বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উল্টো সুর!
মাশরুর রিয়াজ হচ্ছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান: স্বাগত জানাচ্ছে কর্মকর্তারা

- আপডেট: ০৯:৪৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪
- / ১১২৮১ বার দেখা হয়েছে
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজকে মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলো বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তবে পরেদিনই এ হুশিয়ারির বিপক্ষে ওই সংগঠনের কার্যকরী পরিষদের সাত জনের মধ্যে ছয় জনই পাল্টা বিবৃতি দেন। আর এতেই উল্টো সমালোচনার মুখে পড়ে আরেক বিবৃতির মাধ্যমে উল্টো সুর ধরেছেন সংগঠনের সভাপতি মো: সাইফুর রহমান।
শুধু তাই নয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ড. মাশরুর রিয়াজকে স্বাগত জানাতেও প্রস্তুত ওই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। তবে রাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন প্রস্তাব কোন ফোরামে উপস্থাপনের অধিকার অ্যাসোসিয়েশনের নেই। তারপরও কারা পুঁজিবাজারের মতো এতো সংবেদনশীল খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রককে দায়িত্ব নেয়ার পূর্বেই তার নিয়োগ নিয়ে ‘জল ঘোলা’ করা হলো- এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন -এর সভাপতি মো: সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে গত ১১ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান পদত্যাগের পর ১৩ আগস্ট সরকার ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে নিয়োগ প্রদান করে। ড. রিয়াজকে নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই সোশ্যাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এসব নেতিবাচক সংবাদের সুযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারী চক্র কমিশনের অধিকাংশ কর্মচারী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
পরবর্তীতে এদিন কমিশনের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে ড. রিয়াজের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদানে সভাপতিকে বাধ্য করা হয়, যা কখনোই সভাপতির ব্যক্তিগত অভিমত নয়। মূলত: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত দূরভিসন্ধিমূলক তথ্যের উপর ভিত্তি করে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন এই ধরণের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার যেহেতু ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে তাঁর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে নিয়োগ প্রদান করেছে, এ ক্ষেত্রে কমিশনের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোনো আপত্তি নাই। ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাগত জানানোর বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে এসেছে এবং তাঁকে কমিশনে সাদরে গ্রহণ করতে এসোসিয়েশনের কোন আপত্তি নাই।
জানা গেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান পদ দখল করে থাকা শিবলী রুবাইয়াতের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় ড. এম. মাসরুর রিয়াজকে। তবে অজানা কারণে এতে বেকে বসে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সদ্য নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান ড. রিয়াজকে নিয়ে নানা অপপ্রচার।
আরও পড়ুন: মাশরুর রিয়াজকে নিয়ে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি দুরভিসন্ধিমূলক
এদিকে গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ড. এম. মাসরুরের বিষয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন এবং তাকে চান না বলে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার। অন্যদিকে গতকাল (১৩ আগস্ট) নিয়ম বহির্ভূত মাসরুরকে নিয়ে এমনটি করা হয়েছে বলে ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে একই সংগঠনের ৭ সদস্যের কার্যনির্বাহি পরিষদের ৬ জন। একইসঙ্গে মাসরুরকে নিয়ে দেওয়া বিবৃতির সঙ্গে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই জানান সেই ৬ জন কার্যনির্বাহি সদস্য। এতে করে স্পষ্ট হয়ে যায় এই বির্তকের পেছনে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড. রিয়াজকে না চাওয়ার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে রয়েছে একজন সিনিয়র নির্বাহি পরিচালকের কমিশনার হওয়া ও একজন কমিশনারের চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন বিফলে যাওয়া। যদিও এখনো ২টি কমিশনার পদ খালি রয়েছে। এছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া ২ জন কমিশনার এখনো রয়েছেন। যাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কারন এরইমধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া চেয়ারম্যান ও ২ জন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ নিয়োগ বাতিল বা পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেখানে চেয়ারম্যানকে মানা আর না মেনে নেওয়ার কোন বিষয় থাকতে পারে না। এভাবে যদি মানা না মানার বিষয় হয় তাহলে অনেক জায়গায় অনেক কিছুই মানা যায় না। এই মানা না মানার সংস্কৃতিকে উৎসাহ দেওয়া ঠিক না। তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে তা তদন্ত করে দেখা হোক। আর যদি অভিযোগ মিথ্যা হয় তাহলে তার নিয়োগের বিষয়ে রাইট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোন সেমিনার ও প্রোগ্রামে দেখা হলেই যে তার পূর্ব পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ হবে এমন কোন কথা নাই। প্রকৃত অর্থে একটা লোকের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে, সে যদি অনুপযুক্ত হয়, সে যদি ওই ফিল্ডে ওইটা হ্যান্ডেল করতে পারবে না বলে মনে হয় তা হলে তাকে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু ভিতর থেকে যদি কেউ বলে আমি চাইনা আমি চাইনা এটা আবার ঠিক না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এতোসব ষড়যন্ত্রের পরও বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন নিয়োগ পাওয়া মাসরুর রিয়াজই আসছেন। আগামী সপ্তাহের শুরুতে তিনি এ দায়িত্বে যোগ দিতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
নতুন দায়িত্ব নিতে তিনি পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান পদ ও অন্যান্য দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পদে তার নিয়োগ নিয়ে যেসব বিষয় আলোচনায় আসে সেগুলোর মীমাংসা দিনের প্রথমভাগেই হয়। এ কারণে এ পদে মাসরুরের নিয়োগ বাতিল করে বিকল্প নিয়ে আর আলোচনা হয়নি।
এরপর বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে যোগ দেওয়ার শর্ত পালনে নিজের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান পদ ও অন্যান্য দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিশ্ব ব্যাংক ও আইএফসিতে দীর্ঘদিন কাজ করা মাসরুর রিয়াজ।
গত মঙ্গলবার রাতে নিয়োগ আদেশের পর বুধবার তিনি বিএসইসিতে যোগ দেননি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা অফিস সময় পর্যন্ত তার অপেক্ষায় ছিলেন। একই সঙ্গে বুধবার তার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনটি বাতিল বা নতুন কোনো সিদ্ধান্তও আসেনি। এ দুই কারণে বিএসইসিসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে তার নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে নানা কৌতুহল তৈরি হয়।
জানা যায়, বিএসইসির দশম চেয়ারম্যান হিসেবে মাসরুর অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত গত ১০ অগাস্ট আগের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন।
সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে মাসরুর সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে গবেষণাতেও যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ধারণা দিতে তার নেতৃত্বাধীন পলিসি এক্সচেঞ্জ সম্প্রতি মেট্টোপলিনটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডিস্ট্রির সঙ্গে মিলে পিএমআই সূচক প্রকাশ করে আসছে।
ঢাকা/এইচকেজে