বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে পুঁজিবাজারে ধস

- আপডেট: ০৩:৪৫:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই ২০২২
- / ১০৩৫১ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও মূল্য সূচকের ব্যাপক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ ডিএসই প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমেছে। আজ ডিএসইতে টাকার অংকে লেনদেনের পরিমাণ ৩০০ কোটির ঘরে অবস্থান করছে। যা গত ৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন ডিএসইতে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চেষ্টাই ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ডিএসইতে ৩৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
বড় দর পতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তাদের একাংশ যে কোনো দামে শেয়ার বিক্রি করে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। অন্যদিকে নতুন বিনিয়োগ থেকে হাত গুটিয়ে নেন তারা। এ কারণে এক পর্যায়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা উধাও হয়ে যেতে থাকে। আজ প্রায় ২৪০ কোম্পানির শেয়ারে দৃশ্যমান কোনো ক্রেতা ছিল না।
উল্লেখ, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে সরকার আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সফর করছে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশের রিজার্ভের হিসাবগণনা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের হিসাব দিচ্ছে, সেখানে ফাঁকি আছে। প্রকৃতপক্ষে এই রিজার্ভ সাত/আটশ কোটি ডলার কম হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আইএমএফের এই বক্তব্যে দেশের সাধারণ মানুষের মতো পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তারা মনে করছেন, আইএমএফের বক্তব্য ঠিক হয়ে থাকলে, তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য বেশ উদ্বেগজনক। প্রকৃত রিজার্ভ কম হয়ে থাকলে এক সময় হয়তো জ্বালানি তেল ও খাদ্য পণ্যের মতো অতি জরুরি পণ্য আমদানিকেও ব্যাহত করতে পারে। তাতে গতি হারাবে দেশের অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব আরও বেড়ে যাবে। মান হারাবে টাকা। এই আতঙ্ক প্রবল হয়ে উঠলে তারা নতুন করে শেয়ার না কিনে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তাতে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে গেলে তীব্র দর পতন শুরু হয়ে যায়।
অন্যদিকে সোমবার সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, পরদিন থেকে সারাদেশে লোডশেডিং চলবে। এছাড়া সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ থাকবে। এই খবর বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দেয়। লোডশেডিংয়ের চেয়েও পাম্প বন্ধরাখার ঘোষণা বেশি আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। অনেকেই মনে করতে থাকেন, দেশে জ্বালানী তেলের মজুদ হয়তো অনেক কমে গেছে, আর নতুন করে তেল কেনা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে; নইলে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হবে কেন? তাদের কেউ কেউ বিষয়টির মধ্যে শ্রীলংকার সঙ্কটের প্রথমদিকে অবস্থার আভাস দেখতে পান। এতে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ নগদায়ন করে রাখার হিড়িক শুরু হয়ে যায়।
আজ মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা কম। গতকাল ডিএসইতে ৫১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৬৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫৩ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৪৮ পয়েন্টে।ডিএস৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২১৩ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৩৮২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২১টির, কমেছে ৩৪৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টির।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)ও সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। আজ সিএসই সার্বিক সূচক সিএসপিআই ১৯৫ পয়েন্ট কমেছে। এদিন সিএসইতে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ঢাকা/টিএ