তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, বছরে ক্ষতি ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার: বিশ্বব্যাংক

- আপডেট: ০৪:২৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১০২১৭ বার দেখা হয়েছে
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের জন্য একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গরম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা কমিয়ে অর্থনীতিতেও ধাক্কা দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, শুধু ২০২৪ সালেই তাপজনিত শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে, যার আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার—মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার প্রবণতা এবং ২০২৪ সালে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর করা জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তবে “অনুভূত তাপমাত্রা” বা হিট ইনডেক্স ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, কাশি, অবসাদসহ নানা শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ছে—বাড়ছে হতাশা ও উদ্বেগ।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে বলেন, “চরম গরম কেবল ঋতুভিত্তিক অসুবিধা নয়। এটি স্বাস্থ্যের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য বড় হুমকি। তবে সিঙ্গাপুরসহ কিছু দেশের অভিজ্ঞতা দেখায়, সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে এ সংকট মোকাবিলা সম্ভব।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, উষ্ণ আবহাওয়ার ঝুঁকির দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রভাব আরও স্পষ্ট। গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও কাশির হার দ্বিগুণ হয়। বিশেষত নারীরা তাপঘটিত অসুস্থতা যেমন অবসাদ ও হিটস্ট্রোকে বেশি ভোগেন। গরমে হতাশা ও উদ্বেগও বাড়ে। হতাশার ঝুঁকি বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকে, আর উদ্বেগ ৫০–৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনের সহলেখক ও বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ বলেন, “আমাদের বিশ্লেষণ দেখায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রমাণভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব।”
বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন মানুষ, জীবিকা ও অর্থনীতিকে ক্রমবর্ধমান তাপঝুঁকি থেকে রক্ষায় জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—জাতীয় প্রস্তুতি জোরদার, স্বাস্থ্যসেবায় তাপজনিত রোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি, নগরে সবুজায়ন, এবং আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নও জরুরি বলে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঢাকা/এসএইচ