০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নানা অনিয়মে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৯:১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২
  • / ১০৪৩৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে মার্চেন্ট ব্যাংক স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া কোম্পানিটির পরিচালক মামুন আহমেদ ও এএএ হোল্ডিংসকে দেওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গত বছরের ২৮ জুন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক কাওসার আলী ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হকের পরিদর্শন দল স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের হিসাব, রেকর্ড, নথি, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন অনিয়মের আলোকে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিদর্শন দলটি জানিয়েছে, প্রতি দুই বছরে কমপক্ষে ১টি আইপিও ফাইল দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট তা করেনি। এছাড়া প্রতি বছর কমপক্ষে ৫টি নতুন পোর্টফোলিও গঠনের নির্দেশনা পরিপালন করেনি ও গ্রাহকদের জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলেনি।

এর বাহিরে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক মামুন আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম পেয়েছে কমিশনের পরিদর্শন দল। তারা ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখতে পায়, স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট ও মামুনের মধ্যে অনেক আর্থিক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এর কোন ভাউচার নেই। এছাড়া নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবেও এর কোন তথ্য নেই।

এই লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টস বুকস মেইনটেইন করার জন্য কোন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার পায়নি পরিদর্শন দলটি।বিএসইসির দলটি মামুনের সঙ্গে ছাড়াও এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে বিভিন্ন সময় স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোন ভাউচার এবং বোর্ড রেজুলেশন নেই।

এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের থেকে ১ কোটি টাকা প্রাপ্তির বিপরীতে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রদান করে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট। অথচ যে আন্ডাররাইটার হওয়ার জন্য এই লেনদেনের কথার দাবি করছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট, সেই ন্যাশনাল পলিমারের ইস্যু ম্যানেজার এএএ হোল্ডিংস না, ছিল এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টেমেন্ট। ফলে ওই আর্থিক লেনদেনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬ এর বিধি ৩৫ এর (এ), (বি) ও (সি) লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিদর্শন দলটি।

এ বিষয়ে শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে চলতি বছরের ২৩ মে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে ১৯ জুন নির্ধারিত শুনানির দিন কোম্পানিটির সিইও সৈয়দ মুজাহদিুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের আগে শেয়ারবাজারের নিম্নমুখীর কারনে কয়েক বছর আইপিওর ফাইল জমা দিতে পারিনি, অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনার কারনে নতুন পোর্টফোলিও যোগ করতে পারিনি ও বোর্ডকে পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য অবহিত করেছি।

মামুনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আইপিওতে অংশগ্রহণ, কোম্পানি পরিচালনা ইত্যাদি কারনে মামুন আহমেদের কাছ থেকে সাময়িক ঋণ নেওয়া হয়েছিল। যা নেওয়ার বছরেই পরিশোধ করা হয়। যে কারনে আর্থিক হিসাবে এই লেনদেন দেখা যায়নি।

এএএ হোল্ডিংসের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ন্যাশনাল পলিমারের রাইট শেয়ারের আন্ডাররাইটার ছিলাম। যেটার আন্ডারসাবস্ক্রিপশনের কারনে অনেক নিয়ে ছিলাম। এতে অনেক টাকার দরকার হয়েছিল। যে কারনে এএএ হোল্ডিংস থেকে সাময়িক ঋণ নিয়েছিলাম। যা পরবর্তিতে সুবিধাসহ প্রদান করা হয়।

তবে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের সিইওর এই ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে মার্চেন্ট ব্যাংকারকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে।

যে কারনে কমিশন স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ৪ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মামুন আহমেদের কাছ থেকে নেওয়ার থেকে প্রদত্ত অতিরিক্ত ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮২ টাকা (১১,১৮,০৩,০৮১ টাকা প্রদানের বিপরীতে গ্রহন ১০,২৫,৫৫,৪৯৯ টাকা) আগামি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া এএএ হোল্ডিংসকে প্রদত্ত অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ওই সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এই শাস্তির বিষয়ে সম্প্রতি স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

আরও পড়ুন: প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি: হার্ডলাইনে বিএসইসি

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

নানা অনিয়মে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা

আপডেট: ০৯:১০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে মার্চেন্ট ব্যাংক স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এছাড়া কোম্পানিটির পরিচালক মামুন আহমেদ ও এএএ হোল্ডিংসকে দেওয়া কোটি কোটি টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গত বছরের ২৮ জুন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক কাওসার আলী ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হকের পরিদর্শন দল স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের হিসাব, রেকর্ড, নথি, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন অনিয়মের আলোকে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিদর্শন দলটি জানিয়েছে, প্রতি দুই বছরে কমপক্ষে ১টি আইপিও ফাইল দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট তা করেনি। এছাড়া প্রতি বছর কমপক্ষে ৫টি নতুন পোর্টফোলিও গঠনের নির্দেশনা পরিপালন করেনি ও গ্রাহকদের জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলেনি।

এর বাহিরে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক মামুন আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম পেয়েছে কমিশনের পরিদর্শন দল। তারা ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখতে পায়, স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট ও মামুনের মধ্যে অনেক আর্থিক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এর কোন ভাউচার নেই। এছাড়া নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবেও এর কোন তথ্য নেই।

এই লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টস বুকস মেইনটেইন করার জন্য কোন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার পায়নি পরিদর্শন দলটি।বিএসইসির দলটি মামুনের সঙ্গে ছাড়াও এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে বিভিন্ন সময় স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোন ভাউচার এবং বোর্ড রেজুলেশন নেই।

এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের থেকে ১ কোটি টাকা প্রাপ্তির বিপরীতে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রদান করে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট। অথচ যে আন্ডাররাইটার হওয়ার জন্য এই লেনদেনের কথার দাবি করছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট, সেই ন্যাশনাল পলিমারের ইস্যু ম্যানেজার এএএ হোল্ডিংস না, ছিল এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টেমেন্ট। ফলে ওই আর্থিক লেনদেনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬ এর বিধি ৩৫ এর (এ), (বি) ও (সি) লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিদর্শন দলটি।

এ বিষয়ে শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে চলতি বছরের ২৩ মে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে ১৯ জুন নির্ধারিত শুনানির দিন কোম্পানিটির সিইও সৈয়দ মুজাহদিুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের আগে শেয়ারবাজারের নিম্নমুখীর কারনে কয়েক বছর আইপিওর ফাইল জমা দিতে পারিনি, অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনার কারনে নতুন পোর্টফোলিও যোগ করতে পারিনি ও বোর্ডকে পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য অবহিত করেছি।

মামুনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আইপিওতে অংশগ্রহণ, কোম্পানি পরিচালনা ইত্যাদি কারনে মামুন আহমেদের কাছ থেকে সাময়িক ঋণ নেওয়া হয়েছিল। যা নেওয়ার বছরেই পরিশোধ করা হয়। যে কারনে আর্থিক হিসাবে এই লেনদেন দেখা যায়নি।

এএএ হোল্ডিংসের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ন্যাশনাল পলিমারের রাইট শেয়ারের আন্ডাররাইটার ছিলাম। যেটার আন্ডারসাবস্ক্রিপশনের কারনে অনেক নিয়ে ছিলাম। এতে অনেক টাকার দরকার হয়েছিল। যে কারনে এএএ হোল্ডিংস থেকে সাময়িক ঋণ নিয়েছিলাম। যা পরবর্তিতে সুবিধাসহ প্রদান করা হয়।

তবে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের সিইওর এই ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে মার্চেন্ট ব্যাংকারকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে।

যে কারনে কমিশন স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ৪ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মামুন আহমেদের কাছ থেকে নেওয়ার থেকে প্রদত্ত অতিরিক্ত ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮২ টাকা (১১,১৮,০৩,০৮১ টাকা প্রদানের বিপরীতে গ্রহন ১০,২৫,৫৫,৪৯৯ টাকা) আগামি ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া এএএ হোল্ডিংসকে প্রদত্ত অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ওই সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে। এই শাস্তির বিষয়ে সম্প্রতি স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

আরও পড়ুন: প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি: হার্ডলাইনে বিএসইসি

ঢাকা/এসএ