০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্যাংক খাতের অলস অর্থ: নিলামের টাকা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:১৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১
  • / ১০৫০৩ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতের তারল্যের ভারসাম্য রক্ষায় বাজার থেকে নিলামে টাকা তোলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল ছিল তৃতীয় নিলামের দিন। এদিন ব্যাংকগুলো সকালে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার আবেদন করে। তবে দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব আবেদন নাকচ করে টাকা ফিরিয়ে দেয়। ফলে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ দিন ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে কোনো টাকা তোলা হয়নি।

জানা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৯ আগস্ট টাকা তোলা শুরু হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ সর্বশেষ ব্যাংকগুলো থেকে এভাবে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

নিলামের প্রথম দিন ৯ আগস্ট ব্যাংকগুলো থেকে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৭ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ছিল দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ১১ আগস্ট ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা জমা দিতে নিলামে অংশ নেয়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন নিলামে ৬ হাজার ৬৫ কোটি টাকার বিল বিক্রি করে। সেদিন বিক্রি হওয়া ৩০ দিন মেয়াদি বিলের সুদহার ছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে ৯ ও ১১ আগস্টের নিলামে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে গতকাল ৭ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা জমা দিতে আবেদন করে। আর ১৪ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের। নিলামে অংশ নেওয়া ব্যাংকগুলো বিলের বিপরীতে দশমিক ৯৫ শতাংশের বেশি হারে সুদ দাবি করে। তবে দিন শেষে কোনো বিল বিক্রি ও টাকা গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিলামে অংশ নেওয়া ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কেনার জন্য যে টাকার আবেদন করা হয়েছে, সেই টাকা অন্য কোথাও খাটানো সম্ভব হয়নি এদিন। অথচ শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকও টাকা গ্রহণ করেনি। ফলে পুরো দিনে টাকাগুলো অলস পড়ে থাকল। অথচ অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধার দিলেও ১ শতাংশের বেশি সুদ আয় হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো জোট বেঁধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য সব ব্যাংক একই সুদে টাকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। বেশি সুদ দাবি করায় গতকালের নিলাম থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম শুরুর পর ব্যাংক খাতে টাকা খাটিয়ে সুদ আয় কিছুটা বেড়েছে। এখন ব্যাংকগুলো কল মানিতে আগের চেয়ে বেশি সুদে, অর্থাৎ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বা তার বেশি সুদে টাকা খাটাচ্ছে। আগে এ সুদহার ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। কল মানিতে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কিনতে নিলামেও বাড়তি সুদ দাবি করছে ব্যাংকগুলো। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই বেশি সুদে বাজার থেকে টাকা তুলতে চায় না। ২৩, ২৫ ও ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের পরবর্তী নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল নিলামের মাধ্যমে কোনো টাকা গ্রহণ করেনি।

ব্যাংক খাতে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিলামের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো থেকে দৈনিক ভিত্তিতে তারল্যের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও অন্য প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি টাকা দেওয়ার তথ্যও সংগ্রহ শুরু করেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ আগস্ট শুরু হবে বিশেষ পরিদর্শন।

ঢাকা/এসআর

শেয়ার করুন

error: Content is protected ! Please Don't Try!

ব্যাংক খাতের অলস অর্থ: নিলামের টাকা নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক

আপডেট: ১২:১৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ অগাস্ট ২০২১

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতের তারল্যের ভারসাম্য রক্ষায় বাজার থেকে নিলামে টাকা তোলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল ছিল তৃতীয় নিলামের দিন। এদিন ব্যাংকগুলো সকালে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার আবেদন করে। তবে দিন শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব আবেদন নাকচ করে টাকা ফিরিয়ে দেয়। ফলে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ দিন ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে কোনো টাকা তোলা হয়নি।

জানা যায়, ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এ জন্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৯ আগস্ট টাকা তোলা শুরু হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ সর্বশেষ ব্যাংকগুলো থেকে এভাবে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

নিলামের প্রথম দিন ৯ আগস্ট ব্যাংকগুলো থেকে ২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৭ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের সুদ ছিল দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ১১ আগস্ট ব্যাংকগুলো ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা জমা দিতে নিলামে অংশ নেয়। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন নিলামে ৬ হাজার ৬৫ কোটি টাকার বিল বিক্রি করে। সেদিন বিক্রি হওয়া ৩০ দিন মেয়াদি বিলের সুদহার ছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফলে ৯ ও ১১ আগস্টের নিলামে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে গতকাল ৭ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা জমা দিতে আবেদন করে। আর ১৪ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা ছিল রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের। নিলামে অংশ নেওয়া ব্যাংকগুলো বিলের বিপরীতে দশমিক ৯৫ শতাংশের বেশি হারে সুদ দাবি করে। তবে দিন শেষে কোনো বিল বিক্রি ও টাকা গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিলামে অংশ নেওয়া ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কেনার জন্য যে টাকার আবেদন করা হয়েছে, সেই টাকা অন্য কোথাও খাটানো সম্ভব হয়নি এদিন। অথচ শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকও টাকা গ্রহণ করেনি। ফলে পুরো দিনে টাকাগুলো অলস পড়ে থাকল। অথচ অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধার দিলেও ১ শতাংশের বেশি সুদ আয় হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো জোট বেঁধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য সব ব্যাংক একই সুদে টাকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। বেশি সুদ দাবি করায় গতকালের নিলাম থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম শুরুর পর ব্যাংক খাতে টাকা খাটিয়ে সুদ আয় কিছুটা বেড়েছে। এখন ব্যাংকগুলো কল মানিতে আগের চেয়ে বেশি সুদে, অর্থাৎ ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বা তার বেশি সুদে টাকা খাটাচ্ছে। আগে এ সুদহার ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। কল মানিতে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল কিনতে নিলামেও বাড়তি সুদ দাবি করছে ব্যাংকগুলো। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই বেশি সুদে বাজার থেকে টাকা তুলতে চায় না। ২৩, ২৫ ও ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের পরবর্তী নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল নিলামের মাধ্যমে কোনো টাকা গ্রহণ করেনি।

ব্যাংক খাতে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিলামের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো থেকে দৈনিক ভিত্তিতে তারল্যের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও অন্য প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি টাকা দেওয়ার তথ্যও সংগ্রহ শুরু করেছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ আগস্ট শুরু হবে বিশেষ পরিদর্শন।

ঢাকা/এসআর