১০:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

বাজারভিত্তিক দরে হবে ডলার বেচাকেনা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:২০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১০৩৩৪ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণের পর আন্তঃব্যাংকে মার্কিন মুদ্রাটি বেচাকেনার হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এত দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে আন্তঃব্যাংক ডলারের দর নির্ধারিত হচ্ছিল। এ কারণে কোনো ব্যাংক আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করছিল না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আন্তঃব্যাংক ডলারের প্রকৃত দর প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রির দর দেখানো হয়েছে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। আর কেনায় ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার তথ্যের ভিত্তিতে এই দর প্রকাশ করা হয়েছে। এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে যে দরে ডলার বিক্রি করত, সেটিকেই আন্তঃব্যাংক দর হিসাবে প্রকাশ করত।

অকার্যকর হয়ে পড়া আন্তব্যাংক লেনদেন কার্যকর করতে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডলারের ব্যাপক সংকট শুরুর পর চার মাস ধরে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে না। প্রকৃত দর আড়াল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দর নির্ধারণ করার ফলে আন্তঃব্যাংক অকার্যকর হওয়ায় বাজার পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়। এতে রপ্তানি আয় কম থাকা ব্যাংকগুলো উচ্চ দরে রেমিট্যান্স আহরণের পথে ছুটছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৬ টাকা দরে। চলতি বছরের শুরুতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় ডলার বিক্রি করে। এ কয়েক মাসে প্রতি ডলারে ১০ টাকা ২০ পয়সা বাড়িয়ে এখন এ পর্যায়ে এনেছে।

ব্যাংকগুলোতে চলতি বছরের শুরুতে ৯০ টাকার আশপাশের দরে ডলার বিক্রি হচ্ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে ১১২ টাকা পর্যন্ত ওঠে। রেমিট্যান্স আহরণে কোনো কোনো ব্যাংক ১১৪ টাকা পর্যন্ত দর দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে অস্থিরতা কাটানোর চূড়ান্ত চেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশে রোববার ডলার কেনার একটি সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে রপ্তানি বিল নগদায়ন ও রেমিট্যান্সের যে গড় দর দাঁড়াবে, তার সঙ্গে এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা হবে। আর গড় যে দরে ডলার কিনবে, তার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি নিয়ে আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করবে। দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও নির্ধারিত দরে ডলার কেনাবেচা হয়েছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার ৯৯ টাকায় রপ্তানি বিল ভাঙিয়েছে। আমদানি দায় নিষ্পত্তি করেছে ১০৭ টাকা ৫৮ পয়সায়। বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক ৯৯ টাকায় রপ্তানি বিল ভাঙিয়ে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায় আমদানি দায় নিষ্পত্তি করেছে।

মূলত ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার গড় দরের ভিত্তিতে আমদানিতে এ দর নেওয়া হয়। এর ফলে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমবে। মাঝে কয়েক দিন ১১২ টাকা পর্যন্ত দরে আমদানি দায় নিষ্পত্তি হচ্ছিল। রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ১১৪ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছিল বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। এখন তা ১০৮ টাকার নিচে নামিয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে আমদানি ব্যয় কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত মোট বিক্রি ছাড়িয়েছে ২৮৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার।

এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গত বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করার পর আর কমেনি।

আরো পড়ুন: ২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে ডাচ-বাংলার ‘রকেট’ সেবা

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

বাজারভিত্তিক দরে হবে ডলার বেচাকেনা

আপডেট: ০১:২০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণের পর আন্তঃব্যাংকে মার্কিন মুদ্রাটি বেচাকেনার হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এত দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে আন্তঃব্যাংক ডলারের দর নির্ধারিত হচ্ছিল। এ কারণে কোনো ব্যাংক আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করছিল না।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

বাজারভিত্তিক করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আন্তঃব্যাংক ডলারের প্রকৃত দর প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রির দর দেখানো হয়েছে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। আর কেনায় ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার তথ্যের ভিত্তিতে এই দর প্রকাশ করা হয়েছে। এত দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে যে দরে ডলার বিক্রি করত, সেটিকেই আন্তঃব্যাংক দর হিসাবে প্রকাশ করত।

অকার্যকর হয়ে পড়া আন্তব্যাংক লেনদেন কার্যকর করতে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডলারের ব্যাপক সংকট শুরুর পর চার মাস ধরে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে না। প্রকৃত দর আড়াল করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দর নির্ধারণ করার ফলে আন্তঃব্যাংক অকার্যকর হওয়ায় বাজার পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়। এতে রপ্তানি আয় কম থাকা ব্যাংকগুলো উচ্চ দরে রেমিট্যান্স আহরণের পথে ছুটছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৬ টাকা দরে। চলতি বছরের শুরুতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় ডলার বিক্রি করে। এ কয়েক মাসে প্রতি ডলারে ১০ টাকা ২০ পয়সা বাড়িয়ে এখন এ পর্যায়ে এনেছে।

ব্যাংকগুলোতে চলতি বছরের শুরুতে ৯০ টাকার আশপাশের দরে ডলার বিক্রি হচ্ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে ১১২ টাকা পর্যন্ত ওঠে। রেমিট্যান্স আহরণে কোনো কোনো ব্যাংক ১১৪ টাকা পর্যন্ত দর দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে অস্থিরতা কাটানোর চূড়ান্ত চেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশে রোববার ডলার কেনার একটি সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে রপ্তানি বিল নগদায়ন ও রেমিট্যান্সের যে গড় দর দাঁড়াবে, তার সঙ্গে এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা হবে। আর গড় যে দরে ডলার কিনবে, তার সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি নিয়ে আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করবে। দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও নির্ধারিত দরে ডলার কেনাবেচা হয়েছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংক গতকাল মঙ্গলবার ৯৯ টাকায় রপ্তানি বিল ভাঙিয়েছে। আমদানি দায় নিষ্পত্তি করেছে ১০৭ টাকা ৫৮ পয়সায়। বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক ৯৯ টাকায় রপ্তানি বিল ভাঙিয়ে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায় আমদানি দায় নিষ্পত্তি করেছে।

মূলত ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার গড় দরের ভিত্তিতে আমদানিতে এ দর নেওয়া হয়। এর ফলে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমবে। মাঝে কয়েক দিন ১১২ টাকা পর্যন্ত দরে আমদানি দায় নিষ্পত্তি হচ্ছিল। রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ১১৪ টাকা পর্যন্ত দর নিচ্ছিল বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। এখন তা ১০৮ টাকার নিচে নামিয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে আমদানি ব্যয় কমানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত মোট বিক্রি ছাড়িয়েছে ২৮৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার।

এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গত বৃহস্পতিবার ৩৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ উঠেছিল সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের জুলাইয়ে রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করার পর আর কমেনি।

আরো পড়ুন: ২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে ডাচ-বাংলার ‘রকেট’ সেবা

ঢাকা/এসএ