শাপলা চত্বরে নিহতদের তালিকা প্রকাশ

- আপডেট: ১১:৪১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
- / ১০৪০১ বার দেখা হয়েছে
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রায় ১১ বছর আগে সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ এবং ৬ মে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূতভাবে তাদের হত্যা করে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
সোমবার (১৯ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অধিকারের পেজে তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে ৬১ জনের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হেফাজত সংশ্লিষ্টদের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। তাদের ভাষ্য, হেফাজতের ওই সমাবেশে যারা যোগ দিয়েছিল তাদের সবাই মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র। আর এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে এতিম। হত্যাকাণ্ডের পর সরকার সব লাশ গুম করে দেওয়ায় ওই সব এতিম শিশুদের তথ্য অধিকারের পক্ষেও সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য তাদের এ দাবির বিষয়ে অধিকারের কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলাচত্বরে হেফাজতের সমাবেশের পর সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সারাদিনে মিছিল-সমাবেশে ক্লান্ত মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকদে বড় অংশ মাঝরাতের দিকে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিকে অন্ধকারে নিরীহ শিশু-কিশোরদের উপর চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম। আকষ্মিক সাউন্ড গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আতঙ্কিত ছাত্ররা দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। এদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ আছে। নিহতদের লাশ সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ট্রাকে করে নিয়ে দূরে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ আছে। তাছাড়া পরের দু’দিন ঢাকার কয়েকটি কবরস্থানে স্বাভাবিক সময়ের কয়েকগুণ বেশি বেওয়ারিশ লাশ কবর দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সন্দেহ করা হয়, লাশগুলো নিহত ছাত্রদের। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও ওয়াসার গাড়ি পানি ছিটিয়ে মতিঝিলের রক্তের দাগ মুছে ফেলে বলেও অভিযোগ আছে। যদিও আওয়ামীলীগ সরকার কোনোদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৫ হত্যা মামলা
হেফাজতের সমাবেশে নিরাপত্তাবাহিনীর হামলায় যে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আওয়ামীলীগ সরকারের দাবি যে ঠিক নয়, তা অধিকারের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগে পর্যন্ত তারা দাবি করে আসছিল, হেফাজতের সমাবেশে কোনো প্রাণহানি হয়নি।
অধিকার জানিয়েছে, ২০১৩ সালে অধিকার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত সেই নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে এবং ৬১ জন নিহত উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার অধিকার এর তৎকালীন সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং সংগঠনের বর্তমান পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০০৯) এর ৫৭ ধারায় মামলা করে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সাল থেকে অধিকার এবং এর নেতাদের ওপর নিপীড়ন, নজরদারি, কর্তৃপক্ষের দ্বারা হয়রানি এবং সরকারপন্থি মিডিয়া দ্বারা নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দমনপীড়ন শুরু করে। এক দশকেরও বেশি সময় বিচারিক হয়রানির পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াৎ রায় ঘোষণা করেন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের একটি সত্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য আইসিটি আইনের অধীনে আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে ১০,০০০ টাকা জরিমানাসহ দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩১ দিন বন্দি থাকার পর সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদ তাদের উভয়ের জামিন মনজুর করলে গত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ দুজনেই কারাগার থেকে মুক্তি পান।
নিহতদের তালিকা দেখতে লিঙ্কে ক্লিক করুন।
ঢাকা/এসএইচ