গ্রাহকদের অনাস্থা ও রেকর্ড খেলাপি ঋণ
তবুও বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা!

- আপডেট: ১২:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪
- / ১০৬০৯ বার দেখা হয়েছে
জুন ক্লোজিং শেষে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। প্রকৃত মুনাফা যেমনই হোক দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের বেড়েছে পরিচালন মুনাফা। তবে অনেক ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ হিসাব বা কর পরিশোধের আগে পরিচালন মুনাফা হিসাব করতে নারাজ। সোমবার (১ জুলাই) চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের লাভ-ক্ষতির হিসাব চূড়ান্ত করেছে অধিকাংশ ব্যাংক। এতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি বজায় রয়েছে। ডলার ও তারল্য সংকটসহ নানামুখী সংকটে দেশের ব্যাংক খাত। তবে সংকটের মধ্যেও ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, সরকারি বিভিন্ন বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করেই মূলত ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ২৬০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংটির মুনাফা ছিল এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৫৮০ কোটি টাকা।
অপরদিকে আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিলো ৩২০ কোটি। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে রূপালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৩০ কোটি টকা।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৭৯ কোটি। গত বছরের একই সময়ে ৪০৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। এক বছরে ব্যাংটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ১৭২ কোটি টাকা।
এসময়ে চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৮০ কোটি, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়ছে ৯৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংক ২৫০ কোটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২১১ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে।
তবে পরিচালন মুনাফাই একটি ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে পরিচালন মুনাফা। আর পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ, সঞ্চিতি, করপোরেট কর বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই হচ্ছে নিট মুনাফা। নিট মুনাফা থেকেই শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয় তালিকাভুক্ত ব্যাংক।
বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃতফসিল সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এসব ঋণের বিপরিতে প্রভিশন রেখে সরকারের কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে।পুনঃতফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আরও পড়ুন: টেকনো ড্রাগসের আইপিওতে ২৪ গুণের বেশি আবেদন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ঋণই ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। খেলাপির খাতায় ওঠা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো গ্রাহক উচ্চ আদালতে মামলা করছেন। এসব মামলায়ও বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকা পড়েছে।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা, যা কোনো ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। এ মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
বিপুল পরিমাণ ঋণ পুনঃ তফসিল সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এসব ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রেখে সরকারের কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব করা হবে।
পুনঃ তফসিলকৃত ঋণকে ‘স্ট্রেসড’ বা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হিসেবে দেখায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণের স্থিতি ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। আবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় অযোগ্য হওয়ায় ব্যাংকগুলো ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংক খাতের অন্তত এক-চতুর্থাংশ ঋণই ছিল দুর্দশাগ্রস্ত। খেলাপির খাতায় ওঠা ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো গ্রাহক উচ্চ আদালতে মামলা করছেন। এসব মামলায়ও বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকা পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, ঋণ পুনঃ তফসিলের নীতিমালা নিয়ে আগে অনেক কঠোর অবস্থানে ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সিদ্ধান্ত দেওয়া হতো কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে। ঋণ পুনঃ তফসিলে নির্দিষ্ট অঙ্কের ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু প্রভাবশালী গ্রাহকরা এখন তা করছেন কোনো ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ ছাড়াই। বাছবিচার না করে পুনঃ তফসিল করা এসব ঋণ আদায় হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অনাদায়ি সুদ আয়ের খাতে নিয়ে ব্যাংকগুলো যে মুনাফা দেখাচ্ছে, সেটি কাগুজে।
ঢাকা/এইচআর