সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে: প্রধানমন্ত্রী

- আপডেট: ০১:০৮:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১০৩৮৯ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: দেশের সব বিভাগে পর্যায়ক্রমে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
গণভবন থেকে ভার্চুযালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেবা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবা যেন তৃণমূল পর্যন্ত নিশ্চিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসকদের আরও আন্তরিক হতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই, তখন কর্তব্যরত অনেক চিকিৎসক-নার্স এতে বাধা দেয়। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়টি টিকে যায়।
এমনকি ’৯৬ সালে আমরা যে ১১ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলাম, যেটি কিনা সফল ছিল, বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে সব বন্ধ করে দেয়। তবে বন্ধ করে দেওয়ার যুক্তি ছিল এই ক্লিনিকগুলো যদি চালু থাকে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ নাকি শুধু নৌকায় ভোট দেবে। তাদের ভোট দেবে না। তাই জনগণের যে স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা আমরা করেছিলাম, সেটি তারা বন্ধ করে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অল্প সময়ের মধ্যেই ইউনিয়ন পর্যন্ত ১০ বেডের হাসপাতালসহ গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের পর একের পর এক মিলিটারি ক্যু হতে থাকে, ক্ষমতা দখল করে। যার ফলে মানুষের যে সেবা পাওয়ার অধিকার ছিল, তা থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে। সেই সময় বাংলাদেশে কোনও মেডিক্যাল হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এই প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করি।
‘এই প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ, আমি জানি না বিএনপি-জামায়াত সব সময় এটার বিরোধিতা করেছে। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা, দেয়াল ভেঙে ফেলা, ভিত্তিপ্রস্তরে কালি মেখে দেওয়াসহ অনেক কাজই তারা করে গিয়েছিল। তারপর আবার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত না করে রোগী যা ছিল, তার তিন গুণ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছিল। এমন এমন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছিল, যারা কোনও প্র্যাকটিস করতো না, ব্যবসা বাণিজ্য করতো, তাদের নিয়োগ দিয়েছিল। অনেক অরাজকতা তারা সৃষ্টি করে। দেশের প্রতি জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ তাদের কখনোই ছিল না। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির আখড়া হিসেবে এটিকে গড়ে তুলেছিল। এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছিলেন, দেশকে উন্নত করতে চেষ্টা করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে উন্নীত করার জন্য সব তিনি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি একটি সংবিধান দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানে স্বাস্থ্যসেবা যে মানুষের অধিকার তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল।
‘আজকের এই প্রতিষ্ঠান একসময় শাহবাগ হোটেল ছিল’, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, হোটেলটিকে একসময় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট করা হয়। সেই সময় এখানে যারা কাজ করেছিলেন, তিনজন অধ্যাপককে নিয়ে এটি গড়ে ওঠে। আমি অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামকে সব সময় স্মরণ করি, তিনি এই ইনস্টিটিউটকে যুগোপযোগী করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং ১৯৭২ সালে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সেটি কার্যকর করে যেতে পারেননি জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবার হত্যার পর সব উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।
বিএসএমএমইউ জানায়, নতুন এ হাসপাতালের পথচলার মাধ্যমে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার নির্ভরশীলতা কমবে এবং অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটির রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে থাকবে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ছয়টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে আটটি করে শয্যা। হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি-স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা।
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৩০০ চিকিৎসক ও ১ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করার কথা রয়েছে। ছয়টি বিশেষায়িত সেন্টারের মাধ্যমে চলা এ হাসপাতালে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের পাশাপাশি দুই বছরের জন্য ৫৬ জন কোরিয়ান কনসালট্যান্ট কাজ করবেন। যারা দেশীয় জনবল আরও দক্ষ করতে ভূমিকা রাখবেন।
এ ছাড়া হাসপাতালটিতে প্রথম পর্যায়ে থাকবে এক্সিডেন্টাল ইমারজেন্সি, অটিজম সেন্টার, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অপথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার।
এখানে বিশ্বমানের চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, রোবোটিক অপারেশন, জিন থেরাপির ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। থাকবে উন্নত মানের আধুনিক ব্যবস্থাপনার বহির্বিভাগ, ইনফো ডেস্ক এবং ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনারের বিদায়ী সাক্ষাৎ
ঢাকা/টিএ