০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

নারীদেহে পুরুষ হরমোন বেশি হলে যেসব সমস্যা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৪৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১০৩২০ বার দেখা হয়েছে

Woman waking and yawning in bed

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: নারীদেহে এন্ড্রোজেনের বা পুরুষ যৌন হরমোন আধিক্যের কারণে যে সমস্যা দেখা দেয় সেটিকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বলা হয়ে থাকে। বালিকা ও নারীদের প্রজননক্ষম সময়ে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বাংলাদেশে এ রোগের হার ২৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের প্রভাবে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। যেমন- ক. অনিয়মিত মাসিক খ. অতিরিক্ত রক্তস্রাব গ. মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি) ঘ. ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে।

আরও কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে- তলপেটে ব্যথা, মকমলের মতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়), বন্ধ্যত্ব। রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদের অনেকেই দৈহিক স্থূ’লতায় আক্রান্ত হয়, নাকডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

জিনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকিপূর্ণ খাবার খাওয়া ইত্যাদি এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়।

যার পেছনে পিটুইটারি গ্রন্থির অতিরিক্ত এলএইচ (LH) নিঃস্বরণ ও দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্সের উপস্থিতিই কারণ।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণ হল ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সি, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকবে।

রোগ শনাক্তকরণ

নিম্নলিখিত ক্রাইটেরিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক-

* নারীদেহে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন উপস্থিতি।

* অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

* ডিম্বাশয়ে সিস্ট।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

* সিরাম টেস্টোস্টেরন, এলিস, এফএসএইচ।

* পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম।

* ওজিটিটি।

চিকিৎসা

জীবনযাত্রা ব্যবস্থাপনা : চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। রোগীর দৈহিক ওজন কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছতে সাহায্য করবে, বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে যাতে করে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। আদর্শ জীবনযাপন ব্যবস্থাপনা রোগীর হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।

এ রোগীদের খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য কম থাকবে, শাকসবজি (আলু বাদে), রঙিন ফল-মূল ও আমিষজাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে।

দৈহিক ওজন বা বিএমআই বিবেচনায় রেখে শারীরিক শ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে।

ওষুধ

* মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত পিলগুলো যাতে স্বল্প মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন থাকে, তা সহায়ক ওষুধ।

* মেটফরমিন

* অবাঞ্ছিত লোম দূর করার ক্রিম

* প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধির ওষুধ

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণগুলো খুব দ্রুত বুঝতে পারেন না। কেউ কেউ লক্ষণগুলো বুঝতে পারলেও সংকোচ বোধের কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করেন। যেহেতু রোগটির ব্যাপকতা ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, তাই প্রজননক্ষম বয়সের সব নারীকে তার এ সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: চোখ ওঠা সমস্যায় যা করবেন

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

নারীদেহে পুরুষ হরমোন বেশি হলে যেসব সমস্যা

আপডেট: ১০:৪৮:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: নারীদেহে এন্ড্রোজেনের বা পুরুষ যৌন হরমোন আধিক্যের কারণে যে সমস্যা দেখা দেয় সেটিকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বলা হয়ে থাকে। বালিকা ও নারীদের প্রজননক্ষম সময়ে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বাংলাদেশে এ রোগের হার ২৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের প্রভাবে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। যেমন- ক. অনিয়মিত মাসিক খ. অতিরিক্ত রক্তস্রাব গ. মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম (পুরুষালি) ঘ. ব্রণ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে।

আরও কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে- তলপেটে ব্যথা, মকমলের মতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়), বন্ধ্যত্ব। রোগীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদের অনেকেই দৈহিক স্থূ’লতায় আক্রান্ত হয়, নাকডাকা ও ঘুমের সময় হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

জিনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, খুব কম শারীরিক শ্রম সম্পাদন করা ও ঝুঁকিপূর্ণ খাবার খাওয়া ইত্যাদি এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়।

যার পেছনে পিটুইটারি গ্রন্থির অতিরিক্ত এলএইচ (LH) নিঃস্বরণ ও দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্সের উপস্থিতিই কারণ।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নাম হওয়ার প্রধান কারণ হল ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন বয়সি, বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন সংখ্যার সিস্ট থাকবে।

রোগ শনাক্তকরণ

নিম্নলিখিত ক্রাইটেরিয়ার যে কোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক-

* নারীদেহে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন উপস্থিতি।

* অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

* ডিম্বাশয়ে সিস্ট।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

* সিরাম টেস্টোস্টেরন, এলিস, এফএসএইচ।

* পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম।

* ওজিটিটি।

চিকিৎসা

জীবনযাত্রা ব্যবস্থাপনা : চিকিৎসার শুরুতেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। রোগীর দৈহিক ওজন কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছতে সাহায্য করবে, বিপাকীয় প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে যাতে করে ইনসুলিন রেজিস্ট্রেন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। আদর্শ জীবনযাপন ব্যবস্থাপনা রোগীর হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।

এ রোগীদের খাদ্য তালিকায় শর্করার আধিক্য কম থাকবে, শাকসবজি (আলু বাদে), রঙিন ফল-মূল ও আমিষজাতীয় খাদ্য প্রাধান্য পাবে।

দৈহিক ওজন বা বিএমআই বিবেচনায় রেখে শারীরিক শ্রমের ব্যবস্থা করতে হবে।

ওষুধ

* মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত পিলগুলো যাতে স্বল্প মাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন থাকে, তা সহায়ক ওষুধ।

* মেটফরমিন

* অবাঞ্ছিত লোম দূর করার ক্রিম

* প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধির ওষুধ

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণগুলো খুব দ্রুত বুঝতে পারেন না। কেউ কেউ লক্ষণগুলো বুঝতে পারলেও সংকোচ বোধের কারণে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করেন। যেহেতু রোগটির ব্যাপকতা ও সুদূরপ্রসারী স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, তাই প্রজননক্ষম বয়সের সব নারীকে তার এ সমস্যা আছে কিনা জানার জন্য হরমোন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

আরও পড়ুন: চোখ ওঠা সমস্যায় যা করবেন

ঢাকা/এসএ