পুঁজিবাজারে শর্ত-সাপেক্ষে কর্পোরেট কর

- আপডেট: ০৮:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ১০৪১১ বার দেখা হয়েছে
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার অপরিবর্তিত রেখে পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে শর্ত-সাপেক্ষে করের হারে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট প্রস্তাবে এ বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কর্পোরেট করের হারে কিছুটা পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেন উপদেষ্টা। অন্য কোম্পানিগুলোর করের হারের ক্ষেত্রে তিনি কিছু না বলায় মনে করা হচ্ছে, অন্যান্য কর্পোরেট করের হার আগের মতোই থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ দিতে এমন বিধান রাখা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামিদামি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করের হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কর হারের বিস্তারিত প্রস্তাবনা
প্রস্তাব অনুযায়ী, সকল প্রকার আয় এবং নির্দিষ্ট অঙ্কের ব্যয় ও বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করের হার চলতি অর্থবছরের মতোই আগামী অর্থবছরেও থাকছে। অর্থাৎ, চলতি অর্থবছরে যে আয় হয়েছে তার ওপর করের হার একই থাকবে। তবে, তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনে আড়াই শতাংশ ছাড়ের শর্ত তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অনেক কোম্পানি যে আড়াই শতাংশ ছাড় পেত, তারা এখন সেই সুবিধা পাবে না।
অপরদিকে, আসছে অর্থবছর থেকে যে আয় হবে তার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, শুধু সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারলে আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপর তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হার হবে ২০ শতাংশ। এই শর্ত পরিপালন করতে না পারলে কর দিতে হবে ২২.৫০ শতাংশ।
বর্তমানে সকল প্রকার আয় এবং নির্দিষ্ট অঙ্কের ব্যয় ও বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারলে এমন কোম্পানি ২০ শতাংশ কর্পোরেট কর দিতে পারে; অন্যথায় তাদের জন্য করের হার হয় ২২.৫০ শতাংশ। যদিও এই কঠিন শর্ত পরিপালন কোনো কোম্পানি করতে না পারায় বারবারই এটি সহজ করার প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলে নিয়েছে।
তবে, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত পালনের বিষয় নেই; তাদের জন্য করের হার সরাসরি ২৭.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ২৫ শতাংশ কর দেওয়ার সুযোগ ছিল। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রেও শর্ত একই ছিল। আয়কর আইন অনুযায়ী, সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে পাঁচ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পাদন করলে আড়াই শতাংশ করের হার ছাড় পেত তারা।
আরও পড়ুন: বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গ!
অন্যান্য খাতের কর্পোরেট করের হার
এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বাড়াতে উৎসাহিত করতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নিকট হতে উৎসে কর সংগ্রহের হার ০.০৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ০.০৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কর্পোরেট করের হারে বড় পরিবর্তন এসেছে পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করের হারে। বর্তমানে থাকা ৩৭.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি সকল ক্ষেত্রে বর্তমানের মতোই অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমানে ও প্রস্তাবিত করের হার (কোম্পানি করদাতার জন্য)—
পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানি:
বর্তমান: ২৭.৫০ শতাংশ (শর্ত পালন করলে ২৫ শতাংশ)
আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপর: ২৭.৫০ শতাংশ (কোনো শর্ত ছাড়াই)
তালিকাভুক্ত কোম্পানি (পরিষোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে):
বর্তমান: ২২.৫০ শতাংশ (শর্ত পালন করলে ২০ শতাংশ)
নতুন অর্থবছরে আয়ের ওপর: ২০ শতাংশ (শুধু সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারলে), অন্যথায় ২২.৫০ শতাংশ।
মার্চেন্ট ব্যাংক:
বর্তমান: ৩৭.৫০ শতাংশ
আসছে অর্থবছরে আয়ের ওপর: ২৭.৫০ শতাংশ
পাবলিক ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক ছাড়া):
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ৩৭.৫০ শতাংশ (অপরিবর্তিত)
পাবলিক ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান:
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ৪০ শতাংশ (অপরিবর্তিত)
সমবায় সমিতি:
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ২০ শতাংশ (অপরিবর্তিত)
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ:
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ১৫ শতাংশ (অপরিবর্তিত)
সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি:
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ৪৫ শতাংশ (এরসঙ্গে ২.৫০ শতাংশ সারচার্জ)
পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি:
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ৪৫ শতাংশ (অপরিবর্তিত)
পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি (পরিষোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিওতে থাকলে):
বর্তমান ও প্রস্তাবিত: ৪০ শতাংশ (শর্ত: আইপিও-পূর্ববর্তী প্লেসমেন্টের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না)
বাজেট আকার ও চূড়ান্তকরণ
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা এটি।
এবার সংসদ না থাকায় প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হয়নি। তবে, প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকা/এসএইচ