১২:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফ্যামিলি কার্ডে সরকারের ভর্তুকি ৬৫৩ কোটি টাকা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০৫:২২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২
  • / ১০৩৫৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সারাদেশে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে কম দামে তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করছে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর পেছনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে ৬৫৩ কোটি টাকা। রমজানকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিসিবি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো টিসিবির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান স্বাক্ষরিত এই হিসাব বিবরণী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান বাজার দামে এসব পণ্য কিনতে টিসিবি’র মোট খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৪২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০ টাকা। আর এই পাঁচ পণ্য বিক্রি থেকে টিসিবির আয় হবে ৯৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪ হাজার ১০ টাকা। এতে সংস্থাটির তহবিলে ঘাটতি দাঁড়াবে ৬৫৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩০ টাকা। এই ঘাটতি সরকার ভর্তুকি হিসেবে বহন করবে।

প্রতিবেদনের হিসাব বিবরণীতে নির্ধারিত পাঁচ পণ্যের মধ্যে কোন পণ্য কী দামে কেনা হয়েছে, তা উপকারভোগীর কাছে কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তার থেকে পাওয়া সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ কত, ঘাটতিজনিত সরাসরি ভর্তুকি কত যাচ্ছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে পণ্যকেন্দ্রিক ভর্তুকি ছাড়াও ওই পণ্য সারাদেশে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে কী পরিমাণ খরচ হচ্ছে, ফ্যামিলি কার্ড তৈরিতে কত খরচ পড়েছে, তালিকা তৈরির জরিপে খরচ কত হয়েছে এবং এর সঙ্গে এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে পণ্যের পরিবহন, তিন মাসের গুদাম ভাড়া ও পণ্যের লোড-আনলোড খরচ কত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট হিসাবও ভর্তুকি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের ভিত্তিতে ভর্তুকি দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছাতে সারাদেশে এক কোটি উপকারভোগী পরিবার বাছাই করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মাঝে ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৩ এপ্রিল থেকে এসব পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ছোলা যুক্ত হয়, যা ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

এর আওতায় দুই দফায় প্রত্যেক পরিবার সুলভ মূল্যে চার লিটার সয়াবিন ছাড়াও চার কেজি করে চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা কেনার সুযোগ পাচ্ছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এক কোটি পরিবারের জন্য দুই দফায় চার লিটার সয়াবিন সরবরাহের জন্য টিসিবিকে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬২ লিটার সয়াবিন কিনতে হয়েছে। প্রচলিত বাজারের দাম ১৬০ টাকা হারে এতে মোট খরচ পড়েছে ৬২৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ৪৪০ টাকা। কিন্তু এই সয়াবিন বিক্রি করে উপকারভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ হলো মাত্র ৪১৪ কোটি ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ১০ টাকা। এতে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে ২১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩০ টাকা।

এভাবে ৪০ হাজার টন চিনি কেনায় খরচ পড়েছে ৩১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে পাওয়া বিক্রীত অর্থের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। এতে ভর্তুকি যাচ্ছে ১১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৪০ হাজার টন মসুর ডাল কেনায় খরচ ৪৩১ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। বিক্রীত অর্থের পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা। এতে ভর্তুকি দিতে হবে ১৯১ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।

২০ হাজার টন ছোলা কেনায় খরচ পড়েছে ১৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বিক্রি করে পাওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র ৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছোলায় ভর্তুকি যাবে ৬৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া কার্যক্রমের আওতায় খেজুর কেনা হয়েছে ৭৫০ টন। এতে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। উপকারভোগীর কাছে বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খেজুরে ভর্তুকি যাচ্ছে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে পণ্য বিক্রির জন্য উপকারভোগী বাছাইয়ে স্থানীয়ভাবে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপকাজে মোট খরচ পড়েছে ১০ কোটি টাকা। এরপর উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয় ফ্যামিলি কার্ড। এক কোটি পরিবারের জন্য এই ফ্যামিলি কার্ড তৈরিসহ জেলা প্রশাসনের গুদামে পণ্য প্যাকেজিংয়ে খরচ হয়েছে মোট ২৫ কোটি টাকা। আন্তগুদাম পরিবহনে খরচ হয়েছে ১০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিতরণকৃত এসব পণ্য আগে থেকেই কেনার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর পর শেষ হওয়া পর্যন্ত তিন মাসের গুদাম ভাড়াজনিত খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গুদাম থেকে ট্রাক এবং ট্রাক থেকে গুদামে পণ্য লোড-আনলোড করতে খরচ ধরা হয়েছে আরও ১৩ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

ফ্যামিলি কার্ডে সরকারের ভর্তুকি ৬৫৩ কোটি টাকা

আপডেট: ০৫:২২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ এপ্রিল ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: সারাদেশে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের কাছে কম দামে তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করছে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর পেছনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে ৬৫৩ কোটি টাকা। রমজানকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিসিবি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো টিসিবির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান স্বাক্ষরিত এই হিসাব বিবরণী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান বাজার দামে এসব পণ্য কিনতে টিসিবি’র মোট খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৪২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০ টাকা। আর এই পাঁচ পণ্য বিক্রি থেকে টিসিবির আয় হবে ৯৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪ হাজার ১০ টাকা। এতে সংস্থাটির তহবিলে ঘাটতি দাঁড়াবে ৬৫৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩০ টাকা। এই ঘাটতি সরকার ভর্তুকি হিসেবে বহন করবে।

প্রতিবেদনের হিসাব বিবরণীতে নির্ধারিত পাঁচ পণ্যের মধ্যে কোন পণ্য কী দামে কেনা হয়েছে, তা উপকারভোগীর কাছে কী দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তার থেকে পাওয়া সম্ভাব্য অর্থের পরিমাণ কত, ঘাটতিজনিত সরাসরি ভর্তুকি কত যাচ্ছে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে পণ্যকেন্দ্রিক ভর্তুকি ছাড়াও ওই পণ্য সারাদেশে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে কী পরিমাণ খরচ হচ্ছে, ফ্যামিলি কার্ড তৈরিতে কত খরচ পড়েছে, তালিকা তৈরির জরিপে খরচ কত হয়েছে এবং এর সঙ্গে এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে পণ্যের পরিবহন, তিন মাসের গুদাম ভাড়া ও পণ্যের লোড-আনলোড খরচ কত হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট হিসাবও ভর্তুকি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডের ভিত্তিতে ভর্তুকি দামে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছাতে সারাদেশে এক কোটি উপকারভোগী পরিবার বাছাই করে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মাঝে ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৩ এপ্রিল থেকে এসব পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ছোলা যুক্ত হয়, যা ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

এর আওতায় দুই দফায় প্রত্যেক পরিবার সুলভ মূল্যে চার লিটার সয়াবিন ছাড়াও চার কেজি করে চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা কেনার সুযোগ পাচ্ছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এক কোটি পরিবারের জন্য দুই দফায় চার লিটার সয়াবিন সরবরাহের জন্য টিসিবিকে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬২ লিটার সয়াবিন কিনতে হয়েছে। প্রচলিত বাজারের দাম ১৬০ টাকা হারে এতে মোট খরচ পড়েছে ৬২৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ৪৪০ টাকা। কিন্তু এই সয়াবিন বিক্রি করে উপকারভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ হলো মাত্র ৪১৪ কোটি ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ১০ টাকা। এতে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে ২১৫ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩০ টাকা।

এভাবে ৪০ হাজার টন চিনি কেনায় খরচ পড়েছে ৩১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে পাওয়া বিক্রীত অর্থের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। এতে ভর্তুকি যাচ্ছে ১১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৪০ হাজার টন মসুর ডাল কেনায় খরচ ৪৩১ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। বিক্রীত অর্থের পরিমাণ ২৪০ কোটি টাকা। এতে ভর্তুকি দিতে হবে ১৯১ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।

২০ হাজার টন ছোলা কেনায় খরচ পড়েছে ১৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বিক্রি করে পাওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র ৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছোলায় ভর্তুকি যাবে ৬৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া কার্যক্রমের আওতায় খেজুর কেনা হয়েছে ৭৫০ টন। এতে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। উপকারভোগীর কাছে বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খেজুরে ভর্তুকি যাচ্ছে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে সারাদেশে পণ্য বিক্রির জন্য উপকারভোগী বাছাইয়ে স্থানীয়ভাবে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপকাজে মোট খরচ পড়েছে ১০ কোটি টাকা। এরপর উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয় ফ্যামিলি কার্ড। এক কোটি পরিবারের জন্য এই ফ্যামিলি কার্ড তৈরিসহ জেলা প্রশাসনের গুদামে পণ্য প্যাকেজিংয়ে খরচ হয়েছে মোট ২৫ কোটি টাকা। আন্তগুদাম পরিবহনে খরচ হয়েছে ১০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিতরণকৃত এসব পণ্য আগে থেকেই কেনার প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর পর শেষ হওয়া পর্যন্ত তিন মাসের গুদাম ভাড়াজনিত খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গুদাম থেকে ট্রাক এবং ট্রাক থেকে গুদামে পণ্য লোড-আনলোড করতে খরচ ধরা হয়েছে আরও ১৩ কোটি টাকা।

ঢাকা/এসএ