প্রাক বাজেট আলোচনায় ইআরএফের ১৪ প্রস্তাব

- আপডেট: ০৬:৩৫:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ১০২৯৩ বার দেখা হয়েছে
বিজনেস জার্নাল প্রতিবেদক: অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে এবং করের আওতা বাড়ানোসহ একগুচ্ছ প্রস্তাবনা দিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারের গুরুত্বপূর্ন সংবাদ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন: ফেসবুক–টুইটার–লিংকডইন–ইন্সটাগ্রাম–ইউটিউব
ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, দেশের অর্থনীতির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দশ বছরে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর প্রদানে সামর্থ্যবান হয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশে করযোগ্য মানুষ অন্তত ২ কোটি। আবার কেউ বলছেন এই সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। করযোগ্য নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে এই বিভ্রান্তি দূর করতে কিংবা দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরূপণে এনবিআরের একটি ব্যাপকভিত্তিক জরিপ ও গবেষণা জরুরি।
তিনি বলেন, এনবিআরের তথ্যানুযায়ী দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখের মতো। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২৪ থেকে ২৫ লাখ। অথচ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করা এ বিপুল পরিমাণ টিআইএনধারীকে কর নেটের আওতায় আনতে আইনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা দরকার। একই সঙ্গে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো দরকার।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। কিন্তু এনবিআরে আয়কর জমা দেন মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিক। দেশে কর্মরত বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে টিআইবি। বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআরের উদ্যোগ আরও জোরালো করার প্রয়োজন।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এনবিআর আইনি কাঠামোয় পরিবর্তনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এ খাতে অনিয়ম রোধে এবং রপ্তানিবান্ধব বন্ড ব্যবস্থাপনা তৈরির জন্য এনবিআরের নেওয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা দরকার। কোনো ব্যবসায়ী যেন কর ফাঁকি দিতে না পারেন সেজন্য এনবিআরের অটোমেশন ও কঠোর মনিটরিংয়ের সুপারিশ করছি।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটটি আপগ্রেড করার প্রস্তাব করছি। এই সাইটে অনেক হালনাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। একইসাথে রাজস্ব বোর্ডের গবেষণা সেলটি আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রস্তাব হলো একজন সদস্যের নেতৃত্বে গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
প্রাক বাজেট আলোচনায় ইআরএফের প্রস্তাবনা:
• কোনো ব্যবসায়ী যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য এনবিআরের অটোমেশন ও কঠোর মনিটরিংয়ের সুপারিশ।
• প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা আমরা জানি না। মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।
• বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো প্রণয়ন করা। এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ক অনেক সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী, ভোক্তা, করদাতা কিংবা রাজস্বের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে সংশোধনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি।
• টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করা এ বিপুল পরিমাণ টিআইএনধারীকে কর নেটের আওতায় আনতে আইনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতা করা।
• সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকদের সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা। করের এ পরিমাণটি কমিয়ে সব টিআইএনধারীকে কর প্রদানে উৎসাহী করা।
• বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআরের উদ্যোগ আরও জোরালো করা।
• বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে। এটি হলে উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
• আমরা মনে করি, কাঠামোগত সমস্যা বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটিয়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পুনর্গঠন জরুরি। এক্ষেত্রে দু’টি প্রস্তাব বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
প্রথমত, ভারতের মত ডাইরেক্ট ট্যাক্স এবং ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স নামে দু’টি বিভাগ গঠন করা যেতে পারে। দুই বিভাগে দুইজন সচিব নিয়োগ করা হবে। অথবা একটি রেভিনিউ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এর একজন প্রধান কমিশনার থাকবেন, যার অধীনে অন্য কমিশনাররা থাকবেন। সরকার তাদের নিয়োগ দেবে।
• স্থানীয় শিল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী কী সুবিধা দেয়া উচিত তা নির্ধারণ করে ট্যারিফ পলিসি দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করছি।
• রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাত যেনো তৈরি পোশাক শিল্পের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা পায় আমরা সে সুপারিশ করছি।
• প্রতিটি পণ্যের জন্যই আলাদা এইচ এইচ কোড নির্ধারণ করা। ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ইএফডির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উপর গুরুত্ব দেয়া।
• পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে কর্পোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখা যেতে পারে।
• ডিজিটাল অর্থনীতির যেহেতু দ্রুত বিকাশ ঘটছে, তাই এই খাতকে করের আওতায় আনার সুপারিশ করছি।
• বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে বোতলজাত পানির উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক শিথিল করা যায় কি-না সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে।
ঢাকা/এসআর