০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

পারফিউম কেমিক্যালের ব্যবসায়িক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:২৭:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
  • / ১০৩৭৪ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবসায়িক সক্ষমতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গঠিত কমিটির কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্রে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এই তথ্য দিয়েছেন।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. রফিকুন্নবী, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক ও মো. রায়হান কবির।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। তদন্তে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর বিধি ১৭ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে পরিদর্শন প্রতিবেদনের দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে হবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র খতিয়ে দেখবে। এছাড়া কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ জারি করা সম্মতিপত্রের সব শর্ত অনুসারে সম্পাদিত হচ্ছে কি-না তদন্ত কমিটি তা যাচাই করে দেখবে।

কোম্পানি কর্তৃক যে উদ্দেশ্যে মূলধন সংগ্রহ করেছে তাতে কোনো সংশোধন আনা হয়েছে কি-না এবং সংশোধন আনার ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি-না তা যাইচ করবে তদন্ত কমিটি।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত ত্রৈমাসিক প্রান্তিকে মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রতিবেদনে প্রদত্ত নিরীক্ষকের মতামত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া এই বিষয়ে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩০ জুন (জুলাই-জুন, ২০২৪) পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০২ টাকা। ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫.৫৬ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এরপর ধীরে ধীরে নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে কোম্পানিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করেছে ইউনুস গ্রুপ। কোম্পানির ৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের রয়েছেন-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে রকিবুল হাসান, পরিচালক তার স্ত্রী মাহফুজা ইউনুস এবং দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মান সন্তোষজনক এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার পর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ পরবর্তীতে জানাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিষয়ে কিছুই জানায়নি।

আরও পড়ুন: ন্যায়বিচার চান প্রতারণার শিকার ক্রেতা

এদিকে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের চার পরিচালক তাদের কাছে থাকা শেয়ার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার আগে পুঁজিবাজার থেকে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এজন্য বিনিয়োগকারীদের ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করায় পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকায়। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ। কোম্পানির সংগ্রহীত ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৫ কোটি টাকা ওয়ার্কি ওয়ার্কং ক্যাপিটাল ও ৫ কোটি টাকা বিএমআরইর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি সংগ্রহীত টাকার ৩৭.৭৯ শতাংশ ব্যবহার করেছে। বাকি ৬২.২১ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আলোচিত ব্র্যান্ড ম্যানোলা। আশির দশকে বাংলাদেশে প্রসাধনীর বাজারে এ ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয় ছিল।

ঢাকা/টিএ

শেয়ার করুন

পারফিউম কেমিক্যালের ব্যবসায়িক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

আপডেট: ১২:২৭:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫

পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবসায়িক সক্ষমতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

গঠিত কমিটির কোম্পানির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্রে কোনো অসঙ্গতি রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এই তথ্য দিয়েছেন।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. রফিকুন্নবী, সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিক ও মো. রায়হান কবির।

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। তদন্তে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র পরিদর্শন করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর বিধি ১৭ দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে পরিদর্শন প্রতিবেদনের দুটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে হবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির কারখানা প্রাঙ্গণ, প্রধান কার্যালয়, হিসাব বই, বিভিন্ন রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র খতিয়ে দেখবে। এছাড়া কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রসপেক্টাস এবং কমিশনের ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ জারি করা সম্মতিপত্রের সব শর্ত অনুসারে সম্পাদিত হচ্ছে কি-না তদন্ত কমিটি তা যাচাই করে দেখবে।

কোম্পানি কর্তৃক যে উদ্দেশ্যে মূলধন সংগ্রহ করেছে তাতে কোনো সংশোধন আনা হয়েছে কি-না এবং সংশোধন আনার ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কি-না তা যাইচ করবে তদন্ত কমিটি।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত ত্রৈমাসিক প্রান্তিকে মূলধন সংগ্রহের অর্থের ব্যবহার প্রতিবেদনে প্রদত্ত নিরীক্ষকের মতামত আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া এই বিষয়ে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩০ জুন (জুলাই-জুন, ২০২৪) পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০২ টাকা। ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫.৫৬ টাকা।

ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এরপর ধীরে ধীরে নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে কোম্পানিটি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে কোম্পানিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে পাঠানো হয়। তবে সম্প্রতি কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করেছে ইউনুস গ্রুপ। কোম্পানির ৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের রয়েছেন-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ছেলে রকিবুল হাসান, পরিচালক তার স্ত্রী মাহফুজা ইউনুস এবং দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মান সন্তোষজনক এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার পর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ পরবর্তীতে জানাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিষয়ে কিছুই জানায়নি।

আরও পড়ুন: ন্যায়বিচার চান প্রতারণার শিকার ক্রেতা

এদিকে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের চার পরিচালক তাদের কাছে থাকা শেয়ার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার আগে পুঁজিবাজার থেকে ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এজন্য বিনিয়োগকারীদের ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করায় পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকায়। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৯২ লাখ। কোম্পানির সংগ্রহীত ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৫ কোটি টাকা ওয়ার্কি ওয়ার্কং ক্যাপিটাল ও ৫ কোটি টাকা বিএমআরইর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি সংগ্রহীত টাকার ৩৭.৭৯ শতাংশ ব্যবহার করেছে। বাকি ৬২.২১ শতাংশ টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

পারফিউম কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আলোচিত ব্র্যান্ড ম্যানোলা। আশির দশকে বাংলাদেশে প্রসাধনীর বাজারে এ ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয় ছিল।

ঢাকা/টিএ