ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য কমেছে ৩১ শতাংশ

- আপডেট: ০৭:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মে ২০২৩
- / ১০৫০৯ বার দেখা হয়েছে
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কমেছে বাংলাদেশের। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ ভারতীয় অর্থবছরে (এপ্রিল ২০২২-মার্চ ২০২৩) দুই দেশের বাণিজ্য কমেছে গত অর্থবছরের তুলনায় ৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ডলার সংকটের কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা। তবে জুন থেকে দুই দেশের মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় (টাকা ও রুপি) বাণিজ্য শুরুর পর এ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব চুক্তি সই ও বাস্তবায়নও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করবে বলে অভিমত তাদের।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য হয়েছিল ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ওই সময়ে দুই দেশের মধ্যে মোট পণ্য আমদানি-রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। পরের অর্থবছরে (এপ্রিল ২০২১-মার্চ ২০২২) তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারে। গত মার্চে সমাপ্ত ২০২২-২৩ ভারতীয় অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অর্থমূল্য ছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এ হিসেবে এক অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আকার কমেছে ৫৬৩ কোটি ডলারের কিছু বেশি বা ৩১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বাণিজ্য খাতের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় যোগাযোগ ও পণ্যের প্রাপ্যতা—এ দুই প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যে কিছু মাত্রায় ভারতনির্ভরতা রয়েছে বাংলাদেশের। গত অর্থবছরে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানি কমায় ডলারের ওপর চাপ কিছু কমেছে।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থমূল্য বিবেচনায় ভারত থেকে বাংলাদেশে শীর্ষ আমদানি পণ্য হলো তুলা। আগের অর্থবছরে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ শতাংশ কমে তা দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। দ্বিতীয় শীর্ষ পণ্য হলো সিরিয়াল বা খাদ্যশস্য। বাংলাদেশে ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি কমেছে ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি খনিজ পণ্য ও জ্বালানি আমদানিও হ্রাস পেয়েছে ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
মূলত সুতা উৎপাদনকারীরাই দেশে ভারত থেকে তুলা আমদানি করেন। তাদের বক্তব্য হলো ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই সদ্যসমাপ্ত ভারতীয় অর্থবছরে দেশটি থেকে পণ্যটির আমদানি কমেছে। ভারতে এ তুলা থেকে উত্পন্ন সুতায় তৈরি পোশাকের বাজার সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তা সামনের দিনগুলোয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ ভারতীয় অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পণ্য রফতানিও হ্রাস পেয়েছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। তবে দেশটিতে এ সময় বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের রফতানি বেড়েছে। নিট ও ওভেন পোশাকের ক্ষেত্রে এ প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৩৮ ও ৩০ শতাংশ।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তিতেই ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ গড়ে উঠেছে বলে মনে করছেন খাতটির উদ্যোক্তারা। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক রফতানিকারকরা ভারত থেকে তুলা-সুতা-কাপড় কিনে থাকেন। আমি আশা করি যেকোনো সংকটে আমরা দেশটিতে রফতানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারব। সার্বিকভাবে ভারতে তৈরি পোশাক রফতানি ইতিবাচক থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আরও পড়ুন: চুক্তিভিত্তিক ব্যাংক কর্মকর্তারা পাবে না গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা
তিনি আরো বলেন, ‘ভারত কৃত্রিম তন্তুতে অনেক শক্তিশালী। আমরাও এখন কটনবহির্ভূত রফতানি বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম তন্তুতে জোর দিচ্ছি। বাংলাদেশে এখনো কৃত্রিম তন্তুর সক্ষমতা বা প্রাপ্যতা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে একদিকে আমরা ভারত থেকে কাঁচামাল আনছি, অন্যদিকে আমাদের রফতানিও বাড়ছে। অর্থাৎ দ্বিপক্ষীয় পারস্পরিক সহযোগিতার জায়গাটি তৈরি হয়েছে। এ সহযোগিতাই আমাদের ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সহায়তা করবে বলে আমি মনে করি।’
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে তা কমেছে। আবার অনেক পণ্যের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে আমদানি কমলেও অভ্যন্তরীণ ব্যবসার আকার ও সক্ষমতা বেড়েছে।
ঢাকা/এসএ