১২:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন কমিশনের পাঁচ মাসে লেনদেন কমেছে ৫৫ শতাংশ

বিশেষ প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০২:১৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১০৫৬২ বার দেখা হয়েছে

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর ১৯ আগস্ট বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন খন্দকর রাশদ মাকসুদ। তাঁর নেতৃত্বে কিছুদিন দেশের পুঁজিবাজারের কিছুটা উত্থান দেখা যায়। কিন্তু বাজারের সেই উত্থানের ধারাবাহিকতা আর পরিলিক্ষিত হয়নি। যতই দিন গড়িয়েছে, ততেই পুঁজিবাজার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তথ্যানুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ভঙ্গের দায়ে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি, সিকিউরিটিজ হাউজসহ স্টেক হোল্ডারদের বিরুদ্ধে জরিমানা করে। ফলে রাতারাতি বাজারে আতঙ্ক তৈরি হয়। অনেক কোম্পানির ক্যাটাগরির অবনমন হয়। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এতে করে কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ যে বিনিয়োগকারীদের ভালোর জন্য তিনি জরিমানা করেছেন, সেই বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার ফোর্সড সেল দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে গেছেন। নতুন করে তারা বাজারে বিনিয়োগ করছেন না, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারের টার্নওভার, বাজার মূলধন ও সূচকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথেই তাড়াহুড়া করে বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা উচিত হয়নি বর্তমান কমিশনের। বাজার ভালোভাবে পর্যালোচনা করে ধীরস্থিরভাবে জরিমানা করা উচিত ছিল। এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত পাঁচ মাসে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন নামমাত্র লেনদেন হচ্ছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো তো নয়ই, ভালো নয় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে ৮০৭ কোটি ১৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। আর গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মোট লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার টাকা। পাঁচ মাসের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৪৪৩ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ লেনদেন কমেছে।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ১৯ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন এসে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে বাজার মূলধন কমেছে ৪০ হাজার ৫৯২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৬ শতাংশ বাজার মূলধন কমেছে।

এদিকে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকেও (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৯ আগস্ট ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৪ পয়েন্ট। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৪১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ১১ শতাংশ সূচক কমেছে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বিজনেস জার্নালকে বলেন, খন্দকর রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। যে কারণে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাড়াহুড়া বাজারের ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করেছেন। এরফলে বাজারে রং ম্যাসেজ গিয়েছে এবং বাজার নিম্নমুখি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে পিই রেশিও কমেছে

তিনি আরও বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই। তাঁর উচিত ছিল বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেওয়ার। আর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার খুব দ্রুতই ভালো হবে বলে মনে হয় না। এই বাজার ভালো হতে আরও সময় লাগবে।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

নতুন কমিশনের পাঁচ মাসে লেনদেন কমেছে ৫৫ শতাংশ

আপডেট: ০২:১৮:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পর ১৯ আগস্ট বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন খন্দকর রাশদ মাকসুদ। তাঁর নেতৃত্বে কিছুদিন দেশের পুঁজিবাজারের কিছুটা উত্থান দেখা যায়। কিন্তু বাজারের সেই উত্থানের ধারাবাহিকতা আর পরিলিক্ষিত হয়নি। যতই দিন গড়িয়েছে, ততেই পুঁজিবাজার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তথ্যানুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ভঙ্গের দায়ে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি, সিকিউরিটিজ হাউজসহ স্টেক হোল্ডারদের বিরুদ্ধে জরিমানা করে। ফলে রাতারাতি বাজারে আতঙ্ক তৈরি হয়। অনেক কোম্পানির ক্যাটাগরির অবনমন হয়। ফলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এতে করে কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বাজারের প্রাণ বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ যে বিনিয়োগকারীদের ভালোর জন্য তিনি জরিমানা করেছেন, সেই বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার ফোর্সড সেল দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে গেছেন। নতুন করে তারা বাজারে বিনিয়োগ করছেন না, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারের টার্নওভার, বাজার মূলধন ও সূচকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথেই তাড়াহুড়া করে বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা উচিত হয়নি বর্তমান কমিশনের। বাজার ভালোভাবে পর্যালোচনা করে ধীরস্থিরভাবে জরিমানা করা উচিত ছিল। এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত পাঁচ মাসে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন নামমাত্র লেনদেন হচ্ছে, যা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো তো নয়ই, ভালো নয় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট লেনদেন হয়েছে ৮০৭ কোটি ১৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। আর গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মোট লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৬৮ লাখ ১ হাজার টাকা। পাঁচ মাসের ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৪৪৩ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৫৫ শতাংশ লেনদেন কমেছে।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ১৯ আগস্ট ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন এসে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে বাজার মূলধন কমেছে ৪০ হাজার ৫৯২ কোটি ৮৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৬ শতাংশ বাজার মূলধন কমেছে।

এদিকে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর গত পাঁচ মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকেও (ডিএসইএক্স) নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৯ আগস্ট ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৭৭৫ পয়েন্ট। গত বৃহস্পতিবার তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৪ পয়েন্ট। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৪১ পয়েন্ট। অর্থাৎ ১১ শতাংশ সূচক কমেছে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বিজনেস জার্নালকে বলেন, খন্দকর রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ নন। যে কারণে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাড়াহুড়া বাজারের ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করেছেন। এরফলে বাজারে রং ম্যাসেজ গিয়েছে এবং বাজার নিম্নমুখি ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে পিই রেশিও কমেছে

তিনি আরও বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই। তাঁর উচিত ছিল বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নেওয়ার। আর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার খুব দ্রুতই ভালো হবে বলে মনে হয় না। এই বাজার ভালো হতে আরও সময় লাগবে।

ঢাকা/টিএ