০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

বড় টুর্নামেন্টে দরকার হবে আরও ভালো ফিল্ডিং

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১
  • / ৪১৪৮ বার দেখা হয়েছে

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: অনেকেই ‘এম.এস ধোনি : দ্য আনটোল্ড ষ্টোরি’ সিনেমাটি দেখেছেন। ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়কের জন্ম থেকে শুরু করে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে। কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে কোথায় যাওয়া যায়, সিনেমাটির মাধ্যমে দৃশ্যায়ান করা হয় সেটিই। 

তবে সবকিছু ছাপিয়ে একটা বিষয় আজকের আলোচনায় আনতে চাইছি। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় লাভের পর ভিডিও কনফারেন্সে ধোনি নির্বাচকদের কাছে ৩ জন খেলোয়াড়কে ওডিআই দল থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন। নির্বাচকরা নারাজ ছিলেন, কারণ সেই তিনজন তখনও ভালো ব্যাট করতো। 

কিন্তু ধোনির যুক্তি ছিল, ‘তারা তিনজন খুব ধীর গতির ফিল্ডার এবং বর্তমান ক্রিকেট ফরম্যাট এই ধরনের ফিল্ডিং যায় না। এখানে বয়স বিবেচ্য বিষয় নয়, ফিটনেস মুখ্য। শুধু ব্যাটিং এর মাধ্যমে বিপক্ষ দলকে ভয় পাওয়ানো যায় না। একজন বোলার উইকেট নেবে, একজন ব্যাটসম্যান এক ম্যাচে ভালো রান করবে, হয়তো অন্যদিন রান করতে পারবে না।’ 

‘কিন্তু একজন ভালো ফিল্ডার প্রতিটা সময় রান বাঁচাতে পারে, প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দলের মধ্যে যদি দুই-তিনজন খারাপ ফিল্ডিং করে, তবে তা ভালো ফিল্ডারদের উপরও প্রভাব ফেলে। দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে লক্ষ্য ধরে এই পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী মনে করে নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’ 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মহেন্দ্র সিং ধোনির কথার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি ২০০৭ এর পরে আমরা দেখেছি। অনেকেই তখন রাজনৈতিক গন্ধ পেয়েছিলেন। কিন্তু সফলতা যে সূত্র ধরে আসে, সেটাকে মেনে না নিয়ে উপায় নেই। তার কথা মতো ভারতীয় দলে পরিবর্তন আনা হয়েছিল এবং ২০১১ এর বিশ্বকাপও ভারত জিতেছিল। 

বাংলাদেশের মানুষ খেলা পাগল জাতি। করোনার কারণে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ নেই। অনেকেই মাঠে বসে খেলা দেখতে না পারার জন্য আফসোস করছে। যাই হোক, সময়ের পরিক্রমায় সব খেলাকে ছাপিয়ে ক্রিকেট এখন এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।  একটা টিকিট পাওয়ার আশায় এদেশের মানুষ সারা রাত ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, খাওয়া-দাওয়া ভুলে রাস্তার ওপরই ঘুমিয়ে পড়ে। টিকিট পাওয়ার আনন্দে সামান্য ক্লান্তিও খেলা পাগল মানুষদের স্পর্শ করতে পারে না। সবকিছুই নিজের দেশের খেলাকে ভালোবেসে করা। 

শাস্তি হবে জেনেও প্রিয় দেশের অধিনায়কের সহচার্যের জন্য নিরাপত্তা বলয় ফাঁকি দিয়ে ভক্ত যখন মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা খেলার প্রতি নিখাত ভালোবাসাই নির্দেশে করে। এই ভালোবাসার কারণে খেলায় সামান্য ভুলেও তারা কষ্ট পায়। অনেকেই ক্রিকেটকে শুধু খেলা হিসেবে মানতে নারাজ। ক্রিকেট এখন ভালোবাসার নাম, আবেগের নাম, প্রেরণার নাম, এগিয়ে যাওয়ার শক্তির নাম। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার প্রথম দিনের ওয়ানডে ম্যাচ শেষ হলো। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ২৫৭ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ২২৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে। অর্থাৎ ৩৩ রানে স্বাগতিক বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জিতে গেল। এখন ২৫৭ রান বড় কোন স্কোর না। 

তবুও ভালো বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের কারণে ওই স্কোর নিয়েও শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলেছে। আমাদের খেলোয়াড়রা বেশ কিছু ভালো ক্যাচ ধরেছে। মোটামুটি ভালো ফিল্ডিংও করেছে। তবে ফিল্ডিংয়ে আগ্রাসী মনোভাবের অভাব বোধ করেছি। যেটা ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডিং দেখলে বোঝা যায়। ওদের কাছ থেকে একটি রান পেতেও প্রতিপক্ষ দলকে বেগ পেতে হয়।আমাদের ফিল্ডিংয়ে আগ্রাসী মনোভাব আমাদের তৈরি করতে হবে। কোনোভাবেই ফিল্ডিংয়ে যেন আমাদের অবনমন না হয়, সেদিকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে ভয়ের কাঁপন ঢুকানোর জন্য ভালো ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব অনেক। আত্মবিশ্বাসের অভাব যেন আমাদের পেয়ে না বসে, সেদিকে ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিশ্চিত হতে হবে।  

মেধার অভাব আমাদের কখনও ছিল না। প্রয়োজন শুধু সময়ের কার্যকরী ব্যবহার। ক্রিকেটে আমাদের এগিয়ে যাওয়া, অন্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে, এটাই এদেশের ক্রিকেট পাগল মানুষদের চাওয়া। আর বড় টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফল পেতে হলে, ফিল্ডিংয়ে ভালো করার বিকল্প নেই।

লেখক : যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন:

শেয়ার করুন

x
English Version

বড় টুর্নামেন্টে দরকার হবে আরও ভালো ফিল্ডিং

আপডেট: ০১:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মে ২০২১

বিজনেস জার্নাল ডেস্ক: অনেকেই ‘এম.এস ধোনি : দ্য আনটোল্ড ষ্টোরি’ সিনেমাটি দেখেছেন। ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়কের জন্ম থেকে শুরু করে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে। কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে কোথায় যাওয়া যায়, সিনেমাটির মাধ্যমে দৃশ্যায়ান করা হয় সেটিই। 

তবে সবকিছু ছাপিয়ে একটা বিষয় আজকের আলোচনায় আনতে চাইছি। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় লাভের পর ভিডিও কনফারেন্সে ধোনি নির্বাচকদের কাছে ৩ জন খেলোয়াড়কে ওডিআই দল থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন। নির্বাচকরা নারাজ ছিলেন, কারণ সেই তিনজন তখনও ভালো ব্যাট করতো। 

কিন্তু ধোনির যুক্তি ছিল, ‘তারা তিনজন খুব ধীর গতির ফিল্ডার এবং বর্তমান ক্রিকেট ফরম্যাট এই ধরনের ফিল্ডিং যায় না। এখানে বয়স বিবেচ্য বিষয় নয়, ফিটনেস মুখ্য। শুধু ব্যাটিং এর মাধ্যমে বিপক্ষ দলকে ভয় পাওয়ানো যায় না। একজন বোলার উইকেট নেবে, একজন ব্যাটসম্যান এক ম্যাচে ভালো রান করবে, হয়তো অন্যদিন রান করতে পারবে না।’ 

‘কিন্তু একজন ভালো ফিল্ডার প্রতিটা সময় রান বাঁচাতে পারে, প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দলের মধ্যে যদি দুই-তিনজন খারাপ ফিল্ডিং করে, তবে তা ভালো ফিল্ডারদের উপরও প্রভাব ফেলে। দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে লক্ষ্য ধরে এই পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী মনে করে নির্বাচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’ 

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

মহেন্দ্র সিং ধোনির কথার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি ২০০৭ এর পরে আমরা দেখেছি। অনেকেই তখন রাজনৈতিক গন্ধ পেয়েছিলেন। কিন্তু সফলতা যে সূত্র ধরে আসে, সেটাকে মেনে না নিয়ে উপায় নেই। তার কথা মতো ভারতীয় দলে পরিবর্তন আনা হয়েছিল এবং ২০১১ এর বিশ্বকাপও ভারত জিতেছিল। 

বাংলাদেশের মানুষ খেলা পাগল জাতি। করোনার কারণে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ নেই। অনেকেই মাঠে বসে খেলা দেখতে না পারার জন্য আফসোস করছে। যাই হোক, সময়ের পরিক্রমায় সব খেলাকে ছাপিয়ে ক্রিকেট এখন এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।  একটা টিকিট পাওয়ার আশায় এদেশের মানুষ সারা রাত ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, খাওয়া-দাওয়া ভুলে রাস্তার ওপরই ঘুমিয়ে পড়ে। টিকিট পাওয়ার আনন্দে সামান্য ক্লান্তিও খেলা পাগল মানুষদের স্পর্শ করতে পারে না। সবকিছুই নিজের দেশের খেলাকে ভালোবেসে করা। 

শাস্তি হবে জেনেও প্রিয় দেশের অধিনায়কের সহচার্যের জন্য নিরাপত্তা বলয় ফাঁকি দিয়ে ভক্ত যখন মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তখন সেটা খেলার প্রতি নিখাত ভালোবাসাই নির্দেশে করে। এই ভালোবাসার কারণে খেলায় সামান্য ভুলেও তারা কষ্ট পায়। অনেকেই ক্রিকেটকে শুধু খেলা হিসেবে মানতে নারাজ। ক্রিকেট এখন ভালোবাসার নাম, আবেগের নাম, প্রেরণার নাম, এগিয়ে যাওয়ার শক্তির নাম। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার প্রথম দিনের ওয়ানডে ম্যাচ শেষ হলো। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ২৫৭ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ২২৪ রানে অলআউট হয়ে গেছে। অর্থাৎ ৩৩ রানে স্বাগতিক বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জিতে গেল। এখন ২৫৭ রান বড় কোন স্কোর না। 

তবুও ভালো বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের কারণে ওই স্কোর নিয়েও শ্রীলঙ্কাকে আটকে ফেলেছে। আমাদের খেলোয়াড়রা বেশ কিছু ভালো ক্যাচ ধরেছে। মোটামুটি ভালো ফিল্ডিংও করেছে। তবে ফিল্ডিংয়ে আগ্রাসী মনোভাবের অভাব বোধ করেছি। যেটা ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডিং দেখলে বোঝা যায়। ওদের কাছ থেকে একটি রান পেতেও প্রতিপক্ষ দলকে বেগ পেতে হয়।আমাদের ফিল্ডিংয়ে আগ্রাসী মনোভাব আমাদের তৈরি করতে হবে। কোনোভাবেই ফিল্ডিংয়ে যেন আমাদের অবনমন না হয়, সেদিকে অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে। প্রতিপক্ষ দলের মধ্যে ভয়ের কাঁপন ঢুকানোর জন্য ভালো ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব অনেক। আত্মবিশ্বাসের অভাব যেন আমাদের পেয়ে না বসে, সেদিকে ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিশ্চিত হতে হবে।  

মেধার অভাব আমাদের কখনও ছিল না। প্রয়োজন শুধু সময়ের কার্যকরী ব্যবহার। ক্রিকেটে আমাদের এগিয়ে যাওয়া, অন্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে, এটাই এদেশের ক্রিকেট পাগল মানুষদের চাওয়া। আর বড় টুর্নামেন্টে ভালো ফলাফল পেতে হলে, ফিল্ডিংয়ে ভালো করার বিকল্প নেই।

লেখক : যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন: