১২:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ লাখ টাকারও বেশি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:২০:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১০৪৬৩ বার দেখা হয়েছে

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণের ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই টাকা পরিশোধে করতে হবে বাজেটের মাধ্যমে। আর বাজেটে অর্থায়ন হয় জনগণের করের টাকায়।

অর্থাৎ দেশের জনগণকেই এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেই হিসেবে দেশের প্রতিটি মানুষের সবার মাথায় এখন ঋণের বোঝা লাখ টাকার বেশি। আজ জন্ম নেওয়া শিশুটির মাথায়ও জাপবে এই ঋণের বোঝা। এ ছাড়া পরিবারের খরচ চালাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রায় দেশের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং বাকি প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ।

বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৮ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার সময় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। দেশ ও ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা রেখে গেছেন তিনি। অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের আমলে ১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

সরকারের নেওয়া এই ঋণ বাড়িয়েছে মাথাপিছু ঋণের বোঝা। সাধারণত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশ-বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয়, তা দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে করের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে শোধ করতে হয়। এই ঋণ জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে চাপে না ফেললেও পরোক্ষভাবে ফেলে। কারণ, ঋণ শোধে সরকার ভ্যাট কর বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের শেয়ার কারসাজি: অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন

বিবিএসের জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজারে। সেখানে বর্তমানে দেশের মোট ঋণ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে স্থিতি ঋণের সঙ্গে দেশের মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারের নেওয়া ঋণের কারণে প্রত্যেক নাগরিকের মাথায় প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। বাদ থাকবে না আজ জন্ম নেওয়া শিশুটিও।

বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মাথাপিছু ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। সে হিসেবে গত বছর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারি ঋণের বিপরীতে বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৮০ টাকা।

এ ছাড়া বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পরিবারের খরচ মেটাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নেন। সে হিসেবে সরকারের মাথাপিছু ঋণ এবং ব্যক্তিগত গড় ঋণ একত্রে হিসাব করা হলে একজন ব্যক্তির গড় ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।

এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণ রয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪৭ হাজার ২০০ টাকা।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

দেশে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ লাখ টাকারও বেশি

আপডেট: ১১:২০:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণের ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই টাকা পরিশোধে করতে হবে বাজেটের মাধ্যমে। আর বাজেটে অর্থায়ন হয় জনগণের করের টাকায়।

অর্থাৎ দেশের জনগণকেই এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেই হিসেবে দেশের প্রতিটি মানুষের সবার মাথায় এখন ঋণের বোঝা লাখ টাকার বেশি। আজ জন্ম নেওয়া শিশুটির মাথায়ও জাপবে এই ঋণের বোঝা। এ ছাড়া পরিবারের খরচ চালাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত স্থানীয় মুদ্রায় দেশের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি এবং বাকি প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ।

বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০৮ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার সময় এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। দেশ ও ক্ষমতা ছাড়ার আগে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা রেখে গেছেন তিনি। অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের আমলে ১৫ বছরে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

সরকারের নেওয়া এই ঋণ বাড়িয়েছে মাথাপিছু ঋণের বোঝা। সাধারণত বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার দেশ-বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয়, তা দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে করের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে শোধ করতে হয়। এই ঋণ জনগণকে প্রত্যক্ষভাবে চাপে না ফেললেও পরোক্ষভাবে ফেলে। কারণ, ঋণ শোধে সরকার ভ্যাট কর বাড়িয়ে দেয়। এতে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের শেয়ার কারসাজি: অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন

বিবিএসের জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজারে। সেখানে বর্তমানে দেশের মোট ঋণ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে স্থিতি ঋণের সঙ্গে দেশের মোট জনসংখ্যা ভাগ দিলে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারের নেওয়া ঋণের কারণে প্রত্যেক নাগরিকের মাথায় প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। বাদ থাকবে না আজ জন্ম নেওয়া শিশুটিও।

বছরের ব্যবধানে বেড়েছে মাথাপিছু ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলিয়ে সরকারের মোট ঋণ ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তখন মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। সে হিসেবে গত বছর মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। অর্থাৎ সরকারি ঋণের বিপরীতে বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৯৮০ টাকা।

এ ছাড়া বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পরিবারের খরচ মেটাতে একজন ব্যক্তি গড়ে ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা ঋণ নেন। সে হিসেবে সরকারের মাথাপিছু ঋণ এবং ব্যক্তিগত গড় ঋণ একত্রে হিসাব করা হলে একজন ব্যক্তির গড় ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৫ টাকা।

এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জীভূত বিদেশি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। সে হিসেবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথার ওপর গড়ে ৪০০ ডলারের মতো বিদেশি ঋণ রয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪৭ হাজার ২০০ টাকা।

ঢাকা/এসআর