বাজেটকে ‘দ্বিচারিতা’ বলছে সিপিডি

- আপডেট: ০৭:১৪:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ১০৩৩৮ বার দেখা হয়েছে
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে একদিকে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে, অন্যদিকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে কোনো স্বচ্ছতা নেই— এটি নীতিগত ‘দ্বিচারিতা’ বলে সমালোচনা করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হলেও পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়নি।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
একদিকে কালো টাকা বৈধ করার প্রস্তাব, অন্যদিকে অর্থপাচার নিয়ে নীরবতা— এ দুটি পরস্পরবিরোধী এবং সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক— মনে করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, করমুক্ত আয়ের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আগামী অর্থবছরে যোগ হবে, তখন মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে।” এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ সামনে রেখে কিছুটা সংস্কারের কথা চিন্তা করা হলেও সেটি যথেষ্ট নয় বলেও মত দেন তিনি। টার্নওভার ট্যাক্স প্রসঙ্গে মোস্তাফিজ বলেন, টার্নওভার ট্যাক্স একটি চাপ তৈরি করবে। নতুন নতুন জায়গা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে।
বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানে অবহেলার অভিযোগ
গত বছর জুলাই-আগস্টের বেকারত্ববিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে কারণে জুলাই আন্দোলন হয়েছে, এই বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে সেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ নেই।
তিনি বলেন, বাজেটের মূল দর্শন হওয়া উচিত ছিল রাজস্ব নীতির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাস করা। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও এটি প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে। বাজেটে কর ও অন্যান্য নীতির মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নীতিগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত মেলে না।
ছাঁটাই বাজেট, উন্নয়ন দর্শনে মানুষের গুরুত্ব বাড়লেও চ্যালেঞ্জ থেকে যাচ্ছে
সিপিডির বিশ্লেষণে বলা হয়, এবারের প্রস্তাবিত বাজেট আকারে ব্যতিক্রমী, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ছোট। এই বাজেটে প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে সামগ্রিক উন্নয়নের ওপর এবং ভৌত অবকাঠামোর পরিবর্তে মানুষের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে সিপিডির মতে, বাজেটে বেশকিছু ইতিবাচক প্রস্তাব রয়েছে— যার মধ্যে করছাড়, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ ও প্রণোদনা এবং ক্ষতিকর কার্যকলাপের ওপর উচ্চ হারে কর অন্তর্ভুক্ত। তবুও সামগ্রিকভাবে চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেট ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষায়, এই বাজেট জনগণ ও ব্যবসার জন্য বাস্তবিক স্বস্তি আনতে পারত, কিন্তু তা হয়নি।
নৈতিক অবস্থান ও স্বচ্ছতার দাবি
কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে সিপিডির অবস্থান পরিষ্কার করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সিপিডি নৈতিকভাবে তা সমর্থন করে না। অথচ বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট খতিয়ান উপস্থাপন করা হয়নি। একদিকে কালো টাকা বৈধ করার প্রস্তাব, অন্যদিকে অর্থপাচার নিয়ে নীরবতা— সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে এর বৈপরীত্য আছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে: জি এম কাদের
সিপিডি মনে করছে, এবারের বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের অভাব, করনীতিতে বৈষম্য হ্রাসের অনুপস্থিতি এবং অর্থপাচার নিয়ে সরকারের নীরবতা— সবমিলিয়ে এটি একটি নীতিগতভাবে দুর্বল ও রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর প্রস্তাব। এছাড়া রাজস্ব বোর্ডে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হওয়ায় কাঠামোগত দুর্বলতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে— মনে করছে সিপিডি।
ঢাকা/টিএ