রেকর্ড ভাঙল খেলাপি ঋণ, ছাড়াল ৫ লাখ কোটি টাকা

- আপডেট: ১২:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ১০৩৬৮ বার দেখা হয়েছে
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা—যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
মাত্র তিন মাসে এ খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আর গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৫১ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারি–জুন সময়েও ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা বা ৫৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে নানা সুবিধা ও নীতিগত ছাড় থাকায় বড় ঋণগ্রহীতারা পুরোনো ঋণ ‘নিয়মিত’ দেখাতে পারতেন। একবার ঋণ নিলেও নতুন নামে আবারও ঋণ নিয়ে পূর্বের দেনা আড়াল করতেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এসব অনিয়ম রোধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। চলতি বছরের মার্চ থেকে নির্ধারিত সময় পার হলেই ঋণকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শিল্পখাতের দুরবস্থা, উদ্যোক্তাদের কারাবরণ বা বিদেশে পলায়ন, আর ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত আদায় না হওয়াই এই ঋণ বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। তখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঋণ শ্রেণিকরণ হতো। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঋণ পুনঃতপশিল সুবিধা চালু হয় এবং পরে বিভিন্ন ছাড়ের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হতো।
আরও পড়ুন: বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ২১ শতাংশ
বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন কোনো ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে ৩৬টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে ২০টি ব্যাংক এবছর কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। আগামী বছর ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে কোনো ব্যাংকই লভ্যাংশ দিতে পারবে না—এমন নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আগে ৬ মাস অনাদায়ে ঋণ খেলাপি হতো। ২০১৯ সালে সময়সীমা বাড়ানো হয়, পরে করোনা পরিস্থিতিতে আরও ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন নিয়মে প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে, যার ফলে ঋণের আসল মাত্রাটা প্রকাশ পাচ্ছে।”
ঢাকা/এসএইচ