএফের চাপে ২০০৩ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে ভাসমান করে বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। কিন্তু শুরু থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উপকরণ ব্যবহার করে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। এখনো নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আইএমএফ বারবারই আপত্তি করে আসছে। বিষয়টি আমলে নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বুধবারের আলোচনায় জোরালোভাবেই বিষয়টি তুলে ধরেছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর নিয়ম মানার সুবিধার্থেই বাজার থেকে ডলার কেনে বা বিক্রি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়ে এর দাম বেশি কমে যাবে। আবার সংকটের সময় না ছাড়লে বেশি বেড়ে যাবে। এতে ডলার অস্থির হয়ে যাবে। তখন ডলারের প্রতি ব্যবহারকারীদের আস্থা কমে যাবে। বাজার স্বাভাবিক রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করে। শুধু বাংলাদেশ নয়, যেসব দেশে মুদ্রার বিনিময় হারে ভাসমান পদ্ধতি চালু আছে ওইসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নিয়মিত বাজার থেকে ডলার কেনে বা বিক্রি করে। এর মধ্যে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ প্রায় সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বাজারে ডলার কেনাবেচা করছে।

রিজার্ভের হিসাব পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকে আইএমএফের আপত্তির জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের হিসাব করে থাকে দুটি পদ্ধতিতে। একটি গ্রস বা খসড়া হিসাব। অপরটি রিয়্যাল বা প্রকৃত হিসাব। প্রকৃত হিসাবে রিজার্ভ থেকে ব্যবহার করা অর্থ রিজার্ভের হিসাবে ব্যবহার করা হয় না।

আইএমএফ বৈঠকে বলেছে, রিজার্ভের অর্থ থেকে সাড়ে সাত কোটি ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ দেওয়া হয়। ওই তহবিল এখনো রিজার্ভেই দেখানো হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বেশি দেখাচ্ছে।

তারা বলেছে, দুটি হিসাব যৌক্তিক নয়। প্রকৃত হিসাবই দেখাতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক খসড়া হিসাবটি প্রকাশ করে। প্রকৃত হিসাবটি প্রকাশ করে না। এটিও প্রকাশ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, রিজার্ভ তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংরক্ষণ করে। এটি প্রকাশ্যে আনার যৌক্তিকতা নেই। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

ঢাকা/এসএ