বাজেটে উপেক্ষিত বিনিয়োগকারীদের দ্বৈতকর প্রত্যাহারের দাবি
- আপডেট: ০১:০৭:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুন ২০২১
- / ১০৪৮৫ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পুজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন প্রণোদনা রাখা হয় নি। এমনকি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি দ্বৈতকর প্রত্যাহার এবং ডিভিডেন্ড আয়ের করসীমা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়েও কোন সাড়া মেলেনি।
এছাড়া কালো টাকা বিনিয়োগের বিষয়েও প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কিছু বলা হয়নি। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে না। কাজেই এটা ধরেই নেয়া যায়, তারল্য সঙ্কট দূরীকরণের লক্ষ্যে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিনিয়োগকারীদের দাবিটিও বৃথা।
তবে পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আপাতত এতটুকুতেই খুশি থাকতে হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার পুঁজিবাজারকে গতিশীল ও উজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্দেশ্যে এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা, আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট যথা: সুকুক, ডেরিভ্যাটিবস অপশনের লেনদেন চালু করা, ওটিসি বুলেটিন র্বোড চালু করা, ইটিএফ চালু করা, মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড (ওপেন এইন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড) তালিকাভুক্ত করা ইত্যাদি। এছাড়াও করপোরেট কর হার কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে অধিক সংখ্যক ভালো শেয়ার পুঁজিবাজারে আসবে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করহার পুনঃনির্ধারণ করা সময়ের দাবি। বর্তমানে বিরাজমান ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতামূলক করহার দেশের বাণিজ্যের প্রসারে ও শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ও ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা পূরণকল্পে ও ব্যবসা বাণিজ্যের দ্রুত প্রসারের লক্ষ্যে লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানির করপোরেট কর ৪০ শতাংশ, নন লিস্টেড মোবাইল অপারেটর কোম্পানির করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।
এবারের বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগ নিয়ে সুস্পষ্ট কোন দিক-নির্দেশনা নেই। তবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে সরকার। ফলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৯ হাজার ৬২৩ জন করদাতা কালো টাকা সাদা করেছেন। এই সময়ে তারা ১ হাজার ৩৮৬ কোটির বেশি কালো টাকা সাদা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত আয় রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগের আওতায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯ হাজার ৬২৩ জন করদাতা অপ্রদর্শিত সম্পদ রিটার্নি প্রদর্শনপূর্বক ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ১০ লাখ ২ হাজার ৭৯৫ টাকা আয়কর প্রদান করেছেন। যার ফলে করোনাকালীন সময়ে দেশের অর্থনীতিতে পুঁজি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এক বছর লক-ইনসহ কতিপয় শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের আওতায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩১১ জন করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে ৪৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করেছেন। যার ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়েছে।’
বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বক্তৃতার মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার এটি তৃতীয় বাজেট। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
বিজনেসজার্নাল/ঢাকা



































