লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড
বিনিয়োগকারীদের ঝুঁলিতে লোকসান: কর্মীদের আয় বেড়েছে ২০৯ শতাংশ

- আপডেট: ০৭:২৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১০৮১৩ বার দেখা হয়েছে
‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’- বাংলার চিরচেনা প্রবাদটি যেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একেবারে মিলে গেছে। সদ্য বিদায়ী বছরে (৩০ জুন ২০২৪) ব্যবসায় লোকসান হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে ২০৯ শতাংশ। অপরদিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র ১ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির এমন দ্বৈতনীতিতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিএনও ব্র্যান্ডের লুব্রিকেন্ট কোম্পানি লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কিন্তু ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফাতো বাড়েইনি, উপরন্তু তা কমতে কমতে এখন লোকসানে গিয়ে ঠেকেছে। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ইস্যু মূল্যও ধরে রাখতে পারেনি। এই অবস্থা থেকে আদৌ কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধুকে ধুকে চলা লুব-রেফ (বাংলাদেশ) জেনারেল ও এডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যয় বাড়িয়েছে। বাড়িয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাও। ৩০ জুন ২০২৩ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ও এডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যয় ছিল ৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৪ টাকা। আর ৩০ জুন ২০২৪ হিসাব বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ২ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৭ টাকা। অর্থাৎ জেনারেল ও এডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যয় প্রায় ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ৩০ জুন ২০২৩ সালে কোম্পানিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার ৮২৬ টাকা। আর ৩০ জুন ২০২৪ হিসাব বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫৯ টাকা। এক্ষেত্রে বেতন ভাতা বেড়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০৯ শতাংশ বেতনভাতা বাড়িয়েছে।
জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির ইস্যুমূল্য ছিল ২৭ টাকা। আর সর্বশেষ সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ১৩ টাকা ৪০ পয়সা। এক্ষেত্রে ইস্যুমূল্য বা শেয়ার দর কমেছে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে। ৩০ জুন ২০২৩ সালের বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিতরণ করেনি কোম্পানিটি। আর সদ্য বিদায়ী বছরের ঘোষিত এক শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ডও বিতরণ করতে পারবে কি-না তা নিয়ে বিনিযোগকারীদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৭৪ টাকা। এই সময়ে কোম্পানির মোট লোকসান হয়েছে ১০ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৪) শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৪৮ টাকা। কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি লোন রয়েছে ২০৭ কোটি ৪১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং স্বল্প মেয়াদী লোন রয়েছে ৯৭ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির মোট লোন রয়েছে ৩০৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: লুজারের শীর্ষে পদ্মা ইসলামী লাইফ
এ প্রসঙ্গে জানতে লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান ও কোম্পানি সচিব মো. মশিউর রহমানকে এসব বিষয়ে জানতে ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪৫ কোটি ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ১৪৪টি। এরমধ্যে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ হিসাব অনুযায়ী উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৩৫.৬৯ শতাংশ, ৯.২২ শতাংশ ও ৫৫.০৯ শতাংশ।
ঢাকা/টিএ