০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে পাঁচ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে: এডিবি

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১০৩৬০ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে পাঁচ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। কারণগুলো হচ্ছে- আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কৃষিজাত ফলন হ্রাস; ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া; বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি, সার ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি; স্থানীয় বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা।

বুধবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপেমন্ট আউটলুক প্রতিবেদনের সম্পূরক অংশ প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে গড় মূল্যস্ফীতি কত হতে পারে, তা নিয়ে কিছু বলেনি এডিবি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কয়েক মাস আগে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল, আগামী ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

কয়েক মাস আগে এডিবির মূল প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য যে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূরক প্রতিবেদনে বাড়ানো হয়েছে। এডিবির নতুন পূর্বাভাসে চলতি ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের গড় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ করা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে।

এ সময় মূল্যস্ফীতি বেশ আলোচিত বিষয়। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার কারণে ওই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে, যা গত ১১ বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য পরের তিন মাসে মূল্যস্ফীতি খানিক কমে এসেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের অনেকে।

মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন করে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদেরা। মূল্যস্ফীতির তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ ও গণনাপদ্ধতি নিয়ে এই প্রশ্ন। ১৭ বছর আগের ভিত্তিবছর ধরেই এখনো মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। মূল্যস্ফীতি গণনার পদ্ধতি ও ভিত্তিবছর—দুটোই পরিবর্তন করা হচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে ৪২৬টি পণ্য ও সেবা দিয়ে মূল্যস্ফীতির হিসাব গণনা করা হয়। নতুন ভিত্তিবছরের তালিকায় সাড়ে পাঁচ শর মতো পণ্য ও সেবা থাকবে। সব মিলিয়ে তালিকায় পণ্য বাড়ছে ২৫ শতাংশ। এবার নতুন পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হবে। জাতিসংঘ অনুমোদিত ক্ল্যাসিফিকেশন অব ইনডিভিজ্যুয়াল কনজাম্পশন অ্যাকর্ডিং টু পারপোজ (কইকপ) ২০১৮ অনুসারে মূল্যস্ফীতি গণনা করবে বিবিএস। এটি কইকপ পদ্ধতি নামে পরিচিত।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমতে পারে
বাংলাদেশে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমবে বলে মনে করে এডিবি। সংস্থাটি বলছে, রপ্তানি হ্রাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সরবরাহে সংকট ও প্রবাসী আয় হ্রাসের পাশাপাশি সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমার প্রবৃদ্ধিও প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের ওপর।

এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া গত এপ্রিল মাসে সংস্থাটি বলেছিল, চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির পাশাপাশি মূলত স্থানীয় ভোগ চাহিদা কমে যাওয়া, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় হ্রাস—এসব কারণে প্রবৃদ্ধির এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

শেয়ার করুন

x

বাংলাদেশে পাঁচ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে: এডিবি

আপডেট: ১২:১৮:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

বাংলাদেশে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে পাঁচ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। কারণগুলো হচ্ছে- আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কৃষিজাত ফলন হ্রাস; ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া; বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি, সার ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি; স্থানীয় বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা।

বুধবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপেমন্ট আউটলুক প্রতিবেদনের সম্পূরক অংশ প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে গড় মূল্যস্ফীতি কত হতে পারে, তা নিয়ে কিছু বলেনি এডিবি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কয়েক মাস আগে পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল, আগামী ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে।

কয়েক মাস আগে এডিবির মূল প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য যে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূরক প্রতিবেদনে বাড়ানো হয়েছে। এডিবির নতুন পূর্বাভাসে চলতি ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের গড় মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ করা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে।

এ সময় মূল্যস্ফীতি বেশ আলোচিত বিষয়। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার কারণে ওই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে, যা গত ১১ বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য পরের তিন মাসে মূল্যস্ফীতি খানিক কমে এসেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের অনেকে।

মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন করে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদেরা। মূল্যস্ফীতির তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ ও গণনাপদ্ধতি নিয়ে এই প্রশ্ন। ১৭ বছর আগের ভিত্তিবছর ধরেই এখনো মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। মূল্যস্ফীতি গণনার পদ্ধতি ও ভিত্তিবছর—দুটোই পরিবর্তন করা হচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে ৪২৬টি পণ্য ও সেবা দিয়ে মূল্যস্ফীতির হিসাব গণনা করা হয়। নতুন ভিত্তিবছরের তালিকায় সাড়ে পাঁচ শর মতো পণ্য ও সেবা থাকবে। সব মিলিয়ে তালিকায় পণ্য বাড়ছে ২৫ শতাংশ। এবার নতুন পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হবে। জাতিসংঘ অনুমোদিত ক্ল্যাসিফিকেশন অব ইনডিভিজ্যুয়াল কনজাম্পশন অ্যাকর্ডিং টু পারপোজ (কইকপ) ২০১৮ অনুসারে মূল্যস্ফীতি গণনা করবে বিবিএস। এটি কইকপ পদ্ধতি নামে পরিচিত।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমতে পারে
বাংলাদেশে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমবে বলে মনে করে এডিবি। সংস্থাটি বলছে, রপ্তানি হ্রাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সরবরাহে সংকট ও প্রবাসী আয় হ্রাসের পাশাপাশি সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমার প্রবৃদ্ধিও প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের ওপর।

এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। এ ছাড়া গত এপ্রিল মাসে সংস্থাটি বলেছিল, চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির পাশাপাশি মূলত স্থানীয় ভোগ চাহিদা কমে যাওয়া, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় হ্রাস—এসব কারণে প্রবৃদ্ধির এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।