ডেডলাইনের বাকি ৫ কার্যদিবস: স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে জমা ৬০০ কোটি টাকা

- আপডেট: ০৪:১৫:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
- / ১০৩৯২ বার দেখা হয়েছে
বিশেষ প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে থাকা বিনিয়োগকারীদের অবন্টিত ডিভিডেন্ড ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তবে বেধে দেয়া সময়ের মাত্র পাঁচ কার্যদিবস বাকি থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানিই এ অর্থ স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে হস্তান্তর করেনি। বিএসইসির হিসাব অনুযায়ী অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের পুরো অর্থ এই ফান্ডের আকার হবে প্রায় ২০ হাজার কোটির টাকা। আর কোম্পানিগুলো এখন অবধি জমা করেছে মাত্র ৬০০ কোটি টাকা (প্রায়)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মুলত, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও ফান্ডগুলো আর্থিক বছর শেষে আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। নানা কারণে বিনিয়োগকারীরা সেই ডিভিডেন্ড সংগ্রহ করে না। এতোদিন অবণ্টিত ডিভিডেন্ড কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে আনক্লেইমড ডিভিডেন্ড (দাবিহীন লভ্যাংশ) শিরোনামে প্রদর্শন করতো। কিন্তু ২০২১ সালে অবণ্টিত ডিভিডেন্ড নিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠন করেছে বিএসইসি।
এই ফান্ড গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- নিম্নমূখী পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেয়া। অর্থাৎ পতনের সময় পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ করা। বিএসইসি বলছে, অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটির টাকা। এর মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। আর স্টক ডিভিডেন্ডের বাজার মূল্য প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ফান্ড গঠনের পর এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অবণ্টিত ডিভিডেন্ড ফান্ডটিতে হস্থান্তর করেছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে এবং বাকি ৫০ কোটি টাকার মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
কিন্তু কিছু কোম্পানি স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অর্থ হস্থান্তরে গড়িমসি করছে। তাই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএসইসি। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে অবণ্টিত ডিভিডেন্ড স্থিতিশীল তহবিলের ব্যাংক ও বিও হিসাবে জমা দেয়া না হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এর আগে উপরোক্ত বিষয়ে কমিশন থেকে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ক্যাশ ও স্টক ডিভিডেন্ড বা যেকোন তহবিল বা অবণ্টিত শেয়ার বা অমীমাংসিত বা অনাকাঙ্খিত দাবিহীন বা ফেরত না হওয়া পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের অর্থ হস্তান্তর করার কথা ছিল।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, কিছু কোম্পানি নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উল্লিখিত বিধি এবং কমিশনের নির্দেশের বিধান অনুযায়ী অবণ্টিত নগদ ও স্টক বা বোনাস শেয়ার হস্তান্তর সম্পন্ন করেনি। তাই ওই কোম্পানিগুলোকে তাদের অবণ্টিত লভ্যাংশ আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের ব্যাংক ও বিও হিসাবে স্থানান্তর করার জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। আর এ নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হলে আর্থিক জরিমানাসহ সিকিউরিটিজ আইনানুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই হিসেবে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে অর্থ হস্তান্তরের সময় মাত্র সাত দিন বা পাঁচ কার্যদিবস বাকি রয়েছে
বিষয়টি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চিফ অফ অপারেশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ কোটি টাকা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে হস্তান্তর করেছে। আমরা বিএসইসি’র নির্দেশে দর পতনের বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করি।’
তিনি বলেন, ‘ফান্ডটি যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করতে ইতিমধ্যে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর্ন্তজাতিক মান বজায়ে রেখে যেন ফান্ড ব্যবস্থাপনা হয় আমরা সে দিকে নজর দিচ্ছি।’
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, আমরা অনেক সময় দিয়েছে এবং অপেক্ষা করেছি। চলতি মাসের পরে আর সময় দেয়া হবে না। ৩১ মার্চের পরে কমিশন কঠোর হবে। ওই সময় তিনি বলেন, কোন কোম্পানি যদি চলতি মাসের মধ্যে যদি ওই লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারে এবং ফান্ড কোথায় রয়েছে, তা বলতে না পারে ও স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর না করে, তাহলে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। অবণ্টিত লভ্যাংশের থেকে কয়েকগুণ বেশি জরিমানা হবে।
উল্লেখ্য, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ বিএসইসি প্রণয়ন করেছে। গত বছরের ২৭ জুন রুলসটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী, ফান্ডটি ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নস রয়েছে।
এদিকে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ সব শেয়ার বা ইউনিটহোল্ডারের কাছে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। কোন কারণে তিন বছরের মধ্যে লভ্যাংশ বণ্টন করা না গেলে তা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত বিশেষ তহবিল ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) হস্তান্তর করতে হয়।
বিজনেস জার্নাল/এইচকে/ঢাকা