বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ডিএসইর সিটিও জিয়াউলকে পুনর্বহালের উদ্যোগ

- আপডেট: ১১:১৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৬৪৮ বার দেখা হয়েছে
দুই বছর আগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমকে পুনরায় পদে বহাল করার উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
চাকরি ফিরে পেতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন জিয়াউল করিম। এতে তিনি দাবি করেন, ২০২২ সালে ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমে ‘কারিগরি সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে’ তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
তাঁর অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিএসইসিকে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপপরিচালক মুহাম্মাদ ওয়ারিসুল হাসান রিফাত ও সহকারী পরিচালক নাভিদ হাসান খান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) সচিব, একজন সিনিয়র সহকারী সচিব ও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছেও তদন্তের আদেশ পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন সভা করে ডিএসইর সিটিও মো. জিয়াউল করিমকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়।
কমিশন সভা শেষে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন সময়ে ডিএসইতে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয় এবং পূর্বেও বিভিন্ন কমিটি ডিএসইর আইটি কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: ১ মে থেকে নির্ধারিত সফটওয়্যার ছাড়া লেনদেন বন্ধ
এ ছাড়া কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এ তদন্ত-সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিও বাধ্যতামূলকভাবে ছুটিতে থাকবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করিনি। আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয়। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
জিয়াউল করিম আরও বলেন, ‘সার্ভিস রুল অনুযায়ী, ২০৩২ সাল পর্যন্ত আমার চাকরির মেয়াদ রয়েছে। এ জন্যই আমি ডিএসইর সিটিওর স্থায়ী পদে পুনর্বহালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবেদন করেছি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিএসইসিকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলছে। তদন্ত কর্মকর্তারা সঠিক তদন্ত করলে আমি চাকরি ফিরে পাব বলে বিশ্বাস করি।’
বিএসইসির আদেশে যা আছে
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মেজর (অব.) মো. জিয়াউল করিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। মো. জিয়াউল করিম, সিগন্যালস (অব.) গত ০৪-০১-২০১৬ ইং তারিখে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেজের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার নিয়মিত পদে যোগদান করেন এবং ডিএসই সার্ভিস রুল অনুযায়ী চাকুরীর মেয়াদ ২৯-১০-২০২৭ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ এবং যেহেতু ডিএসইর ট্রেডিং সিস্টেমে কারিগরি সমস্যা হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রচলিত আইন ভেঙে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে প্রেরণ করা হয়। জিয়াউল করিম, সিগন্যালস (অব.) ডিএসইর প্রধান কর্মকর্তার নিয়মিত (স্থায়ী) পদে পুনর্বহালের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বরাবর আবেদন করেছেন। এতদ্বিষয়ে তদন্তের নিমিত্তে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ২১-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। উক্ত তদন্ত কমিটি এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ দিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করত কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।’
নতুন সিটিও নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও), প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ডিএসই।
এরই ধারাবাহিকতায় ডিএসইর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ গত ৩ অক্টোবর তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে ৷ এর নেতৃত্বে আছেন চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ৷ দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দীর্ঘদিন শূন্য থাকা শীর্ষস্থানীয় তিনটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে ডিএসইর তিন পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রত্যেকটা পদের জন্য আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জিয়াউল করিমের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল কোরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ঢাকা/এসএইচ