১১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৫ বছরের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরলেন শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা

বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক:
  • আপডেট: ০১:১৪:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ১০৪১৯ বার দেখা হয়েছে

হাসিনা সরকার তার রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ করার জন্য তথ্য উপাত্তকে নিজের মতো ব্যবহার করে একটি উন্নয়ন আখ্যান তৈরি করেছিল। যেখানে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিপুল বিদেশি ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে। যা পরিশোধ করতে কয়েক প্রজন্ম লাগবে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে। এর থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এর আগে রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেন, মোট ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এই কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।

গত সরকারের আমলে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে উন্নয়নের বয়ান তৈরি হতো। এই তথ্য-উপাত্তের মধ্যে বড় রকমের ঘাটতি আছে বলেও জানান কমিটির প্রধান।

তিনি বলেন, কোনো মন্ত্রীর কাছে মূল্যস্ফীতি কত বাড়তো, কোন মন্ত্রী কতদিন ফাইল ধরে রাখতো সেই গল্প এই প্রতিবেদনে নেই। তবে এই গল্প একদিন করা যাবে। উন্নয়নের বয়ানের সবচেয়ে বড় খলনায়ক তথ্য-উপাত্ত।

এছাড়া অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা অলীক এবং একেবারেই অবাস্তব ছিল বলেও জানান ড. দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, একটি ২ বছরে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা খুব দ্রুত দরকার। যদি এই পরিকল্পনা না থাকে তাহলে আমরা বিদেশিদের থেকে সাহায্য পাবো না। তাদের ভরসা জায়গা হবে এই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও এখনো এলডিসি সূচকের তিনটিতেই বাংলাদেশ উপরে আছে। তাই এলডিসি থেকে উত্তরণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক, রাজনীতিবিদ ও আমলা–এই তিন মিলে চোরচক্র তৈরি হয়ে। চোরতন্ত্র তৈরি হয় মূলত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গত পাঁচ মাসে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা এখনো জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা হয়নি। এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। আগামী ৬ মাস দেশ ও জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। নতুন বাজেটের প্রণয়নের আগে সরকার কীভাবে অর্থনৈতিক কাজ করবে তার একটি রূপরেখা ও সংস্কারের পদ্ধতিতে সরকারের উচিত জনগণের সামনে তুলে ধরা। চেষ্টা করছি হবে, এটুকু বললে হবে না- সরকারকে দায়বদ্ধতা নিতে হবে।

সরকারের তথ্যভাণ্ডারে মনোযোগ দিয়ে তথ্য যোগ করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতিগতভাবে যারা পিছিয়ে আছে, পিছিয়ে পড়া নারী-শিশু এদের কোনো তথ্য এই ভাণ্ডারে নেই। এদেরকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে একটি উন্নয়ন ফোরাম গঠন করা উচিত। যারা বৈদেশিক সাহায্য দেয়, যারা বাংলাদেশের রফতানির বাজার, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী যারা বিনিয়োগে আশ্বস্ত হয় না, আর যেখানে বাংলাদেশ মানবসম্পদ পাঠায় এই চার গোষ্ঠীকে নিয়ে উন্নয়ন ফোরাম গঠন করতে হবে।

আরও পড়ুন: শ্বেতপত্র কমিটির কাজ চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয়: ড. দেবপ্রিয়

কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগে বলতাম বাংলাদেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি আছে। এখন আর ঝুঁকি না বাংলাদেশ আসলে মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। বাংলাদেশের পদ্ধতিগত সংস্কার দরকার। হিসাবনিকাশ, তথ্য-উপাত্তে ওপরের লেভেলের যে হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি সেটির সবকটি দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব জায়গায় সংস্কার না হলে পুরোনোরাই আবারও প্রতিস্থাপিত হবে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগে দুর্নীতির একটা বড় অংশ দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ১০০ টাকা দুর্নীতি হলে ৬০ টাকায় দেশ থেকে পাচার হয়েছে। মেগা প্রকল্পে যে লুটপাট হয়েছে কয়েক প্রজন্ম ধরে তা শোধ করতে হবে। বৈদেশিক ঋণের সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড এগুলো নিয়ে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। ঋণ পুনর্বিবেচনা কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী নেপাল ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাবে। এখানে আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। নেপালের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের থেকে কম। এলডিসি সূচকে দুটি নেপাল পূরণ করেছে, বাংলাদেশ তিনটি। সে হিসাবে বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাওয়ার সব ধরনের সক্ষমতা আছে।

কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম তামিম বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন দুর্নীতির সব দ্বার খুলে দিয়েছিল। এই আইনকে অপব্যবহার করে দেশের জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ দুর্নীতি হয়েছে। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ব্যাপারে আমাদের বলা হয়েছে ইভিনিং পিক হবে ২৭ হাজার মেগাওয়াট। অথচ প্রাক্কলন ঠিক করা হলো ৪০ হাজার মেগাওয়াট। এই অদ্ভুত প্রাক্কলনের ফাঁদে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য এম আবু ইউসুফ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর‍) যে দাবি করে এক কোটির ওপর টিন নাম্বার আছে, এটি অ্যাক্টিভ টিন না। যে ৪৩ লাখ মানুষ কর রিটার্ন দেয়, তার সিংহভাগ সরকারি কর্মকর্তা। ১৫-১৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর রিটার্ন জমা দেয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে ১ কোটির ওপর ট্যাক্স পেয়ার আইডেন্টিফাই করতে পারলে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। রাজস্ব নিয়ে যে পূর্বাভাস দেয়া হয়, তার কোনো গঠনমূলক কাজ নেই। কোনো পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ না করে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। যে পরিমাণ ট্যাক্স হোল্ডিং নাম্বার আছে সেটি এনবিআরের সঙ্গে ইন্টারঅপারেবেলিটির ব্যবস্থা করা গেলে করের আওতা বাড়বে।

ঢাকা/এসএইচ

শেয়ার করুন

১৫ বছরের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরলেন শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা

আপডেট: ০১:১৪:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪

হাসিনা সরকার তার রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণ করার জন্য তথ্য উপাত্তকে নিজের মতো ব্যবহার করে একটি উন্নয়ন আখ্যান তৈরি করেছিল। যেখানে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে বিপুল বিদেশি ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে। যা পরিশোধ করতে কয়েক প্রজন্ম লাগবে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে। এর থেকে উত্তরণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও যথাযথ সংস্কার প্রয়োজন। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এর আগে রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেন।

অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুকটুইটারলিংকডইনইন্সটাগ্রামইউটিউব

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেন, মোট ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এই কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।

গত সরকারের আমলে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে উন্নয়নের বয়ান তৈরি হতো। এই তথ্য-উপাত্তের মধ্যে বড় রকমের ঘাটতি আছে বলেও জানান কমিটির প্রধান।

তিনি বলেন, কোনো মন্ত্রীর কাছে মূল্যস্ফীতি কত বাড়তো, কোন মন্ত্রী কতদিন ফাইল ধরে রাখতো সেই গল্প এই প্রতিবেদনে নেই। তবে এই গল্প একদিন করা যাবে। উন্নয়নের বয়ানের সবচেয়ে বড় খলনায়ক তথ্য-উপাত্ত।

এছাড়া অষ্টম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা অলীক এবং একেবারেই অবাস্তব ছিল বলেও জানান ড. দেবপ্রিয়।

তিনি বলেন, একটি ২ বছরে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা খুব দ্রুত দরকার। যদি এই পরিকল্পনা না থাকে তাহলে আমরা বিদেশিদের থেকে সাহায্য পাবো না। তাদের ভরসা জায়গা হবে এই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হলেও এখনো এলডিসি সূচকের তিনটিতেই বাংলাদেশ উপরে আছে। তাই এলডিসি থেকে উত্তরণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক, রাজনীতিবিদ ও আমলা–এই তিন মিলে চোরচক্র তৈরি হয়ে। চোরতন্ত্র তৈরি হয় মূলত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গত পাঁচ মাসে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা এখনো জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা হয়নি। এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। আগামী ৬ মাস দেশ ও জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। নতুন বাজেটের প্রণয়নের আগে সরকার কীভাবে অর্থনৈতিক কাজ করবে তার একটি রূপরেখা ও সংস্কারের পদ্ধতিতে সরকারের উচিত জনগণের সামনে তুলে ধরা। চেষ্টা করছি হবে, এটুকু বললে হবে না- সরকারকে দায়বদ্ধতা নিতে হবে।

সরকারের তথ্যভাণ্ডারে মনোযোগ দিয়ে তথ্য যোগ করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। জাতিগতভাবে যারা পিছিয়ে আছে, পিছিয়ে পড়া নারী-শিশু এদের কোনো তথ্য এই ভাণ্ডারে নেই। এদেরকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে একটি উন্নয়ন ফোরাম গঠন করা উচিত। যারা বৈদেশিক সাহায্য দেয়, যারা বাংলাদেশের রফতানির বাজার, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী যারা বিনিয়োগে আশ্বস্ত হয় না, আর যেখানে বাংলাদেশ মানবসম্পদ পাঠায় এই চার গোষ্ঠীকে নিয়ে উন্নয়ন ফোরাম গঠন করতে হবে।

আরও পড়ুন: শ্বেতপত্র কমিটির কাজ চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয়: ড. দেবপ্রিয়

কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আগে বলতাম বাংলাদেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি আছে। এখন আর ঝুঁকি না বাংলাদেশ আসলে মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। বাংলাদেশের পদ্ধতিগত সংস্কার দরকার। হিসাবনিকাশ, তথ্য-উপাত্তে ওপরের লেভেলের যে হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি সেটির সবকটি দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব জায়গায় সংস্কার না হলে পুরোনোরাই আবারও প্রতিস্থাপিত হবে।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগে দুর্নীতির একটা বড় অংশ দেশেই বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ১০০ টাকা দুর্নীতি হলে ৬০ টাকায় দেশ থেকে পাচার হয়েছে। মেগা প্রকল্পে যে লুটপাট হয়েছে কয়েক প্রজন্ম ধরে তা শোধ করতে হবে। বৈদেশিক ঋণের সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড এগুলো নিয়ে বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। ঋণ পুনর্বিবেচনা কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী নেপাল ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাবে। এখানে আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। নেপালের মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের থেকে কম। এলডিসি সূচকে দুটি নেপাল পূরণ করেছে, বাংলাদেশ তিনটি। সে হিসাবে বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাওয়ার সব ধরনের সক্ষমতা আছে।

কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম তামিম বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন দুর্নীতির সব দ্বার খুলে দিয়েছিল। এই আইনকে অপব্যবহার করে দেশের জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ দুর্নীতি হয়েছে। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ব্যাপারে আমাদের বলা হয়েছে ইভিনিং পিক হবে ২৭ হাজার মেগাওয়াট। অথচ প্রাক্কলন ঠিক করা হলো ৪০ হাজার মেগাওয়াট। এই অদ্ভুত প্রাক্কলনের ফাঁদে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য এম আবু ইউসুফ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর‍) যে দাবি করে এক কোটির ওপর টিন নাম্বার আছে, এটি অ্যাক্টিভ টিন না। যে ৪৩ লাখ মানুষ কর রিটার্ন দেয়, তার সিংহভাগ সরকারি কর্মকর্তা। ১৫-১৬ লাখ সরকারি কর্মকর্তা কর রিটার্ন জমা দেয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে ১ কোটির ওপর ট্যাক্স পেয়ার আইডেন্টিফাই করতে পারলে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। রাজস্ব নিয়ে যে পূর্বাভাস দেয়া হয়, তার কোনো গঠনমূলক কাজ নেই। কোনো পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ না করে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। যে পরিমাণ ট্যাক্স হোল্ডিং নাম্বার আছে সেটি এনবিআরের সঙ্গে ইন্টারঅপারেবেলিটির ব্যবস্থা করা গেলে করের আওতা বাড়বে।

ঢাকা/এসএইচ