ভারতকে আবারও কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রে

- আপডেট: ০১:২৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
- / ১০৪৩৪ বার দেখা হয়েছে
ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের কারণে ভারতকে আবারও কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন একটি কমিশন। ২০২২ সালজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করার দায়ে ভারতের বিরুদ্ধে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
এ নিয়ে টানা চার বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই সুপারিশ করা হলো। সোমবার (১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের সরকারকে টানা চতুর্থ বছরের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার কালো তালিকায় যুক্ত করার সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন কমিশন। ওই কমিশন জানিয়েছে, ২০২২ সালজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভারতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়া অব্যাহত ছিল।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
আল জাজিরা বলছে, সোমবার নিজেদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। সেই প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের কারণে ভারতকে কালো তালিকায় রাখার সুপারিশ করার পাশাপাশি ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসাবে মনোনীত করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএসসিআইআরএফ।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন এই প্যানেলটি ২০২০ সাল থেকে ভারতকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ দেশটিকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে উপাধি দেওয়ার জন্য আবেদন করছে। এই ধরনের উপাধি কোনও সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ‘পদ্ধতিগত, চলমান (এবং) গুরুতর লঙ্ঘনের’ জন্য অভিযুক্ত করে এবং এতে করে সেই সরকার বা দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
সংস্থাটি বলেছে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার ২০২২ সালে জাতীয়, রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নীতির প্রচার ও প্রয়োগ করেছে। এর মধ্যে ধর্মান্তরকরণ বা ধর্মপরিবর্তন, হিজাব পরা এবং গোহত্যাকে লক্ষ্য করে আইন প্রণয়নও রয়েছে। আর এই ধরনের পদক্ষেপ মুসলমানদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিসহ খ্রিস্টান, শিখ, দলিত, আদিবাসী ও তফসিলি উপজাতিসহ আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ মুসলিম, প্রায় ২ শতাংশ খ্রিস্টান এবং ১.৭ শতাংশ শিখ। আর দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু।
আরও পড়ুন: ঈদযাত্রায় ৩৪১ যানবাহন দুর্ঘটনায় নিহত ৩৫৫
স্বাধীন মার্কিন এই প্যানেলটি জোর দিয়ে জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বে ভারত সরকার দেশটিতে সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে দমন করে চলেছে। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং যারা তাদের পক্ষে সমর্থন করছে তাদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে।
আল জাজিরা বলছে, মার্কিন এই প্যানেল শুধুমাত্র সুপারিশ প্রস্তাব করে থাকে এবং নীতি নির্ধারণ করার কোন ক্ষমতা এই প্যানেলের নেই। এছাড়া মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও স্বাধীন এই কমিশনের অবস্থান গ্রহণ করবে এমন প্রত্যাশাও কম। কারণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা অব্যাহত রেখেছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি।
ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ভারতের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ‘ভারতকে একটি বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসাবে মনোনীত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্বের স্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিখাতে শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। ২০২২ সালে উভয় দেশের বাণিজ্য ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করেছে।’
এমনকি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি-২০, জি-৭ এবং কোয়াড লিডারস সামিটসহ একাধিক অনুষ্ঠানে একে অপরের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন বলেও ইউএসসিআইআরএফ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
অবশ্য ভারত সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ইউএসসিআইআরএফ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন এই প্যানেলের গত বছরের একই ধরনের সুপারিশের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ‘অজ্ঞাত’ এবং ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ মন্তব্য করার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।
বাগচি সেই সময়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে বহুত্ববাদী সমাজ হিসাবে ভারত ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রতি যত্নশীল।’
আরও পড়ুন: সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু
ইউএসসিআইআরএফ’র সর্বশেষ প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল। তারা বলছে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বছরের পর বছর ধরে যা বলে আসছে ইউএসসিআইআরএফ’র সর্বশেষ রিপোর্টে সেই বিষয়টিই পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল বলেছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অধীনে ভারতের সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে। বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’
অবশ্য শুধু ভারত নয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের জন্য আরও বেশ কয়েকটি দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম।
সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং ভিয়েতনামকে নতুন করে কালো তালিকায় যুক্ত করার এবং মিয়ানমার, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, ইরান, নিকারাগুয়া, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, সৌদি আরব, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানকে পুনর্বিন্যাস করতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউএসসিআইআরএফ।
ঢাকা/এসএম