০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

মুদ্রানীতিতে বাড়তে পারে নীতি সুদহার ও ডলার দর

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১০:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪
  • / ১১৯৪৭ বার দেখা হয়েছে

ফাইল ফটো

বারবার সুদহার বাড়িয়েও দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও আগামী মুদ্রানীতিতে ফের বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন মুদ্রা ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখা। বারবার বিভিন্ন দাওয়াই দিয়েও এই সূচকে লাগাম টানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে ডলারের দর ১১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যে ক্রলিং পেগ বাদ দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে মুদ্রা বিনিময় হার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তথ্য বলছে, দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত মোটা দাগে এসবই হচ্ছে এখন প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যার মধ্যেই আগামী ১৪ জুলাই চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যে কোনোদিন ঘোষণা হবে মুদ্রানীতি। চলতি অর্থবছরও মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী বাড়বে নীতি সুদহার। পাশাপাশি বর্তমান বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলারের দরে আসবে পরিবর্তন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, বর্তমানে নির্ধারিত নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হতে পারে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ক্রলিং পেগ অনুযায়ী বর্তমানে ডলারের নির্ধারিত দর ১১৭ টাকা। এর থেকে ১ টাকা কম-বেশিতে মার্কিন এই মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান রয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দরে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডলারের দর দাঁড়াতে পারে ১২০ টাকা। পাশাপাশি যে উদ্দেশ্যে ক্রলিং পেগ করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা আসতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কয়েকদিনের মধ্যে মুদ্রানীতির বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টিতে নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি যেহেতু কাজে দিচ্ছে, সেহেতু এখনই ক্রলিং পেগ তুলে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আগামী মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলক হবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও। আর ডলারের দর দেড় থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ছাড়া ক্রলিং পেগ বাতিলের ঘোষণাও আসতে পারে।

আরও পড়ুন: ৬০৯ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার

অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এবার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে আমদানি বিল পরিশোধ নিয়ে আগের মতো ঝামেলার অভিযোগ নেই। কার্ব মার্কেটেও (খোলাবাজার) ব্যাংক রেটের কাছাকাছি ডলার পাওয়া যাচ্ছে। আবার আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণও যোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্সও আসছে ভালো। জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। সবমিলিয়ে রিজার্ভ যে কোনো মূল্যে ভালো অবস্থানে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বড়দের জন্য পুঁজিবাজার আছে, তারা তহবিল সংগ্রহের জন্য সেখানে যাক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা না থাকলে সেটি প্রণয়ন কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ নেই।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

x

মুদ্রানীতিতে বাড়তে পারে নীতি সুদহার ও ডলার দর

আপডেট: ১০:৩৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

বারবার সুদহার বাড়িয়েও দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও আগামী মুদ্রানীতিতে ফের বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন মুদ্রা ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে রাখা। বারবার বিভিন্ন দাওয়াই দিয়েও এই সূচকে লাগাম টানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে ডলারের দর ১১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যে ক্রলিং পেগ বাদ দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে মুদ্রা বিনিময় হার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

তথ্য বলছে, দেশের আর্থিক খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মার্কিন ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় টাকার সংকট, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত মোটা দাগে এসবই হচ্ছে এখন প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যার মধ্যেই আগামী ১৪ জুলাই চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যে কোনোদিন ঘোষণা হবে মুদ্রানীতি। চলতি অর্থবছরও মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী বাড়বে নীতি সুদহার। পাশাপাশি বর্তমান বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলারের দরে আসবে পরিবর্তন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, বর্তমানে নির্ধারিত নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হতে পারে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ক্রলিং পেগ অনুযায়ী বর্তমানে ডলারের নির্ধারিত দর ১১৭ টাকা। এর থেকে ১ টাকা কম-বেশিতে মার্কিন এই মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান রয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দরে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডলারের দর দাঁড়াতে পারে ১২০ টাকা। পাশাপাশি যে উদ্দেশ্যে ক্রলিং পেগ করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা আসতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। কয়েকদিনের মধ্যে মুদ্রানীতির বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টিতে নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি যেহেতু কাজে দিচ্ছে, সেহেতু এখনই ক্রলিং পেগ তুলে দেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আগামী মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলক হবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার আরও বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও। আর ডলারের দর দেড় থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ ছাড়া ক্রলিং পেগ বাতিলের ঘোষণাও আসতে পারে।

আরও পড়ুন: ৬০৯ কোটি টাকার এলএনজি কিনবে সরকার

অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এবার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে আমদানি বিল পরিশোধ নিয়ে আগের মতো ঝামেলার অভিযোগ নেই। কার্ব মার্কেটেও (খোলাবাজার) ব্যাংক রেটের কাছাকাছি ডলার পাওয়া যাচ্ছে। আবার আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণও যোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্সও আসছে ভালো। জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। সবমিলিয়ে রিজার্ভ যে কোনো মূল্যে ভালো অবস্থানে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বড়দের জন্য পুঁজিবাজার আছে, তারা তহবিল সংগ্রহের জন্য সেখানে যাক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা না থাকলে সেটি প্রণয়ন কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ নেই।

ঢাকা/এসএইচ