০৯:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত আট বাংলাদেশি উদ্ধার

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ১২:৪২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১০৪৮৩ বার দেখা হয়েছে

প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনসহ চার শতাধিক মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধার অভিযান

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় পাহাড়ি ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ হাত থেকে ফেরত আসা অপহৃত শিক্ষার্থীসহ আট বাংলাদেশিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। চার দিন পর বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় অপহৃতরা টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া এলাকায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর ভোর ৪টায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টেকনাফ মডেল থানার নিয়ে আসেন। তাদের উদ্ধারে তিন দিন ধরে প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনসহ চার শতাধিক মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধার অভিযানে নেমেছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা কয়েকটি পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে অপহরণকারীদের শনাক্ত এবং অপহৃতদের উদ্ধারে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টায় চাপে পড়ে অপহরণকারী তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা ফেরত আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক কেউ রেহাই পাবে না।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অপহৃতরা হলেন– জাহাজপুরা এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার ছেলে রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে করিম উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক ও নুর মোহাম্মদ, রশিদ আহমদের ছেলে আবসার।

বৃহস্পতিবার সকালে থানা প্রাঙ্গণে অপহৃত নুরুল হকের ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘চার দিন পর অপহরণকারীরা আমার ভাইসহ আট জনকে ছেড়ে দিয়েছে। রাত ৩টায় আমরা তাদের জাহাজপুরা বনিছড়া খাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। তাদের সবাইকে নির্মমভাবে মারধর করেছে অপহরণকারীরা। আর একদিন হলে হয়তো আমার ভাই মারা যেতো। আমার ভাইসহ সবাইকে থানায় নিয়ে এসে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’

ফেরত আসা ভাইয়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের অভিযানের পরে ভয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল পাহাড়ে অভিযানের সময় তারা (অপহৃতরা) পুলিশের দলকে দেখতে পায়, কিন্তু মুখে কাপড় বাঁধা থাকায় চিৎকার করতে পারেনি। তবে আভিযানিক দলকে দেখে অপহরণকারীরা তাদের অস্ত্র তাক করেছিল। আর একটু সামনে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে মেরে হয়তো পালিয়ে যেতো। গত চার দিন সবাইকে খুব অত্যাচারের করেছে।’

রিদুয়ানের বাবা মমতাজ মিয়া বলেন, ‘রাত ৩টায় ছেলে ফিরে এসেছে। কিন্তু তার শরীরে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভোরে পুলিশ এসে ছেলেকে নিয়ে গেছে। আমরা সবাই অনেক খুশি তাদের ফিরে পেয়ে।’

বাহারছড়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ অপহৃত আট জন ফিরে এসেছে। হয়তো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের চাপের মুখে পড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল তারা।’

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ের ঢালে-জঙ্গলে বিভিন্ন দুর্গম জায়গায় পুলিশের অভিযান চলমান ছিল। খবর পেলাম, বুধবার দিবাগত রাতে অপহৃতরা বাড়ি ফিরেছেন। তারা একটু সুস্থ হোন। তারপর তাদের কাছ থেকে অপহরণের কারণসহ বিস্তারিত জানতে পারবো।’

এর আগে গত রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার একটি পাহাড়ঘেঁষা খালে মাছ ধরতে গেলে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের একটি দল ওই আট জনকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। সে সময় স্বজনরা ছয় লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে তৎপরতাও চালিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ে ড্রোনসহ চিরুনি অভিযান শুরু করেন।

ঢাকা/এসএ

শেয়ার করুন

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত আট বাংলাদেশি উদ্ধার

আপডেট: ১২:৪২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২২

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ায় পাহাড়ি ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ হাত থেকে ফেরত আসা অপহৃত শিক্ষার্থীসহ আট বাংলাদেশিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। চার দিন পর বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় অপহৃতরা টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া এলাকায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর ভোর ৪টায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে টেকনাফ মডেল থানার নিয়ে আসেন। তাদের উদ্ধারে তিন দিন ধরে প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনসহ চার শতাধিক মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধার অভিযানে নেমেছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা কয়েকটি পাহাড়ে ড্রোন উড়িয়ে অপহরণকারীদের শনাক্ত এবং অপহৃতদের উদ্ধারে চিরুনি অভিযান চালিয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টায় চাপে পড়ে অপহরণকারী তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা ফেরত আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এর পেছনে যারাই জড়িত থাকুক কেউ রেহাই পাবে না।’

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

অপহৃতরা হলেন– জাহাজপুরা এলাকার বাসিন্দা রশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা কামাল, মমতাজ মিয়ার ছেলে রিদুয়ান, রুস্তম আলীর ছেলে সেলিম উল্লাহ, ছৈয়দ আমিরের ছেলে করিম উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক ও নুর মোহাম্মদ, রশিদ আহমদের ছেলে আবসার।

বৃহস্পতিবার সকালে থানা প্রাঙ্গণে অপহৃত নুরুল হকের ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘চার দিন পর অপহরণকারীরা আমার ভাইসহ আট জনকে ছেড়ে দিয়েছে। রাত ৩টায় আমরা তাদের জাহাজপুরা বনিছড়া খাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করি। তাদের সবাইকে নির্মমভাবে মারধর করেছে অপহরণকারীরা। আর একদিন হলে হয়তো আমার ভাই মারা যেতো। আমার ভাইসহ সবাইকে থানায় নিয়ে এসে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’

ফেরত আসা ভাইয়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের অভিযানের পরে ভয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। গতকাল পাহাড়ে অভিযানের সময় তারা (অপহৃতরা) পুলিশের দলকে দেখতে পায়, কিন্তু মুখে কাপড় বাঁধা থাকায় চিৎকার করতে পারেনি। তবে আভিযানিক দলকে দেখে অপহরণকারীরা তাদের অস্ত্র তাক করেছিল। আর একটু সামনে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের সবাইকে মেরে হয়তো পালিয়ে যেতো। গত চার দিন সবাইকে খুব অত্যাচারের করেছে।’

রিদুয়ানের বাবা মমতাজ মিয়া বলেন, ‘রাত ৩টায় ছেলে ফিরে এসেছে। কিন্তু তার শরীরে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভোরে পুলিশ এসে ছেলেকে নিয়ে গেছে। আমরা সবাই অনেক খুশি তাদের ফিরে পেয়ে।’

বাহারছড়া ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ অপহৃত আট জন ফিরে এসেছে। হয়তো পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের চাপের মুখে পড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এর আগে অপহরণের পর পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল তারা।’

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য পাহাড়ের ঢালে-জঙ্গলে বিভিন্ন দুর্গম জায়গায় পুলিশের অভিযান চলমান ছিল। খবর পেলাম, বুধবার দিবাগত রাতে অপহৃতরা বাড়ি ফিরেছেন। তারা একটু সুস্থ হোন। তারপর তাদের কাছ থেকে অপহরণের কারণসহ বিস্তারিত জানতে পারবো।’

এর আগে গত রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার একটি পাহাড়ঘেঁষা খালে মাছ ধরতে গেলে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের একটি দল ওই আট জনকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। সে সময় স্বজনরা ছয় লাখ টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনতে তৎপরতাও চালিয়েছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ে ড্রোনসহ চিরুনি অভিযান শুরু করেন।

ঢাকা/এসএ