০৩:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

প্লুটোয় বরফের আগ্নেয়গিরি, মিলতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব: নাসা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৩:০৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২
  • / ৪১৩০ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার নিউ হরাইজনস মিশনে তোলা সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ প্লুটোর ছবি বিশ্লেষণ করে বরফের আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চজ) সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২০১৫ সালে নিউ হরাইজনস মহাকাশযান বামন গ্রহ প্লুটো ও এর উপগ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করে নিখুঁত ছবি তোলাসহ আরও নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন যখন গ্রহগুলোকে সজ্ঞায়নের জন্য একটি মানদণ্ড তৈরি করে, সেসময় ওই মানদণ্ডের সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় প্লুটোকে বামন গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়। কুইপার বেল্টে আমাদের সৌরজগতের প্রান্তে এই বামন গ্রহটি বিদ্যমান, যা সূর্য থেকে অনেক দূরে প্রদক্ষিণরত হিমায়িত বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাইনাস ৩৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের এই শীতল গ্রহে পাহাড়, উপত্যকা, হিমবাহ, সমভূমি এবং বহু ফাটল রয়েছে। কেউ যদি প্লুটোর পৃষ্ঠে দাঁড়ায়, তাহলে তিনি নীল আকাশ থেকে লাল তুষার পড়তে দেখবে। 

নিউ হরাইজনস মহাকাশযানের তোলা প্লুটোর অমসৃণ অঞ্চলের নতুন এক ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি ছোট্ট এই গ্রহটির অন্যান্য অঞ্চলের মতো নয় এবং আমাদের মহাজাগতিক আশপাশের বাকি অংশের মতো নয়। কলোরাডোর বোল্ডারের সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ও বিজ্ঞানী কেলসি সিঙ্গার বলে, ‘প্লুটোয় আমরা বেশ বড় ধরনের বরফের আগ্নেয়গিরির এক ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছি, যা সৌরজগতে আমাদের জানা কোনো কিছুর সঙ্গেই সামঞ্জস্য নয়।’ গতকাল ২৬ মার্চ নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে এই গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্লুটোর এই অঞ্চলটি স্পুতনিক প্ল্যানিশিয়া বরফ চাদরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, যা ৬২১ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। গোটা অঞ্চলে বহু ছোট-বড় গম্বুজাকৃতির বরফের আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি আগ্নেয়গিরি রাইট মনস ও পিকার্ড মনস নামে পরিচিত।  রাইট মনসের উচ্চতা প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার ও ১৫০ কিলোমিটার চওড়া এবং পিকার্ড মনসের উচ্চতা প্রায় ৭ কিলোমিটার ও ২২৫ কিলোমিটার চওড়া। রাইট মনসকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরির সমান বলে ধরা হয়, যা পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি। সিঙ্গার বলে, ‘ছবিতে দেখা গেছে, বরফের কিছু গম্বুজ একত্র হয়ে আরও বড় পর্বতের আকার ধারণ করেছে, কিন্তু বরফের আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি কীভাবে সম্ভব?’

প্লুটোর উপরিতলে একসময় মহাসাগর ছিল। এই বরফের আগ্নেয়গিরিগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, গ্রহটির পৃষ্ঠতলে এখনো মহাসাগর বিদ্যমান এবং তরল জল পৃষ্ঠের খুব কাছেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বের ধারণার চেয়েও প্লুটোর অভ্যন্তর আরও বেশি উষ্ণ বলে ধরা পড়েছে। ফলে এই বামন গ্রহটির সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা সম্পর্কে কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সিঙ্গার বলে, ‘সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যেকোনো প্রাণের জন্য এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ। কেননা সেখানে তাদের নিরবচ্ছিন্ন পুষ্টির যোগান থাকতে হবে। এ ছাড়া, আগ্নেয়গিরিগুলো যদি ক্রিয়াশীল থাকে এবং সেখানে তাপ ও জলের প্রাপ্যতা নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, তাহলে এমন পরিবেশে যেকোনো প্রাণের পক্ষে টিকে থাকা বেশ কঠিন।’ প্লুটোর এসব অজানা রহস্যের সমাধানের জন্য দূরবর্তী পৃথিবী থেকে মহাকাশযান পাঠাতে হবে। ‘যদি আমরা ভবিষ্যতে প্লুটোতে কোনো মিশন পরিচালনা করি, সেক্ষেত্রে আমরা বরফভেদী রাডার ব্যবহারের মাধ্যমে ওইসব ক্রিয়াশীল বরফের আগ্নেয়গিরি ও সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার অনেকগুলো প্রশ্নের সমাধান করতে পারব’।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

x

প্লুটোয় বরফের আগ্নেয়গিরি, মিলতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব: নাসা

আপডেট: ০৩:০৩:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার নিউ হরাইজনস মিশনে তোলা সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ প্লুটোর ছবি বিশ্লেষণ করে বরফের আগ্নেয়গিরির অস্তিত্ব পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ মার্চজ) সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২০১৫ সালে নিউ হরাইজনস মহাকাশযান বামন গ্রহ প্লুটো ও এর উপগ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করে নিখুঁত ছবি তোলাসহ আরও নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন যখন গ্রহগুলোকে সজ্ঞায়নের জন্য একটি মানদণ্ড তৈরি করে, সেসময় ওই মানদণ্ডের সঙ্গে খাপ না খাওয়ায় প্লুটোকে বামন গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়। কুইপার বেল্টে আমাদের সৌরজগতের প্রান্তে এই বামন গ্রহটি বিদ্যমান, যা সূর্য থেকে অনেক দূরে প্রদক্ষিণরত হিমায়িত বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। মাইনাস ৩৮৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের এই শীতল গ্রহে পাহাড়, উপত্যকা, হিমবাহ, সমভূমি এবং বহু ফাটল রয়েছে। কেউ যদি প্লুটোর পৃষ্ঠে দাঁড়ায়, তাহলে তিনি নীল আকাশ থেকে লাল তুষার পড়তে দেখবে। 

নিউ হরাইজনস মহাকাশযানের তোলা প্লুটোর অমসৃণ অঞ্চলের নতুন এক ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি ছোট্ট এই গ্রহটির অন্যান্য অঞ্চলের মতো নয় এবং আমাদের মহাজাগতিক আশপাশের বাকি অংশের মতো নয়। কলোরাডোর বোল্ডারের সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ও বিজ্ঞানী কেলসি সিঙ্গার বলে, ‘প্লুটোয় আমরা বেশ বড় ধরনের বরফের আগ্নেয়গিরির এক ক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছি, যা সৌরজগতে আমাদের জানা কোনো কিছুর সঙ্গেই সামঞ্জস্য নয়।’ গতকাল ২৬ মার্চ নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে এই গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্লুটোর এই অঞ্চলটি স্পুতনিক প্ল্যানিশিয়া বরফ চাদরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, যা ৬২১ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। গোটা অঞ্চলে বহু ছোট-বড় গম্বুজাকৃতির বরফের আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি আগ্নেয়গিরি রাইট মনস ও পিকার্ড মনস নামে পরিচিত।  রাইট মনসের উচ্চতা প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার ও ১৫০ কিলোমিটার চওড়া এবং পিকার্ড মনসের উচ্চতা প্রায় ৭ কিলোমিটার ও ২২৫ কিলোমিটার চওড়া। রাইট মনসকে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরির সমান বলে ধরা হয়, যা পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি। সিঙ্গার বলে, ‘ছবিতে দেখা গেছে, বরফের কিছু গম্বুজ একত্র হয়ে আরও বড় পর্বতের আকার ধারণ করেছে, কিন্তু বরফের আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি কীভাবে সম্ভব?’

প্লুটোর উপরিতলে একসময় মহাসাগর ছিল। এই বরফের আগ্নেয়গিরিগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, গ্রহটির পৃষ্ঠতলে এখনো মহাসাগর বিদ্যমান এবং তরল জল পৃষ্ঠের খুব কাছেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বের ধারণার চেয়েও প্লুটোর অভ্যন্তর আরও বেশি উষ্ণ বলে ধরা পড়েছে। ফলে এই বামন গ্রহটির সম্ভাব্য বাসযোগ্যতা সম্পর্কে কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সিঙ্গার বলে, ‘সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা যেকোনো প্রাণের জন্য এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ। কেননা সেখানে তাদের নিরবচ্ছিন্ন পুষ্টির যোগান থাকতে হবে। এ ছাড়া, আগ্নেয়গিরিগুলো যদি ক্রিয়াশীল থাকে এবং সেখানে তাপ ও জলের প্রাপ্যতা নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, তাহলে এমন পরিবেশে যেকোনো প্রাণের পক্ষে টিকে থাকা বেশ কঠিন।’ প্লুটোর এসব অজানা রহস্যের সমাধানের জন্য দূরবর্তী পৃথিবী থেকে মহাকাশযান পাঠাতে হবে। ‘যদি আমরা ভবিষ্যতে প্লুটোতে কোনো মিশন পরিচালনা করি, সেক্ষেত্রে আমরা বরফভেদী রাডার ব্যবহারের মাধ্যমে ওইসব ক্রিয়াশীল বরফের আগ্নেয়গিরি ও সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার অনেকগুলো প্রশ্নের সমাধান করতে পারব’।

ঢাকা/এসএ