০৪:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
আল জাজিরার প্রতিবেদন

পাচার হওয়া ২৫ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় বাংলাদেশ

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৪:০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
  • / ১০৪৫৮ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ উদ্যোগের আওতায়, তিনি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার (২৮ মার্চ) আল জাজিরা তাদের অনলাইন প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ আপ এগেইনস্ট টাইম টু ফাইন্ড স্টোলেন বিলিয়নস: সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা স্বাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি।

আল জাজিরা জানায়, গভর্নর আহসান মনসুর ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তৎপর করেছেন। এই পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে বিগত এক দশক ধরে বৃটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সম্পদের সন্ধানে ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে, ফলে ব্যাংকটি প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে।

গভর্নর আহসান মনসুর, যিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সাবেক অর্থনীতিবিদ, পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অর্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে।’

বিশেষ করে, তিনি ব্রিটেনকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যেখানে পাচারকৃত আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে বাংলাদেশের সরকার ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

আহসান মনসুর জানিয়েছেন, অনেক পাচারকৃত সম্পদ ব্রিটেনের লন্ডনে রয়েছে, এবং বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলো এ বিষয়টি বিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যাতে জানানো যায়, চুরি হওয়া সম্পদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ব্রিটেনে, পাচার হয়েছে।

এছাড়া, পূর্বে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডন ও দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের ৩৬০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার বেশিরভাগই লন্ডনে। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যেই সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসময় ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশে এসব অভিজাত পরিবারের কোটি কোটি ডলার পাচারে সহায়তাকারী আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলছে। গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়েছেন, এসব অপরাধী চক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে বিদেশে সহায়তাকারীদের সঙ্গে দর কষাকষি করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে এবং হারিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশে যে তদন্তকারী সংস্থা কাজ শুরু করার কথা ছিল, তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আজ যেসব এলাকায় ব্যাংক খোলা

গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের ঢাকায় থাকা কথা ছিল, কিন্তু তাদেরকে ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে অর্থায়ন করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর আসতে পারেনি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

আল জাজিরার প্রতিবেদন

পাচার হওয়া ২৫ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় বাংলাদেশ

আপডেট: ০৪:০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

এ উদ্যোগের আওতায়, তিনি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের বিদেশে পাচার করা বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার (২৮ মার্চ) আল জাজিরা তাদের অনলাইন প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ আপ এগেইনস্ট টাইম টু ফাইন্ড স্টোলেন বিলিয়নস: সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা স্বাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি।

আল জাজিরা জানায়, গভর্নর আহসান মনসুর ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তৎপর করেছেন। এই পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে বিগত এক দশক ধরে বৃটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সম্পদের সন্ধানে ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ব্যাংক থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে, ফলে ব্যাংকটি প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় পৌঁছেছে।

গভর্নর আহসান মনসুর, যিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সাবেক অর্থনীতিবিদ, পাচারকৃত অর্থ দ্রুত উদ্ধার করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অর্থের পরিমাণ কমে যেতে পারে।’

বিশেষ করে, তিনি ব্রিটেনকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যেখানে পাচারকৃত আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ উদ্ধার করতে বাংলাদেশের সরকার ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কমনওয়েলথ দপ্তর এবং লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

আহসান মনসুর জানিয়েছেন, অনেক পাচারকৃত সম্পদ ব্রিটেনের লন্ডনে রয়েছে, এবং বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলো এ বিষয়টি বিশ্বে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যাতে জানানো যায়, চুরি হওয়া সম্পদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ব্রিটেনে, পাচার হয়েছে।

এছাড়া, পূর্বে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডন ও দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের ৩৬০টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার বেশিরভাগই লন্ডনে। দুর্নীতি দমন কমিশন ইতিমধ্যেই সাইফুজ্জামানের ৪০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসময় ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশে এসব অভিজাত পরিবারের কোটি কোটি ডলার পাচারে সহায়তাকারী আইনজীবী, ব্যাংকার এবং এস্টেট এজেন্টদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলছে। গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়েছেন, এসব অপরাধী চক্রের মূল হোতার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে বিদেশে সহায়তাকারীদের সঙ্গে দর কষাকষি করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে এবং হারিয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের পর, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের কার্যক্রম কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) তহবিল স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশে যে তদন্তকারী সংস্থা কাজ শুরু করার কথা ছিল, তাদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আজ যেসব এলাকায় ব্যাংক খোলা

গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের ঢাকায় থাকা কথা ছিল, কিন্তু তাদেরকে ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে অর্থায়ন করা হলেও তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর আসতে পারেনি, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

ঢাকা/টিএ