পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

- আপডেট: ০১:৪৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
- / ১০৪১২ বার দেখা হয়েছে
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য সংকটসহ বিশ্বে চলমান অস্থিরতার কথা বিবেচনা করে জনগণকে হিসাব করে চলার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে, সাশ্রয়ী হতে হবে। পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। সবাইকে হিসাব করে চলার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আছি, সমস্যা হলে দেখবো।
আজ বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এটি মূলত দ্বিতীয় মেট্রোরেল ও প্রথম পাতালরেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এই অবস্থা না হয়।… আমাদের এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদী না থাকে। এখন পর্যন্ত সব কিছু ম্যানেজ করে যাচ্ছি, করে যাবো। তবে আপনাদেরই সাশ্রয়ী হতে হবে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
দেশের উন্নয়নের আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নির্বাচনি ইশতেহার আমরা বাস্তবায়ন করেছি। ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। এমনকি আগামী ১০০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কথা দিলে সেটা রাখে, আমরা সেই কথা রেখেছি। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের উন্নতি হয়। সারাদেশে যোগাযোগের নেটওয়ার্ট গড়ে তুলেছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখানে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। আমরা মানুষকে কতটুকু দিতে পারি সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। নিজেদের টাকায় সেতু করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে থাকবে কেউ কিছু করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব না, সবথেকে বড় পরিচয় আমি জাতির জনকের কন্যা। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার কাজ।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত জাপানের সাত নাগরিকের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাত জন যারা আমাদের এই মেট্রোরেলের পরামর্শক, তারা জঙ্গি হামলায় মারা গেলেন। তাদের স্মরণে আমরা স্মৃতিস্তম্ভ করেছি। এই ঘটনার পরেও জাপানের নেতারা হাত গুটিয়ে নেননি। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাবো।
প্রধানমন্ত্রী জানান, পাতালরেলের কাজ করার সময় মাটির নিচ থেকে বোরিং মেশিন দিয়ে গর্ত করে টানেল করা হবে। এখানে জনগণের চলাচলের কোনও সমস্যা হবে না। ভূপৃষ্ঠের ১০ মিটার নিচে কাজ হবে, ফলে ওপর থেকে বোঝা যাবে না যে মোটির নিচে কাজ চলছে। এই পাতাররেলের পূর্বাচল অংশ হবে উড়ালপথ। এছাড়া বিমানবন্দর রুটে ১২টি পাতাল রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে। খননকাজের সময় মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার দিকে খেয়াল রাখা হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব কাজ হবে।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উড়ালপথের অংশ রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবার দ্বিতীয় মেট্রোরেলের কাজ শুরু হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত, যা মূলত পাতালরেল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অধীনে বাস্তবায়ন হতে চলা প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ মাটির নিচে নির্মিত হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, দ্বিতীয় মেট্রোরেলের (উড়াল ও পাতাল) দুটি রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। এটি এমআরটি লাইন-১ হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতালরেল। এই রুটে ১২টি স্টেশন হবে। এগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
এছাড়া পূর্বাচল রুটে নতুন বাজার স্টেশনটি পাতালে নির্মাণ করা হবে। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত যাবে এই রুট; যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। উড়ালপথের এই রুটে স্টেশন হবে ৯টি। এগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা জাপানি ঋণ আর বাকি অর্থ ব্যয় করবে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা
প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পৌঁছাতে ১২টি স্টেশনে থেমে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে। নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত ৯টি স্টেশনে থেমে ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড এবং কমলাপুর থেকে পূর্বাচল টার্মিনাল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে ৪০ মিনিট লাগবে।
নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ডিএমটিসিএল। এ বিষয়ে কোম্পানিটির এমডি এমএএন সিদ্দিক জানান, ২ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় দেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে রূপগঞ্জ জমতা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাজউকের কমার্শিয়াল প্লট মাঠে একটি সভারও আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ মৌজায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে পাতালরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। মূলত এমআরটি-১ প্রকল্পের একটি অংশ পাতাল এবং অপরটি উড়াল হবে। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রোরেল ডিপোটির সুবিধা পাবে।
ঢাকা/এসএ