শীর্ষ দশে অধিকাংশ দুর্বল-লোকসানি কোম্পানি

- আপডেট: ০৮:৪৮:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০৩৭৫ বার দেখা হয়েছে
অস্তিত্ব সংকটে থাকা, ব্যবসায়ীকভাবে দুর্বল, লোকসানি ও কোনো রকমে ক্যাটাগরি ধরে রাখা অধিকাংশ কোম্পানি সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে (১৬ ফেব্রুয়ারি- ২০ ফেব্রুয়ারি) শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৮টিই বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। আর ‘জেড’ ও ‘এ’ ক্যাটাগরিতে একটি করে কোম্পানি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ার কারসাজিকারকরা প্লানিং করে এসমস্ত দুর্বল কোম্পানিকে বেছে নিয়েছে কারসাজি করার জন্য। এসব দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে উচ্চ দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তারা মার্কেট ত্যাগ করবে। পরবর্তীতে আশঙ্কাজনকভাবে এসব কোম্পানির শেয়ার কমে গেলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না পারবে বিক্রি করতে, না পারবে ধরে রাখতে। তাই সময় থাকতেই এসমস্ত শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
কোম্পানিগুলো হচ্ছে-
এস. আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড: সম্প্রতি তুমুল বিতর্কিত এস. আলম গ্রুপের কোম্পানি এটি। এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটি সদ্য বিদায়ী বছরের (৩০ জুন ২০২৪) জন্য এখনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫৭ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯.৮০ টাকা। আর সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪০ টাকা। কোম্পানিটি বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।
শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড: চলতি হিসাব বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান করেছে ১.৩৫ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ০.১৬ টাকা। এর আগের হিসাব বছরে যা ছিল ০.৪১ টাকা। বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৬০ শতাংশের বেশি।
সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য নামমাত্র ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ২৭ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ছিল ১১.৫০ টাকা। আর সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ১৪.৭০ টাকা।
গোল্ডেন হার্ভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: চলতি হিসাব বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.১৫ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৯২ টাকা, মোট লোকসান করেছে ১৯ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা, এই বছরে কোম্পানিটি ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য নামমাত্র ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা প্রতিষ্ঠানটির গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর ছিল ১১.৩০ টাকা। আর সদ্য বিদায়ী বছরে শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ১৩.৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।
ইনটেক: চলতি বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.১৯০ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র ০.২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির সঞ্চিতি আয় (রিজার্ভ) লোকসানে রয়েছে ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২১ টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩০ টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা প্রতিষ্ঠানটির সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১৫ শতাংশের বেশি।
ফু ওয়াং ফুড লিমিটেড: চলতি হিসাব বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.২৫০ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩১ টাকা। এর আগের বছরে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছিল ০.৫৭ টাকা। অর্থাৎ গত দুই বছর ধরের অধিক সময় ধরে কোম্পানিটি লোকসান করে যাচ্ছে। কোম্পানিটির সঞ্চিতি আয়ে লোকসান রয়েছে ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটি ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স রুলস অনুসারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সমষ্টিগতভাবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে মাত্র ৭.৮৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স রুলস ভঙ্গ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর ছিল ১৩.৪০ টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর এসে দাঁড়িয়েছে ১৫.৪০ টাকা।
সোনারগাঁও টেক্সটাইলস লিমিটেড: চলতি হিসাব বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.২১০ টাকা। সদ্য বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ০.২৭ টাকা, এই বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা প্রতিষ্ঠানটির সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর ছিল ৪১.৪০ টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা।
ওয়েস্টার্ণ মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড: কোম্পানিটি সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে টপটেন গেইনারের তালিকায় থাকলেও বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। সদ্য বিদায়ী হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার প্রতি মাত্র ০.০৪ টাকা আয় করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড প্রদান করছে না। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৯.৩০ টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১০.৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি।
ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড: সদ্য বিদায়ী হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য মাত্র ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।একই বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ০.২০ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২১.৯০ টাকা। আর সদ্য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা হয়েছে ২৫.১০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুন: ডিএসইতে বিদায়ী সপ্তাহে পিই রেশিও কমেছে
গোল্ডেন সন লিমিটেড: চলতি হিসাব বছরের প্রথম অর্ধবার্ষিকীতে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান করেছে ০.৩৪০ টাকা। সদ্য বিদায়ী হিসাব বছরে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৬৮ টাকা। এর আগের বছর লোকসান হয়েছিল ০.৭৫ টাকা। অর্থাৎ গত দুই বছরের অধিক সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে রয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সব সময় স্টক ডিভিডেন্ড দিতে নিরুৎসাহিত করে আসছে। কিন্তু সদ্য বিদায়ী বছরে প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ১২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে বিনিয়োগকারীদের জন্য। আর মাত্র ১.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা কোম্পানিটির গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে শেয়ার দর ছিল ১২.৯০ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪.৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি।
ঢাকা/টিএ