১২:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নূরানী ডাইংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএসইসি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৬:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১০৪৩৭ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিশেষ প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইপিওতে মিথ্য তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৮৩৮তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নূরানী ডায়িং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী এবি ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক দায় যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ও ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উল্লেখ ছিল।

কিন্তু পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির তদন্তে দেখা যায়, ২০১৮ সালে প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। পরের বছর তা হবে ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করা হয়। যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

কোম্পানিটি ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম বা ডিভাইসের মাধ্যমে, যেমন ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্টের (এমটিডিআর) নগদায়ন এবং কোনো প্রকার কাজ বা পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে (সিস্টার কনসার্ন) ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেয়। এতে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্তও ভঙ্গ হয়।

২০১৭ সালে আইপিও ইস্যুকালীন স্ট্যাচুটরি অডিটর হিসেবে দায়িপ্রাপ্ত অডিট ফার্ম কর্তৃক আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর এ-সংক্রান্ত ‘ক্লিন রিপোর্ট’ (আনকোয়ালিফাইড অপিনিয়ন) দেয়া হয়।

২০১৯ ও ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইস্যুয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানি আয়, বিক্রয় ও দেনাদারের সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র, যেমন- পিআরসি, টিডিএস সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে মনে করছে ডিএসই ও বিএসইসি।

এই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটরদের মাধ্যমে ক্লিন রিপোর্ট প্রদান করে ওই আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। ওই সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তা জানানো হয়নি বিনিয়োগকারীদের।

উল্লেখ্য, ২০২৭ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর থেকেই পারফরম্যান্স খারাপ যাচ্ছে। খুবই দুর্বল মৌলের কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি করে লাভজনক দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানিটি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবরের প্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি প্রতিনিধি দল কোম্পানিটি পরিদর্শনে গেলে তাদেরকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে বিএসইসির হস্তক্ষেপে দ্বিতীয় দফায় কোম্পানিটি পরিদর্শন করতে সক্ষম হয় ডিএসইর প্রতিনিধি দল।

ডিএসইর প্রতিনিধি দল কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়। এছাড়াও নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি উঠে আসে তাদের পর্যেবক্ষণে। ডিএসই তাদের ওই পরিদর্শন প্রতিবেদন বিএসইসির কাছে পাঠালে তার আলোকে আজ কমিশন বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন: এনআরবিসি ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

নূরানী ডাইংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএসইসি

আপডেট: ০৬:৩৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিশেষ প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইপিওতে মিথ্য তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৮৩৮তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নূরানী ডায়িং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও প্রকাশিত প্রসপেক্টাস অনুযায়ী এবি ব্যাংকের কাছে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক দায় যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ও ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উল্লেখ ছিল।

কিন্তু পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির তদন্তে দেখা যায়, ২০১৮ সালে প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। পরের বছর তা হবে ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২০ সালে তা দাঁড়ায় ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করা হয়। যার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদা অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

কোম্পানিটি ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম বা ডিভাইসের মাধ্যমে, যেমন ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্টের (এমটিডিআর) নগদায়ন এবং কোনো প্রকার কাজ বা পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে (সিস্টার কনসার্ন) ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা দেয়। এতে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্তও ভঙ্গ হয়।

২০১৭ সালে আইপিও ইস্যুকালীন স্ট্যাচুটরি অডিটর হিসেবে দায়িপ্রাপ্ত অডিট ফার্ম কর্তৃক আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর এ-সংক্রান্ত ‘ক্লিন রিপোর্ট’ (আনকোয়ালিফাইড অপিনিয়ন) দেয়া হয়।

২০১৯ ও ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইস্যুয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানি আয়, বিক্রয় ও দেনাদারের সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র, যেমন- পিআরসি, টিডিএস সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে মনে করছে ডিএসই ও বিএসইসি।

এই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অডিটরদের মাধ্যমে ক্লিন রিপোর্ট প্রদান করে ওই আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। ওই সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও তা জানানো হয়নি বিনিয়োগকারীদের।

উল্লেখ্য, ২০২৭ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর থেকেই পারফরম্যান্স খারাপ যাচ্ছে। খুবই দুর্বল মৌলের কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি করে লাভজনক দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানিটি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবরের প্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি প্রতিনিধি দল কোম্পানিটি পরিদর্শনে গেলে তাদেরকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে বিএসইসির হস্তক্ষেপে দ্বিতীয় দফায় কোম্পানিটি পরিদর্শন করতে সক্ষম হয় ডিএসইর প্রতিনিধি দল।

ডিএসইর প্রতিনিধি দল কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়। এছাড়াও নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি উঠে আসে তাদের পর্যেবক্ষণে। ডিএসই তাদের ওই পরিদর্শন প্রতিবেদন বিএসইসির কাছে পাঠালে তার আলোকে আজ কমিশন বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন: এনআরবিসি ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

বিজনেস জার্নাল/ঢাকা/টিএ