সাড়ে ৬ ঘণ্টা ইডির জিজ্ঞাসাবাদে বিপর্যস্ত নুসরাত

- আপডেট: ১২:৩২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ১০৩৭৮ বার দেখা হয়েছে
আর্থিক দুর্নীতি ও আর্থিক প্রতারণা মামলায় ভারতের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা -এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির দপ্তরে হাজিরা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ও টলিউড অভিনেত্রী নুসরাত জাহান। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে ইডির পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছান নুসরাত। হাতে নথি নিয়ে ইডি দফতরে প্রবেশ করতে দেখা যায় প্রাদেশিক ক্ষমতাসীন দলের এই তারকা সাংসদকে। এরপর দুই দফায় সাড়ে ৬ ঘণ্টার বেশি ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন নুসরাত।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে তলব করে ইডি। সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তাকে ডেকে পাঠানো হলেও এদিন সময়ের আগেই সকাল ১০টা ৪৩ নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন অভিনেত্রী সাংসদ। সাড়ে ৬ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে।
জানা গিয়েছে, সেভেন্থ সেন্স ইনফ্রাস্টাচার সংস্থার ডিরেক্টর পদে থাকাকালীন নুসরাতের ভূমিকা, অভিনেত্রী-সাংসদের আর্থিক লেনদেনের প্রসঙ্গ, নুসরাতের বিপুল সম্পত্তি, ফ্ল্যাট ও বিদেশ যাত্রার পিছনে আয়ের উৎস, প্রতারিতদের অভিযোগের পরেও কেন টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি এমন কী ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় যে টাকা নেওয়া হয়েছিল তা কোথায় কী কী কাজে ব্যবহার করা হয় তাও নুসরাতের থেকে জানতে চাওয়া হয়।
ইডি সূত্রে পাওয়া খবর, তদন্তে সহযোগিতা করেছেন নুসরাত। তার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। এবং তার দেওয়া সব ধরনের নথিপত্র হতে দেখছে তদন্তকারী সংস্থাটি।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল ৫টা ১১ মিনিট নাগাদ তাকে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বের হতে দেখা যায় নুসরাত কে।ইডি দফতর থেকে বেরোনো মাত্রই তাঁকে নানা প্রশ্ন করা হলে নুসরত বলেন, ‘ইডির সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছি’। দীর্ঘ জেরায় এফিন রীতিমত বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন নুসরত। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপও ধরা পড়ে। যদিও এরপরে আবারো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলব করা হয়েছে কী না এই বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলেও বিষয়টি এড়িয়ে যান নুসরত।
এদিন নুসরাত ছাড়াও সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামে যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সংস্থার অন্য দুই ডিরেক্টর রাকেশ সিং ও অভিনেত্রী রূপলেখা মিত্র কেও তলব করেছিল ইডি। রাকেশ সিংহ হাজিরা দিলেও তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে সময় লাগবে জানিয়ে এদিন হাজিরা এড়িয়ে যান রুপলেখা মিত্র।
প্রসঙ্গত কলকাতা সংলগ্ন চলতি বছরের শুরুতে প্রবীণ ব্যাংক কর্মীদের রাজারহাটে ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে নুসরাত জাহান, রাকেশ সিং, রূপলেখা মিত্রসহ মোট ৮ জনের নাম। নুসরাতের বিরুদ্ধে ২৩ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। অভিযোগ, ২০১৪ সালে তাঁর সংস্থা ৪২৯ জনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে নিয়েছিল ৩ বিএইচকে ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে। ৯ বছর কেটে যাওয়ার পর আজও ফ্ল্যাট পাননি কেউ।
সেই সময় তিন বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা নিয়ে, ফ্ল্যাট না দিয়ে, প্রতারণার ওই টাকায় তিনি পাম অ্যাভিনিউতে নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।
প্রতারিতরা প্রথমে গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, প্রভাবশালী নুসরাতের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়নি। আলিপুর আদালতে গিয়ে মামলা ফাইল করে। সেসময় আদালত দু’বার নুসরতের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। অভিযোগ, সেসময়ে হাজিরা এড়িয়েছিলেন নুসরত। সম্প্রতি বিজেপির যুব নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা এই প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষগুলোকে নিয়ে কিছুদিন আগে ইডি দফতরে সশরীরে গিয়ে নালিশ জানিয়ে আসেন।
আরও পড়ুন: প্রতিমাসে পাঁচজনকে তাবলিগে পাঠাবো: পলাশ
এরপরেই কলকাতা প্রেস ক্লাবে নুসরাত সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন, তিনি কোনও আর্থিক দুর্নীতিতে যুক্ত নন। সংস্থাটির ডিরেক্টর থাকাকালীন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা ফেরত দিয়ে দেন।
এদিকে, নুসরাতের এমন দাবির পর ওই কোম্পানির আরেক ডিরেক্টর রাকেশ সিং-পাল্টা দাবি করেন সেভেন সেন্সেস ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের থেকে কোনও ঋণই নাকি দেওয়া হয়নি নুসরত জাহানকে। নুসরতের বক্তব্যে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/এসএম