বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাৎ
মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচ্ছে দুদকে

- আপডেট: ০৭:১৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ১০৪৪২ বার দেখা হয়েছে
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য প্রতিষ্ঠান মশিউর সিকিউরিটিজের (ট্রেক নম্বর-১৩৪) বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে বিনিয়োগকারীদের ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই বিপুল অর্থ আত্মসাতের মধ্যে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে লোপাট করা হয়েছে ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি বাবদ আত্মসাৎ করা হয়েছে আরও ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নিতে মশিউর সিকিউরিটিজের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে, যাতে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে দুদকে জরুরি চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থায়ীভাবে স্থগিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অবহিত করবে কমিশন।
বিএসইসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট ডিএসইর পরিদর্শন দল মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতির তথ্য পায়। একইসঙ্গে, বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রির ৯২ কোটি টাকারও বেশি অর্থের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২৮ আগস্ট কমিশনে জমা দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন প্রতিবেদন।
এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২৯ আগস্ট পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটির সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক হিসাব, ব্যাক অফিস সফটওয়্যার, ট্রেডিং কার্যক্রম এবং নেতিবাচক ইকুইটির বিষয়সহ নানা অনিয়ম খতিয়ে দেখেন।
তদন্তে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনহীন ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ই-মেইলে জাল পোর্টফোলিও পাঠাতো, যা দেখতে ছিল মূল পোর্টফোলিওর মতোই। শেয়ার বিক্রি বা ক্রয়ের এসএমএস যাতে গ্রাহকের কাছে না যায়, সে জন্য তাদের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠানের নম্বর বসিয়ে দেওয়া হতো।
এছাড়া, রেকর্ড ডেটের আগে শেয়ার বিক্রি করে পরে কিনে রেখে বিনিয়োগকারীকে লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করা হতো এবং সেই মূল্য পার্থকের টাকা আত্মসাৎ করা হতো। এমনকি অনেক গ্রাহকের পোর্টফোলিওতে থাকা নগদ অর্থও ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মশিউর সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে প্রতারণা চালালেও বিএসইসি ও ডিএসই এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি ফেরত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তারা বলেন, মশিউর সিকিউরিটিজের দুর্নীতির সঙ্গে ডিএসই ও বিএসইসির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেই এত বড় জালিয়াতি সম্ভব হয়েছে। বিএসইসির আইন বিভাগ, মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স বিভাগ এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগের যৌথ প্রস্তাবনার ভিত্তিতে কমিশন বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণ, মানিলন্ডারিং আইনে দুদকে অভিযোগ প্রেরণ, সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের জন্য বিএফআইইউতে চিঠি এবং বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য দুদকে অবহিতকরণ।
আরও পড়ুন: ৪ কোম্পানির ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ
বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। তদন্তে সেগুলো সত্য প্রমাণিত হওয়ায় এখন কমিশন আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
ঢাকা/টিএ