১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে: রাষ্ট্রপতি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৭:১২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ১০৩১৫ বার দেখা হয়েছে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, এই নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে স্পিকার, সংসদ সদস্য ও দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বাংলার নারীরা দেশে-বিদেশে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। ২০২২ সালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা দেশের জন্য এক অনন্য গৌরব বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লক্ষ গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সকল নারী উদ্যোক্তাকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘লালসবুজ ডটকম’ এবং ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, সরকার দেশের ৬৪ জেলার ৫০০টি উপজেলায় বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মী তৈরি করছে। সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ১২ জন যুবকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’-২০২২ প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’; এ লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের প্রায় ৩৫ লক্ষ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতির সূর্য সন্তান অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা/বীরাঙ্গনা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা/প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ত্রিশ হাজার বাসস্থান ‘বীর নিবাস’ দেওয়া হচ্ছে।

আব্দুল হামিদ বলেন, করোনা অতিমারি মোকাবিলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিট ভর্তি হার ৯০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ দশমিক চার-দুই শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ঝরে পড়ার হার’ ৪৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর এক আদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সারাদেশে ৪ কোটি ৯ লক্ষ ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ কোটি ৯১ লক্ষ ১২ হাজারের অধিক কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯৬৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকার অধিক উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩৫৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩২৫টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক আইকনিক পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশের ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। আমি আশাবাদী যে দ্রুতই টানেলটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী গণপরিবহন মাধ্যম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ৬৫০.১১ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন, ৭৩২টি সেতু এবং ১২৬টি স্টেশন ভবন নির্মাণ করেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার সদা তৎপর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগে প্রায় ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিগত ১২ বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি। বাংলাদেশের সকল থানায় ‘নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ, মনিটরিং ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে সফটওয়্যারভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৫ জানুয়ারী বাঙালি জাতির বিজয়ের দিন: সেতুমন্ত্রী

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’- এর আলোকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সেনানিবাসে ২০২২ সালে বিভিন্ন কোরের ৪টি ইউনিট নতুনভাবে গঠন এবং একটি পদাতিক ব্রিগেড ও চারটি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে মেকানাইজড হিসাবে রূপান্তর করা হয়েছে। নৌ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ও সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নয়টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এবং একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে উড্ডয়ন পরিচালনা করছে।

আব্দুল হামিদ বলেন, জনগণের ভোগান্তি হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জমির নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান এবং পর্চা সরবরাহ কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন আইন, বিধি-বিধান তৈরি এবং পুরাতন আইনের সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ সংশোধনীর মাধ্যমে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এভিডেন্স অ্যাক্ট (সংশোধনী) ২০২২-এর মাধ্যমে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ সংক্রান্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এডাপশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির’ ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হওয়ায় অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নে সংযুক্ত হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য বিরাজ করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে: রাষ্ট্রপতি

আপডেট: ০৭:১২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, এই নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে স্পিকার, সংসদ সদস্য ও দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী ও নারীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বাংলার নারীরা দেশে-বিদেশে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে। ২০২২ সালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে নারীরা দেশের জন্য এক অনন্য গৌরব বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লক্ষ গ্রামীণ নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। সকল নারী উদ্যোক্তাকে ই-কমার্সে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ‘লালসবুজ ডটকম’ এবং ‘ই-জয়িতা’ চালু করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, সরকার দেশের ৬৪ জেলার ৫০০টি উপজেলায় বেকার যুবদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আত্মকর্মী তৈরি করছে। সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী ১২ জন যুবকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’-২০২২ প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’; এ লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫২৫টি পরিবারের প্রায় ৩৫ লক্ষ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতির সূর্য সন্তান অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা/বীরাঙ্গনা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধা/প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ত্রিশ হাজার বাসস্থান ‘বীর নিবাস’ দেওয়া হচ্ছে।

আব্দুল হামিদ বলেন, করোনা অতিমারি মোকাবিলায় টিকাদান এবং সামাজিক তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে ‘নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকভারি সূচক’-এ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১৫ কোটি জনগণকে কোভিড টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনেছে। বর্তমানে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের নিট ভর্তি হার ৯০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ দশমিক চার-দুই শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ঝরে পড়ার হার’ ৪৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৪ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর এক আদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সারাদেশে ৪ কোটি ৯ লক্ষ ১৫ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ কোটি ৯১ লক্ষ ১২ হাজারের অধিক কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত অর্থবছরে ১ হাজার ৯৬৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকার অধিক উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৩৫৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩২৫টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান, আইন, নীতিমালা ও স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসাবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গর্বের প্রতীক আইকনিক পদ্মা সেতু ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দেশের ৩ কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। আমি আশাবাদী যে দ্রুতই টানেলটি জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

দেশের ক্রমবর্ধমান যাত্রী চাহিদা ও পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এবং কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী গণপরিবহন মাধ্যম হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ৬৫০.১১ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন, ৭৩২টি সেতু এবং ১২৬টি স্টেশন ভবন নির্মাণ করেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সরকার সদা তৎপর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগে প্রায় ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বিগত ১২ বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ বেশি। বাংলাদেশের সকল থানায় ‘নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ, মনিটরিং ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে সফটওয়্যারভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৫ জানুয়ারী বাঙালি জাতির বিজয়ের দিন: সেতুমন্ত্রী

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’- এর আলোকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সেনানিবাসে ২০২২ সালে বিভিন্ন কোরের ৪টি ইউনিট নতুনভাবে গঠন এবং একটি পদাতিক ব্রিগেড ও চারটি পদাতিক ব্যাটালিয়নকে মেকানাইজড হিসাবে রূপান্তর করা হয়েছে। নৌ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ও সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নয়টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার এবং একটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে উড্ডয়ন পরিচালনা করছে।

আব্দুল হামিদ বলেন, জনগণের ভোগান্তি হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জমির নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান এবং পর্চা সরবরাহ কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত বেশ কিছু নতুন আইন, বিধি-বিধান তৈরি এবং পুরাতন আইনের সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ১৮৭২ সংশোধনীর মাধ্যমে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এভিডেন্স অ্যাক্ট (সংশোধনী) ২০২২-এর মাধ্যমে ডিজিটাল রেকর্ড ও ফরেনসিক পদার্থ বা বস্তুসমূহকে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ সংক্রান্ত বিধান সংযোজন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল এডাপশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাক্ষরিত ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তির’ ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হওয়ায় অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়নে সংযুক্ত হয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য বিরাজ করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রয়েছে।

ঢাকা/এসএ