০৮:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বানিজ্য ঘাটতি হ্রাসই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্য

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১১:৫৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ১০৩৫১ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: এবারের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো বানিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা। কেননা সমাপ্ত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ১৬.১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে কিন্তু বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করেছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৪.১৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার রপ্তানি করলেও এটা বাংলাদেশের জন্য ভরতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড অর্জন। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পাহাড়সম এই বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে সোমবার সকালে দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে আলোচিত ‘সেপা’ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) নামক বাণিজ্য চুক্তি সই করার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে।

অর্থাৎ দুই দেশ ‘সেপা’ চুক্তির বিষয়ে একমত হবে এবং কত দিনে চূড়ান্ত চুক্তি হবে, চুক্তি হলে কোন দেশ, কতটা লাভবান হবে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি কতটা বাড়বে- এ সবই থাকবে সমঝোতা চুক্তিতে।

বাংলাদেশ এই চুক্তির ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। চূড়ান্ত চুক্তি হলে এবং সেই চুক্তির আওতায় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে প্রতাশা করছে সরকার।

‘এই চুক্তি সই হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি বাড়বে। কমবে বাণিজ্য ঘাটতিও’- এমনটা প্রত্যাশা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো আমরা ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের রপ্তানিকারকরা ভারতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করে, আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনবেন, এমনটাই চাই। আশা করছি, এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কের আট সদস্য দেশের ছয়টিতে বাংলাদেশ যা রপ্তানি করে, এক ভারতেই বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ছয় গুণ বেশি। আবার চীনের পর বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত থেকেই।

এ রকম এক অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ‘সেপা’ চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরমধ্যে আলোচনা শুরু হয় ২০২০ সালে। মূলত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের দিক থেকেই এই চুক্তির প্রস্তাবটি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে।

২০২১ সালের মার্চে বিশ্বব্যাংক ‘সমৃদ্ধির জন্য আন্তযোগাযোগ: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালুর চ্যালেঞ্জ ও  সুযোগ’শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ হয় ভারতের সঙ্গে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের হয় মাত্র ১ শতাংশ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ, আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। আর নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ২৯৭ শতাংশ, বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১৭২ শতাংশ।

‘সেপা’ চুক্তির মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় থাকবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। বাংলাদেশ এখন মুক্ত কোনো দেশের সঙ্গেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেনি।

শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে উভয় দেশের বাণিজ্য কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে, শুল্কস্টেশনগুলোকে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকাকে (সাফটা) কীভাবে আরও কাজে লাগানো যায়—

এসব বিষয়ে দুই দেশ ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা শেষ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এই সমীক্ষা নিয়ে আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তি করার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছাবে দুই দেশ।ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এখন বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভারতের হিসাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের কাছ থেকে যেসব দেশ পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নবম। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল পঞ্চম স্থানে।

ভারতের অর্থবছর এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত (এপ্রিল-মার্চ)। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সে দেশের পণ্যের এক নম্বর আমদানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং বাংলাদেশ।

এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের ওপরে ছিল হংকং। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জার্মানি, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং হংকংয়ে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের পণ্য রপ্তানি বেশি ছিল।

ভারত গত অর্থবছরে সারা বিশ্বে ৪২ হাজার ২০০ কোটি (৪২২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে করেছে ১ হাজার ৬১৬ কোটি ডলার, যা তাদের মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৯৬৯ কোটি ডলার, যা ভারতের রপ্তানির ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে ভারত থেকে সর্বাধিক ৭ হাজার ৬১৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারতের মোট রপ্তনির ১৮ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন থেকে ভারতের রপ্তানি আয় এসেছে যথাক্রমে মোটের ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তুলনামূলক কম দূরত্বের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উচ্চহারে বেড়েছে। বাংলাদেশকে রপ্তানি বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ ভারত থেকে অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করে। আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ হলো তুলাসহ তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল। এ ছাড়া প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ, চিনি, ফলসহ ভোগ্যপণ্য, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক ইত্যাদি।

অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রপ্তানি ভারতীয় ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তারা ১০৯ কোটি ডলারের পণ্য নিয়েছিল। ভারত গত অর্থবছরে তার মোট আমদানির শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে। ভারতের আমদানি গন্তব্যের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম।

বাণিজ্য ঘাটতি ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ভারতের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানির পার্থক্য অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে।বাংলাদেশ ছিল গত অর্থবছরে ভারতের ১৬তম বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে মোট ১ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ ছিল ভারতের ১৯তম বাণিজ্য অংশীদার।

২০.৫৩% প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু নতুন অর্থবছর

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতের বিশাল বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই বাজারে ১২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামিদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে ৩০০টি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে। কারণ দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ১৯ শতাংশ হারে বাড়বে, যা কিনা চীন, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর তুলনায় দ্রুত। ২০২২ সালে ভারতের কাপড়ের বাজার হবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।

‘সেপা’ হলে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত মান পরিপালনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তবে ভারতের বাজারে অনেক সময় অযৌক্তিকভাবে অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয়। এই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রপ্তানিকারকদের নেগোসিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে। একই সঙ্গে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হবে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।’

একই কথা বলেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভারতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শুরু করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যদি ভারতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড় শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’

‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।

‘সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন পারভেজ।

‘ভারতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্র্যান্ড-সচেতনতা। এ কারণে সেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। আবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও দেশটিতে নতুন নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। সেই সুফলই এখন পাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিজেপি ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে ভারতের বাজার ধরতে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হবে বলে আমি আশা করছি।’

বাংলাদেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভারতের দুজন বায়ার আমার কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা দুজন আমার পুরোনো ক্রেতা। এবার তারা এসেছেন আরও বেশি অর্ডার দিতে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আমরা বেশ ভালোভাবেই ভারতের বাজারে প্রবেশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দিকে। প্রথমবারের মতো ভারতে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এটা বাড়ছেই। সত্যি কথা বলতে কি, ভারতের বাজার যদি আমরা মোটামুটি ভালোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কেননা ভারত আমাদের পাশের দেশ, পরিবহন খরচ খুবই কম পড়বে। আমাদের মুনাফা বেশি হবে।’

‘ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যদি কখনও কোনো কারণে সমস্যা হয়, তাহলেও আমাদের সমস্যা হবে না।’

‘সেপা’ চুক্তি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই চুক্তি হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।

দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। সেপা চুক্তির লক্ষ্য হলো—বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উপযোগী সড়ক, বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা।

এ ছাড়া শুল্ক-অশুল্ক বাধা ও অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক অপসারণ করা। এই চুক্তি সই হলে দুই দেশ যৌথভাবে টেস্টিং সার্ভিস ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে পারবে। এসবের মাধ্যমে কর্মসংস্হান বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে যচ্ছে। যদিও ভারত ইতোমধ্যে সাতটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি সই করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দিল্লি পৌঁছবেন। প্রস্তাবিত কর্মসূচি অনুযায়ী পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজঘাটে গান্ধী সমাধিস্হলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতে সিআইআই বা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৭ সেপ্টেম্বর যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কীভাবে উভয় পক্ষই উপকৃত হতে পারে, সে বিষয়টিই সেখানে তুলে ধরবেন তিনি। এরপর তিনি পবিত্র আজমির শরিফ দরগায় যাবেন। ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি।

আরো পড়ুন: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি ২৭ ব্যাংক

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

বানিজ্য ঘাটতি হ্রাসই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্য

আপডেট: ১১:৫৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: এবারের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো বানিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা। কেননা সমাপ্ত অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ১৬.১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে কিন্তু বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করেছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৪.১৮ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার রপ্তানি করলেও এটা বাংলাদেশের জন্য ভরতে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড অর্জন। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

পাহাড়সম এই বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে সোমবার সকালে দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে আলোচিত ‘সেপা’ (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) নামক বাণিজ্য চুক্তি সই করার ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হবে।

অর্থাৎ দুই দেশ ‘সেপা’ চুক্তির বিষয়ে একমত হবে এবং কত দিনে চূড়ান্ত চুক্তি হবে, চুক্তি হলে কোন দেশ, কতটা লাভবান হবে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি কতটা বাড়বে- এ সবই থাকবে সমঝোতা চুক্তিতে।

বাংলাদেশ এই চুক্তির ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। চূড়ান্ত চুক্তি হলে এবং সেই চুক্তির আওতায় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমবে বলে প্রতাশা করছে সরকার।

‘এই চুক্তি সই হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিধি বাড়বে। কমবে বাণিজ্য ঘাটতিও’- এমনটা প্রত্যাশা করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশার কথা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো আমরা ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছি। এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের রপ্তানিকারকরা ভারতে আরও বেশি পণ্য রপ্তানি করে, আরও বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনবেন, এমনটাই চাই। আশা করছি, এই সফরের মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কের আট সদস্য দেশের ছয়টিতে বাংলাদেশ যা রপ্তানি করে, এক ভারতেই বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ছয় গুণ বেশি। আবার চীনের পর বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত থেকেই।

এ রকম এক অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ‘সেপা’ চুক্তি নিয়ে দুই দেশেরমধ্যে আলোচনা শুরু হয় ২০২০ সালে। মূলত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের দিক থেকেই এই চুক্তির প্রস্তাবটি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে।

২০২১ সালের মার্চে বিশ্বব্যাংক ‘সমৃদ্ধির জন্য আন্তযোগাযোগ: দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত পরিবহনব্যবস্থা চালুর চ্যালেঞ্জ ও  সুযোগ’শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ হয় ভারতের সঙ্গে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের হয় মাত্র ১ শতাংশ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ, আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। আর নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা চালু হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ২৯৭ শতাংশ, বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১৭২ শতাংশ।

‘সেপা’ চুক্তির মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় থাকবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। বাংলাদেশ এখন মুক্ত কোনো দেশের সঙ্গেই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেনি।

শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে উভয় দেশের বাণিজ্য কীভাবে ব্যাহত হচ্ছে, শুল্কস্টেশনগুলোকে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকাকে (সাফটা) কীভাবে আরও কাজে লাগানো যায়—

এসব বিষয়ে দুই দেশ ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা শেষ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এই সমীক্ষা নিয়ে আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তি করার ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছাবে দুই দেশ।ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এখন বাংলাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। ভারতের হিসাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের কাছ থেকে যেসব দেশ পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নবম। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল পঞ্চম স্থানে।

ভারতের অর্থবছর এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের মার্চ পর্যন্ত (এপ্রিল-মার্চ)। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে সে দেশের পণ্যের এক নম্বর আমদানিকারক দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে যথাক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং বাংলাদেশ।

এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশের ওপরে ছিল হংকং। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জার্মানি, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং হংকংয়ে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের পণ্য রপ্তানি বেশি ছিল।

ভারত গত অর্থবছরে সারা বিশ্বে ৪২ হাজার ২০০ কোটি (৪২২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে করেছে ১ হাজার ৬১৬ কোটি ডলার, যা তাদের মোট রপ্তানির ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৯৬৯ কোটি ডলার, যা ভারতের রপ্তানির ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে ভারত থেকে সর্বাধিক ৭ হাজার ৬১৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারতের মোট রপ্তনির ১৮ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন থেকে ভারতের রপ্তানি আয় এসেছে যথাক্রমে মোটের ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তুলনামূলক কম দূরত্বের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য উচ্চহারে বেড়েছে। বাংলাদেশকে রপ্তানি বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ ভারত থেকে অনেক ধরনের পণ্য আমদানি করে। আমদানির উল্লেখযোগ্য অংশ হলো তুলাসহ তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল। এ ছাড়া প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ, চিনি, ফলসহ ভোগ্যপণ্য, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক ইত্যাদি।

অন্যদিকে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি।

বাংলাদেশের রপ্তানি ভারতীয় ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ৮১ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তারা ১০৯ কোটি ডলারের পণ্য নিয়েছিল। ভারত গত অর্থবছরে তার মোট আমদানির শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে। ভারতের আমদানি গন্তব্যের বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম।

বাণিজ্য ঘাটতি ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও গত অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। ভারতের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানির পার্থক্য অর্থাৎ বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪১৮ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে।বাংলাদেশ ছিল গত অর্থবছরে ভারতের ১৬তম বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে মোট ১ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে বাংলাদেশ ছিল ভারতের ১৯তম বাণিজ্য অংশীদার।

২০.৫৩% প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু নতুন অর্থবছর

গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ ভারতের বিশাল বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ভারতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই বাজারে ১২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে মাত্র তিনটি অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি হয়েছে, তাও সেটা গত তিন বছরে। তার আগের বছরগুলোয় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন, যা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এ আয় বেশি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের বাজারে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারে নেমে আসে।

২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দেয়। যদিও সেই সুবিধা খুব বেশি কাজে লাগাতে পারছিলেন না বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ২০১১ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের বেশ কিছু কারখানার কাছ থেকে পোশাক নিয়ে টাকা দেয়নি ভারতীয় কোম্পানি লিলিপুট। সে জন্য বেশ কয়েক বছর পোশাক রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে পোশাকের নামিদামি বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড বিক্রয়কেন্দ্র খোলায় তাতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে বলা হয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে ৩০০টি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করছে। কারণ দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ১৯ শতাংশ হারে বাড়বে, যা কিনা চীন, ব্রাজিল ও মেক্সিকোর তুলনায় দ্রুত। ২০২২ সালে ভারতের কাপড়ের বাজার হবে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের।

‘সেপা’ হলে কমবে বাণিজ্য ঘাটতি

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই কাছাকাছি উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। আবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগের উন্নতিও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব। এর জন্য রপ্তানিকারকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত মান পরিপালনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। তবে ভারতের বাজারে অনেক সময় অযৌক্তিকভাবে অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয়। এই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রপ্তানিকারকদের নেগোসিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বর্তমানে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা করছে। বাংলাদেশ যথাযথ নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এ চুক্তি করলে ভারতে রপ্তানি বাড়বে। একই সঙ্গে এ দেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়বে। ভারতের বিনিয়োগকারীদের উৎপাদিত পণ্য তাদের দেশে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানি হবে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে।’

একই কথা বলেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ।

তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভারতে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শুরু করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আমাদের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা-ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় আমরা পোশাক রপ্তানিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। ওই দেশগুলোর মানুষ এখন পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা যদি ভারতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়াতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়।’

দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইভিন্স গ্রুপের কর্ণধার আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের কদর বাড়ছে। ভৌগোলিক কারণেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। এখন থেকে তা বাড়তেই থাকবে বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে। প্রায় দেড় শ কোটি লোকের চাহিদা মেটাতে ভারতকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতেই হবে। ভারতে পোশাক তৈরি করতে যে খরচ হয়, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করলে তার থেকে অনেক কম পড়ে। সে কারণে সব হিসাব-নিকাশ করেই তারা এখন বাংলাদেশ থেকে বেশি বেশি পোশাক কিনছে।’

‘ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এখন বাংলাদেশের কারখানায় পোশাক তৈরি করে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন লিড টাইম কম লাগছে, অন্যদিকে খরচও কম হচ্ছে।

‘সব মিলিয়ে ভারতের বিশাল বাজার বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য আগামী দিনে ‘সুদিন’ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন পারভেজ।

‘ভারতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্র্যান্ড-সচেতনতা। এ কারণে সেখানে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোও শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। আবার আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও দেশটিতে নতুন নতুন বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে শুরু করেছে। সেই সুফলই এখন পাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বিজেপি ও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে ভারতের বাজার ধরতে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হবে বলে আমি আশা করছি।’

বাংলাদেশের নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভারতের দুজন বায়ার আমার কারখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন। তারা দুজন আমার পুরোনো ক্রেতা। এবার তারা এসেছেন আরও বেশি অর্ডার দিতে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আমরা বেশ ভালোভাবেই ভারতের বাজারে প্রবেশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দিকে। প্রথমবারের মতো ভারতে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। এটা বাড়ছেই। সত্যি কথা বলতে কি, ভারতের বাজার যদি আমরা মোটামুটি ভালোভাবে ধরতে পারি, তাহলে আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কেননা ভারত আমাদের পাশের দেশ, পরিবহন খরচ খুবই কম পড়বে। আমাদের মুনাফা বেশি হবে।’

‘ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে যদি কখনও কোনো কারণে সমস্যা হয়, তাহলেও আমাদের সমস্যা হবে না।’

‘সেপা’ চুক্তি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই চুক্তি হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বছরে ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে।

দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। সেপা চুক্তির লক্ষ্য হলো—বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উপযোগী সড়ক, বন্দর ও যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করা।

এ ছাড়া শুল্ক-অশুল্ক বাধা ও অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক অপসারণ করা। এই চুক্তি সই হলে দুই দেশ যৌথভাবে টেস্টিং সার্ভিস ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে পারবে। এসবের মাধ্যমে কর্মসংস্হান বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হবে।

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে যচ্ছে। যদিও ভারত ইতোমধ্যে সাতটি দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি সই করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দিল্লি পৌঁছবেন। প্রস্তাবিত কর্মসূচি অনুযায়ী পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজঘাটে গান্ধী সমাধিস্হলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

ভারতে সিআইআই বা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৭ সেপ্টেম্বর যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ভারতের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কীভাবে উভয় পক্ষই উপকৃত হতে পারে, সে বিষয়টিই সেখানে তুলে ধরবেন তিনি। এরপর তিনি পবিত্র আজমির শরিফ দরগায় যাবেন। ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি।

আরো পড়ুন: নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি ২৭ ব্যাংক

ঢাকা/এসএ